Main Menu

হায় ২২টি বছর…!

+100%-

LonelyOne-1454177081-5b18699_xlarge২২ বছর…!

কল্পনা করুন, আপনাকে ২২ বছরের জন্য আপনার পরিবার থেকে, আপনার চিরচেনা পৃথিবী থেকে কেড়ে নিয়ে হঠাৎ কোন জেলখানায় বন্দী করে রাখা হলো। আপনি জানেনই না কি আপনার অপরাধ। বিনা বিচারে আপনি হাজতবাস করলেন ২২ বছর। কেমন লাগবে আপনার? … কেমন লেগেছিল ফজলু মিয়ার?

গল্পটা বড় নির্মম!..

১৯৯৩ সালের ১১ জুলাই সিলেট মহানগরীর কোর্ট পয়েন্ট থেকে ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ অবস্থায় ফজলু মিয়াকে আটক করে পুলিশ।সন্দেহভাজন হিসেবে ৫৪ ধারায় আটক করা হয়েছিলো তাকে। পরে ‘মানসিক স্বাস্থ্য আইনের ১৩ ধারায়’ তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

এরপর তাকে একাধিকবার জামিন দেয় আদালত। কিন্তু তার কোনো নিকটাত্মীয়ের খোঁজ না পাওয়ায় তিনি মুক্ত হতে পারেননি। গত ২২ বছরে ফজলুকে ১৯৮ বার আদালতে হাজিরা দিতে হয়েছে।

২০১৫ সালের ১৪ই অক্টোবর ফজলু মিয়ার এক সহপাঠী দক্ষিণ সুরমার তেতলি ইউনিয়নের সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য কামাল উদ্দিন রাসেল বিষয়টি জানতে পেরে তাকে মুক্ত করার উদ্যোগ নেন। বিনাবিচারে ২২ বছর কারাবাসের পর মুক্তি পেয়েছেন সিলেটের দক্ষিণ সুরমার ফজলু মিয়া।

ফজলুর আইনজীবী জ্যোৎস্না ইসলাম ছাড়াও ফজলু মিয়ার জামিনের বিষয়ে সহযোগিতা করে বেসরকারি সংস্থা ব্লাস্ট।

ফজলুর সহপাঠী কামাল উদ্দিন রাসেল বলেন, “ফজলু মিয়া আমার সহপাঠী ছিলেন। তাকে অনেক বছর খুঁজেছি, কিন্তু পাইনি। তিন বছর আগে জানতে পারি তিনি মারা গেছেন। এরপর খোঁজাখুঁজি বন্ধ করে দেই। কিন্তু কয়েকদিন আগে জানতে পারি, তিনি কারাবন্দি রয়েছেন। এরপর খোঁজখবর নিয়ে তার জামিনের ব্যবস্থা করি।” দক্ষিণ সুরমার ধরাধরপুর সৈয়দ বাড়ির নিঃসন্তান দম্পতি গোলাম মাওলা ও নয়ন মণি ফজলুকে লালন-পালন করেছেন বলে জানা যায়।

এখানেই শেষ নয়! গত ১৫ই অক্টোবর থেকে ২৮শে জানুয়ারি পর্যন্ত ফজলু মিয়াকে একটি রেস্ট হাউজে রাখা হয়েছে। এর মাঝে চলেছে তার সঠিক আত্মীয়ের সন্ধান। অতঃপর তার পরিবারের তিনজন সদস্যের ডিএনএ টেস্টের ফলাফলের ভিত্তিতে আদালত তাকে ২৯শে জানুয়ারি সম্পূর্ণভাবে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়।

অবশেষে জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে নিজের পরিবার ফিরে পেলেন ফজলু মিয়া !

কিন্তু সেই আট হাজার ত্রিশটি দিন কি ফিরে পাবেন তিনি? যে দিনগুলো কারাগারের চার দেয়ালের অন্ধকারে বিনা বিচারে কাটিয়েছেন এই বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী মানুষটি?

হায় বিচার…! হায় জীবন…! হায় ২২টি বছর…!






Shares