আসুন, সন্তানের বিষয়ে সিরিয়াস হই
আসুন, সন্তানের বিষয়ে সিরিয়াস হই
►মানুষ মানুষকে ভালবাসে, মানুষের জন্য মানুষ সর্বোচ্চ ত্যাগ করে, ভালবাসার নিদর্শন স্বরুপ মানুষ মানুষের জন্য প্রাণের মায়া ত্যাগ করার নজির মানব সমাজে কম নয়। এটি শুধুমাত্র ভালবাসার দাবী থেকে, মানবিকতার দাবী থেকেই করা সম্ভব অন্য কিছুতে নয়।
► মানুষ তার ক্ষুদ্র স্বার্থ আদায়ের জন্য হত্যার মতো জঘন্য অপরাধ করতেও দ্বিধা করেনা। প্রতিদন্দ্বিকে কুপোকাত করতে মানুষ হ্ত্যার মতো জঘন্য অপরাধ ও তার ধরন যুগে যুগে বিচিত্রভাবে প্রকাশ পেয়েছে। প্রেম-ভালবাসা, অর্থ, জমিজমা, লোভ-লালসা, সুনাম বিভিন্ন কারণে মানুষ মানুষের সাথে শত্রুতা পোষণ করে এবং কখনো কখনো তা হত্যাকান্ডেও রূপ নেয়।
► সৃষ্টির আদি হতে অদ্যাবদি সকল আবিষ্কারে মানুষের অবদান অস্বীকার করার নয়। মানুষ যখন প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়েছে, হিংস্র জীব জন্তুর আক্রমণের শিকার হয়েছে তখন মানুষ মানুষকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে বিপদ হতে উদ্ধার করেছে। বেঁচে থাকার আর্তনাদ যখন প্রতিধ্বনি হয়ে সাত আসমান হতে ফিরে এসেছে তখন মানুষেই মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। শ্রম দিয়ে, ভালবাসা দিয়ে তৈরী করেছে আজকের রর্তমান সুন্দর বাসযোগ্য পৃথিবী।
► পাশাপাশি আধিপত্য ও লোভের বশবর্তী হয়ে মানুষ কখনো কখনো তার পশু প্রবৃতিকে জাগ্রত করেছে । সমাজে দেখা দিয়েছে ক্রোধ, হিংসা। ফলাফল মানুষই ভোগ করেছে।
► সমাজ সব সময় দুই শ্রেণীর মানুষের অংশগ্রহণে চালিত হয়ে এসেছে। শোষিত ও শাষিত, অত্যাচারী ও অত্যাচারীত। অত্যাচারীত মানুষ স্বার্থের দন্দ্বে কখনো কখনো জীবনের সেরা বস্তুটিও হারিয়েছে। দেশ ও সমাজ হারিয়েছে জাতির ভবিষ্যত। স্বজন হারিয়ে জীবন নামের ডিঙ্গি খানিরে ভিড়িয়ে রাখেনি কেউ। দুখের সাগরে ভাসতে ভাসতে একসময় ঠিকই তার গন্তব্য খুজে নিয়েছে। প্রিয় জনকে ভুলে গেছে, মেনে নিয়েছে কঠিন বাস্তবতা।
► যে ব্যক্তি হত্যাকান্ডের সিকার হয় সে যেমন কোন মায়ের সন্তান তেমনি যার দ্বারা হ্ত্যাকান্ড সংগঠিত হয় সেও কোন মায়ের সন্তান। কোন সন্তানই হত্যাকারী, মাদকাসক্ত, অপরাধী হয়ে ভূমিষ্ঠ হয়নি, হয়না। পরিবেশ পরিস্থিতি তাকে অপরাধ প্রবণ হতে সাহায্য করে। অপরাধ যখন কারো পেশায় পরিণত হয়, অপরাধ যখন রুটি-রুজির ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায় তখন তার কাছ থেকে জাতি কাঙ্খিত উন্নয়ন পায়না। ধীরে ধীরে সমাজ ও দেশ ধ্বংস হয়ে পড়ে। মানুষ অপরাধীর অমঙ্গল কামনা করে, মৃত্যুতে মিষ্টি বিতরণ করে, হাফ ছেড়ে বাঁচে। কিন্ত আমরা কখনো ভাবিনা, আজ যে অপরাধী, হত্যাকারী সে তো অপরাধী হয়ে, হত্যাকারী হয়ে জন্মায়নি। আমরা কি ভেবেছি অপরাধীর পিছনেও অপরাধী থাকে, হত্যাকারীর পিছনেও হত্যাকারী থাকে। ছোট অপরাধী, বড় অপরাধী, মেঝ অপরাধী, সেজ অপরাধী, ছিচকে অপরাধী, অদৃশ্য অপরাধী, দৃশ্যমান অপরাধীর সমন্বয়েই সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়, নৈতিকতার অবক্ষয় ঘটে।
► হত্যা খুন ধর্ষন দেখতে দেখতে অভ্যস্ত আমাদের মন আজ পাথর হয়ে গেছে। আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস হারিয়ে ফেলেছি, রুখে দাঁড়ানোতেও আমরা আজ অন্যায় খুঁজে পাই। ঝড়, জলোচ্ছাস, ভূমিকম্প, ভূমিধ্বস মহামারিগুলোতো হবেই। এগুলোইতো আমাদের প্রাপ্য।
► আমি আমার সন্তানকে ভালবাসি, আপনি আপনার সন্তানকে। আমি যেমন আশা করি আমার সন্তান বড় হয়ে মানুষের মতো মানুষ হবে, দেশ ও জাতির সেবা করবে তেমনি আপনি করেন। সন্তানদের ভাল চাইতে সব অভিভাবকরাই সমান। কিন্তু সন্তান মানুষের মতো মানুষ হওয়ার পিছনে আমার কতটুকু চেষ্টা করি। আজ সমাজে যে হত্যাকারী, যে ধর্ষক, যে ডাকাত, যে চোর, যে অপহরকারী, যে ছিনতাইকারী সে কি আমার সন্তান নয়, সে কি আপনার সন্তান নয়, সে কি এদেশের সন্তান নয়? আমি আদমের বংশধর আর আপনি কি নরাধম ? তাহলে চোখ বুঝে থাকা কেন?
► সন্তানের যখন জীবন সাজানোর সময়, গড়ার সময়, পাঠশালায় গিয়ে নীতি নৈতিকতা শেখার সময় ঠিক সেই সময় আমরা নিজেদের ক্যারিয়ার গঠনের পিছনে দৌড়াতে থাকি, অর্থ বিত্ত সংগ্রহে দৌড়াতে থাকি। সেই সুযোগে আমার আপনার সন্তান পার্কে, রেস্তোরায়, নিষিদ্ধ পল্লিতে, সিডির দোকানে ভোগ বিলাস লিপ্ত থাকে। একদিন দুদিন করে নেশায় পরিণত হয় তাদের আগ্রহগুলো। নেশা, ব্যাভিচার হয়ে পড়ে তাদের নিত্যদিনের সঙ্গি। যখন ধরা পড়ে তখন আর কিছু করার থাকে না। সংসার ও সমাজে ঝড় নেমে আসে। না হয় নিজের ক্যরিয়ার গড়া না হয় সন্তানের। স্পষ্টভাবে প্রত্যেকের মনে রাখা উচিত ক্যারিয়ার গঠনের সময় বিবাহের পূর্বে, বিবাহের পরে নয়। বিশেষত সন্তান জন্মাবার পরেতো নয়ই। এই সময় শুধু সন্তানের ভবিষ্যত আর ক্যারিয়ারই একমাত্র চাওয়া হওয়া উচিত।
► সন্তান মানুষ হলেই পিতার সুনাম, দেশ ও জাতির সুনা্ম। তাই সন্তানদের প্রতি আরো সিরিয়াস হওয়া দরকার, আরো মনোযোগী হওয়া দরকার। আমার সন্তান মানুষের মতো মানুষ হোক, আপনারটাও । আমার সন্তান যেমন আমার তেমনি, আমার সন্তান আপনারও । আপনার সন্তান যেমন আমার ঠিক তেমনি আপনার সন্তান আমারও । সেই বোধ টুকু জাগ্রত হোক সকলের হৃদয়ে। তাই আসুন সন্তানের বিষয়ে আমরা আরো সচেতন হই। ধন্যবাদ ।