চিকিৎসা সম্পর্কে কিছু ধরনা :: ভারত ভেলোর CMC তে পর্ব-২
আমাদের দেশের বিশাল একটা অংশ সু–চিকিৎসার আশায় প্রতিবেশি দেশ ভারতের ওপর নির্ভর করে আছি। আমার ধারনা মতে ভারতের সবথেকে উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেলোরে। এ ভেলোর ভারতের তামিল নাড়ু প্রদেশের একটি জেলা শহর।
এ পর্বে ভ্রমনের জন্য যা প্রয়োজন:
বাংলাদেশ ভারতে যেতে হলে আগে আপনার প্রয়োজন পাসপোর্ট। পাসপোর্টের জন্য আনুমানিক খরচ ৫০০০/- টাকা ধরে রাখতে হবে। তবে প্রশাসনিক কোন লোকের সাথে ভালো যোগাযোগ থাকলে ৪০০০/- এর ভিতর হয়ে যাবে। পাসপোর্ট হয়ে গেলে লাগবে আপনার ভারতের ভিসা যা আপনারা ইন্ডিয়ান হাইকমিশন থেকে পাবেন। ভিসার জন্য আনুমানিক ধরে রাখতে হবে ৪০০০/- টাকা। কারন ভিসা ফি ৬০০/৭০০ টাকা। আর আপনাকে ভিসা করা আগে ই টোকেন করতে হবে এটার জন্য বাদ বাকি ধরে রাখতে হবে। আর আগে থেকে ডিসাইড করে রাখবেন কোন পথে ভারতে যাবেন। যাদের কাছ থেকে ই-টোকেন করবেন তাদের বলে দিলে হবে যে কোন পথে যাবেন।
ভিসা বের হয়ে গেলো এবার যাবার জন্য প্রস্তুতি:
কোন পথে যাবেন: ভারতে আকাশ পথ কিংবা স্থল পথে যাওয়া যায়। আকাশ পথে যেতে চাইলে আগে থেকেই ভিসায় উল্লেখ থাকতে হবে। প্লেনে সরাসরি ভেলোর যাওয়া যায় না। আপনি ঢাকা থেকে চেন্নাই যেতে পারবেন। তারপর বাস কিংবা ট্রেনে ভেলোর। ট্রেন/প্লেনের টিকেট আগে থেকে কেটে রাখলে খরচ কিছুটা কম পড়ে।
স্থল পথে যেতে চাইলে আপনি আপনার ভিসায় ভারতে ঢোকার জন্য কোন বর্ডারের উল্লেখ আছে। যদি আপনি হিলি বর্ডার দিয়ে ইন্ডিয়া প্রবেশ করেন তবে আপনি মালদা কিংবা কলকাতা থেকে ট্রেন ধরতে পারেন। আবার হাওরা বা শিয়ালদহ থেকে যেতে পারেন। হাওড়া থেকে ভেলরের দুরত্ব প্রায় ১৭২২ কিলোমিটার। সময় লাগে ২৮–২৯ ঘন্টা।
টাকা / ডলার কোথায় ভাঙ্গাবেন: টাকা বা ডলার আপনি অনেক জায়গাতেই চেঞ্জ করতে পারেন। তবে বর্ডারে টাকা বা ডলার চেঞ্জ রেট কম। তবে বেনাপোল বর্ডারে চেঞ্জ করলে আপনি কম পাবেন না আমি আশা করি। বর্ডারে চেঞ্জ করলে আপনি পরিমাণে কম পেতে পারেন। প্রয়োজনে কিছু চেঞ্জ করে নিতে পারেন। সবচেয়ে ভালো হয় কলকাতায় চেঞ্জ করে নিলে।
ট্রেনের টিকেট: ভারতে ট্রেনের টিকেট আগে থেকে অনলাইনে কাটা যায়। ইন্ডিয়ান রেইলওয়ের ওয়েবসাইট থেকে আপনি ট্রেন টিকিট কাটতে পারেন।তবে অনেকের ক্ষেত্রেই হয়তো সেটা কঠিন হবে। এজেন্টের মাধ্যমে কিংবা আপনি নিজে স্টেশনে গিয়ে টিকেট কাটতে পারেন। সে দেশে বিদেশীদের জন্য আলাদা একটি সুবিধাও দিয়ে থাকে ইন্ডিয়ান রেইলওয়ে। আলাদা কিছু সিট রাখা হয় বিদেশীদের জন্য। এছাড়া এজেন্টের মাধ্যমেও আপনি টিকেট কাটতে পারবেন। এরা টিকেট প্রতি ৩০০ থেকে ৭০০ রুপি পর্যন্ত সার্ভিচ চার্জ নেবে।
ট্রেনের প্রস্তুতি: ট্রেনের যাত্রাটা বেশ বড়ই। আপনি চাইলে আগে থেকেই খাবার নিয়ে ট্রেনে উঠতে পারেন, কিংবা ট্রেনের ভেতরেও খাবার কিনতে পারেন। তবে শুকনো খাবার সাথে রাখুন। ট্রেনের ভিতরের খাবার হয় ভেজ কারি রাইস, ভেজ বিরিয়ানি, আর নন ভেজ হয় এগ/আন্ডা বিরিয়ানি, কারি রাইস। দাম ৫০ রুপি থেকে ১২০ রুপির মধ্যে। এছাড়া আপনার বড় যাত্রায় ট্রেনে মগ, পানি টিস্যুর মত জরুরী জিনিস সঙ্গে রাখুন। মনে রাখবেন ভেলোরের স্টেশনের নাম কাটপাটি স্টেশন। আপনার টিকেট যদি ভেলোর পর্যন্ত হয় তা হলে আপনাকে নামতে হবে কাটপাটি স্টেসন। আর অপনার টিকিট চেন্নাই পর্যন্ত হলে আপনাকে চেন্নাই সেন্ট্রাল স্টেশনে নামতে হবে। আবার কোন কোন ট্রেন চেন্নাই এগমোর স্টেশন পর্যন্তও যায়। যদি চেন্নাই এগমোর স্টেশনে নামতে হয় তো সেখান থেকে আপনি আবার চেন্নাই সেন্ট্রাল স্টেশনে আসুন। এবার সেখান থেকে বাসে কিংবা ট্রেনেও আপনি ভেলোর আসতে পারেন। ট্রেনে এলে খরচটা কম পড়ে।
ভেলোরে অবস্থান: স্টেশনে নামার পর বাসে কিংবা অটোতে আপনি সিএমসি বা সাইদাপেট যাবেন। এসব এলাকাতে হোটেল বা লজ পাওয়া যায়। সিএমসির পাশের লজ গুলোর ভাড়া একটু বেশি, সাইদাপেট–এ একটু কম। এ সকল এলাকাতে ১৫০ রুপি থেকে ৬০০ রুপির মধ্যে থাকা যায়। এ সবে আপনি নিজে রান্না করে খেতে পারেন। এছাড়া বাঙালী খাবার হোটেলও আছে। স্থানীয় খাবার অনেকের পক্ষেই খাওয়া সম্ভব না। এদের বেশিরভাগ খাবারই সাধে অনেক টক। এছাড়া এরা খাবারে প্রচুর কারি পাতা ব্যবহার করে যা কিছুটা ধনে পাতার মতো।
ভাষা: ভারতে স্থান ভেদে ভাষার পরিবর্তন হয়। কলকাতাতে আপনি অনায়াসে বাংলা বা হিন্দি চালাতে পারেন। তবে তামিলরা হিন্দিতে কথা বলতে অভ্যাস্ত নয়, বলতে বা শুনতে আগ্রহীও নয়। তবে ইদানিং হিন্দি চলছে। তবে আশার কথা হল ভেলোরের অনেকেই এখন বাংলা বোঝে, কথাও বলে। ডাক্তারও কিছু কিছু বাংলা বোঝেন এবং বলেন। তবে ইংলিশ ব্যবহার করতে পারেন অনায়াসে।
যাই হোক আজ এ পর্যন্ত। পরের পর্বে আরো বিস্তারিত আলোচনা করবো।
তবে দোয়া করি কারো যেনো চিকিৎসার জন্য ভেলোর যাওয়া না লাগে। আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে সুস্থ রাখে।