Main Menu

ইসরাইলী পণ্য বর্জন ‘আমার’ দায়িত্ব; ‘আমাদের’ নয়!

+100%-

‘আমাদের দায়িত্ব’ কথাটির মধ্যে নিজ দায়ভার এড়িয়ে যাওয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে, যা নেই- যদি বিষয়টিকে ‘আমার দায়িত্ব’ হিসেবে আমি বিশ্বাস করতে পারি। আর সম্প্রতি ইহুদীদের দ্বারা প্যালেস্টাইনে মুসলিম গণহত্যার নৃশংসতা বিশ্ববাসীর নিকট এভাবে প্রকাশিত হওয়ার পর, ইসরাইলী পণ্য পরিহার বা পরিত্যাগের প্রতিজ্ঞাটা ‘আমার দায়িত্ব’ হিসেবে বিবেচনা না করার বিকল্প কি আর কিছু হতে পারে?

আজ সারা বিশ্বের মুসলমানরা নিজের অজান্তেই আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ব্যবহার্য দ্রব্যাদির দ্বারা কিভাবে ইসরাইলী অর্থনীতি, তথা প্রকারান্তে ইহুদীদের মাথাপিছু আয়ের উত্তরোত্তর বৃদ্ধিতে সহায়তা করছি, আমরা তা নিজেরাই অনুধাবন করতে পারছি না। টুথপেস্ট–ব্রাশ থেকে শুরু করে সাবান, ডিটারজেন্ট, শ্যাম্পু, সফট ড্রিংক্স, ফাস্টফুড আউটলেট – প্রতিটি ক্ষেত্রেই নামকরা প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডগুলো কোন না কোনভাবে জড়িয়ে আছে ইসরাইলী মালিকানার সাথে; আমাদের অনেকেরই ধারণার অন্তরালে। প্রতিনিয়ত এসব পণ্যের ব্যবহার পরোক্ষভাবে ধনাত্মক প্রভাব ফেলছে ইহুদীদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাতে। আর এসব নিয়ে ভাববার এখনই যথার্থ সময়, ‘আমার বর্তমান দায়িত্ব’।

অস্ট্রেলিয়ার মত উন্নত বিশ্বে বসে বর্বর ইহুদীদের আচরণের প্রতি প্রতিবাদের এক ভাষা হতে পারে ‘আমার এই দায়িত্ব’। আমি, তুমি এবং এভাবে আমরা যদি একসাথে পুরো বিশ্বে এসব ইসরাইলী পণ্য না ব্যবহারের প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে পারি, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এই প্রয়াস ইসরাইলীদের বর্বরতার প্রতিবাদের বেশ জোড়াল এক আঘাত হিসেবে তা অচিরেই আত্মপ্রকাশ করতে পারে। আর যদি তা নাও হয়, অন্তত আমার নিজের দায়িত্বটুকুকে আন্তরিকতার সাথে পালনে সচেষ্ট হওয়া উচিত প্রত্যেক সচেতন, নৃশংস গণহত্যাবিরোধী, বিবেকবান মানুষের।

এবার কিছুটা পণ্য নিরীক্ষণ বিষয়ক পরামর্শ, যা আপনাকে সাহায্য করতে পারে ইসরাইলী পণ্য অথবা ইসরাইলকে সহায়তা প্রদানকারী মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোকে সনাক্ত করতে। ইন্টারনেটে এ সংক্রান্ত পরামর্শের পর্যাপ্ত তথ্য রয়েছে। যেমন, উল্লেখ করা যেতে পারে ‘বারকোড’ দেখে ইসরাইলী পণ্য সনাক্তকরণের পন্থাটি। ইসরাইলী পণ্যের বারকোড এর প্রথম তিন ডিজিট থাকে ‘৭২৯’। উদাহরণস্বরূপ নুডুলসের কথা বলা যেতে পারে। যদি নুডুলসটির পিছনের বারকোডে ‘৭২৯৩৪৫৩৪৫৯০৭০’ লেখা থাকে, তবে এর প্রথম তিন ডিজিট নির্দেশ করবে যে, পণ্যটি ইসরাইলের।

সনাক্তকরণের এই পদ্ধতি ছাড়াও আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বহু নামকরা পণ্য ব্যবহার করে থাকে যেগুলো ইসরাইলী অথবা ইসরাইলকে সরাসরি সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান। যেমনঃ টুথপেস্ট ও ব্রাশ এর মধ্যে রয়েছে পেপ্সডেন্ট, ক্লোজআপ, কোলগেট; সাবান ও ডিটারজেন্ট এর মধ্যে রয়েছে লাইফবয়, লাইফবয় গোল্ড,লাইফবয় প্লাস, লাক্স, ডেটল, ডোভ, স্যাভলন, জনসন বেবী সোপ, সার্ফ এক্সেল, হুইল, রেক্সোনা, রবিন ব্লু,রিন; শ্যাম্পুর মধ্যে রয়েছে সানসিল্ক, হেডজ এন্ড সোলডার, লাক্স, ক্লিয়ার, ওয়াল ক্লিয়ার, ডোভ; কফি ও চকলেটের মধ্যে রয়েছে ডেইরি মিল্ক, ক্যাডবেরিস, নেসলে, হরলিক্স; কোল্ড ড্রিংক্স ও অন্যান্য পানীয়ের মধ্যে রয়েছে কোকাকোলা, স্প্রাইট, ফান্টা; ইলেক্ট্রনিক্স এর মধ্যে রয়েছে নকিয়া, ইন্টেল, ডেল, এইচপি, এলজি; ক্রীম ও অন্যান্য কসমেটিক্স এর মধ্যে রয়েছে ফেয়ার এন্ড লাভলী, পনডস, জন্সন, সিন্ডেরেলা; মশক নিধন অ্যারোসল এর মধ্যে মরটিন, এডমাস; কলম ও কালির মধ্যে রয়েছে মনটেক্স, লাক্সার, পার্কার এবং জুতা ও পাদুকার মধ্যে রয়েছে বাটা, এডিডাস, অ্যাকশন, নাইকি।

কাজেই, ‘আমার দায়িত্ব’ হিসেবে ইসরাইলী পণ্য বর্জনের প্রতিজ্ঞা করলে নিজ জীবনযাত্রার ব্যবস্থাকেও ঢেলে সাজাতে হবে নিঃসন্দেহে। আপাত দৃষ্টিতে কষ্টসাধ্য মনে হলেও এটা সহজ হতে পারে যদি এটা আপনার কল্পনায় আনতে পারেন যে, কোকাকোলায় একটি চুমুক দিলেন, অর্থাৎ আপনি একটি ফিলিস্তিনি শিশুর রক্ত দিয়ে তৃষ্ণা মেটালেন! একটি ইসরাইলী পণ্য খেলেন তো একজন ফিলিস্তিনি মুসলিম শিশুকে আপনি গুলি করে হত্যা করলেন! এবার পুরোটাই বিবেকবান মানুষ হিসেবে আপনার বিবেচ্য, – ইসরাইলী পণ্য বর্জন ‘আমার দায়িত্ব’, না কি ‘আমাদের দায়িত্ব’?