হাসিনা উৎখাতের ষড়যন্ত্রীকে ফেরত চাইল ঢাকা



দেবাঞ্জন দাস, কলকাতা: বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করার অন্যতম ষড়যন্ত্রী নুরুল হক মণ্ডল ওরফে নায়িমকে ঢাকায় ফেরত পাঠানোর জন্য দিল্লিকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানালেন সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে এক বৈঠকে এই অনুরোধ জানান হাসিনার এই সহকর্মী। খাগড়াগড় বিস্ফোরণকাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত নায়িম বর্তমানে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির (এনআইএ) মামলায় জেলবন্দি অবস্থায় রয়েছে। খাগড়াগড় কাণ্ডের জমা পড়া চার্জশিটেও নাম রয়েছে জামাত-উল-মুজাহিদিনের এই জঙ্গির। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে মাত্র তিনদিন আগে সম্পাদিত প্রত্যার্পণ চুক্তির প্রেক্ষিতে নায়িমকে ফেরত পাঠানো এখন অনেকটাই সহজসাধ্য বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূত্রের খবর, বাংলাদেশের এই আরজি বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন রাজনাথ সিং।
এরই পাশাপাশি সম্প্রতি গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ এবং শোলাকিয়ায় ইদগাহ ময়দানে জঙ্গি হামলার ‘মাস্টার মাইন্ড’ তথা অর্থ সরবরাহকারী কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশি তামিম আহমেদ চৌধুরিসহ পাঁচ জঙ্গিকে খুঁজে বের করার জন্য দিল্লিকে আরজিও জানিয়েছে ঢাকা। বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের বক্তব্য অনুযায়ী, ওই জঙ্গিরা এখন ভারতে লুকিয়ে রয়েছে। প্রসঙ্গত, গুলশান ও শোলাকিয়ার হামলার ষড়যন্ত্রকারী হিসাবে যুক্ত দুই জঙ্গি মহম্মদ সুলেমান এবং সালাউদ্দিন ওরফে সালেহান ওরফে সজীবকে খুঁজে বের করার জন্য এনআইএ’কে অনুরোধ জানিয়েছিল বাংলাদেশ। অপরদিকে, জামাত-উল-মুজাহিদিনের শীর্ষ নেতা সাজিদের স্ত্রী ফতেমা বেগম এখন বাংলাদেশের কারাগারে বন্দি। শিমুলিয়া ও মুকিমনগরের মাদ্রাসায় পাঁচ বাংলাদেশিসহ মোট ২৫জন মহিলাকে জঙ্গি-জেহাদি প্রশিক্ষণ দিয়েছিল সে। গত ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর খাগড়াগড়কাণ্ডের পর বাংলাদেশে পালায় জঙ্গি সংগঠনের মহিলা শাখার প্রধান ফতেমা। এরপর ওই বছরের ২২ নভেম্বর রাতে ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ফতেমা ও তার তিন সহযোগীকে। এনআইএ সূত্রে জানা গিয়েছে, হাসিনা সরকার বিরোধী ষড়যন্ত্র মামলা এগিয়ে নিয়ে যেতে বাংলাদেশ যেমন নুরুলকে ফেরত চাইছে, ঠিক তেমনই খাগড়াগড় মামলার অগ্রগতির স্বার্থে ফেরত চাওয়া হচ্ছে ফতেমাকে।
বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের বক্তব্য অনুযায়ী, খাগড়াগড়কে বেসক্যাম্প বানিয়ে মঙ্গলকোটের শিমুলিয়া ও লালগোলার মুকিমনগরে জঙ্গি-জেহাদি গড়ার যে ‘কারখানা’ বানানো হয়েছিল, তার প্রশিক্ষক ছিল নুরুল। মুর্শিদাবাদের বক্সিপুরের বাসিন্দা নুরুল ছিল এ রাজ্যে জামাত-উল-মুজাহিদিন প্রধান তথা বাংলাদেশি নাগরিক সাজিদ, তালহা শেখ ওরফে বশির, নাসিরুল্লা ওরফে হাতকাটা এবং কওসর ওরফে আনিসের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। গত ২০১৫ সালের ১৮ জুন হাওড়া স্টেশন থেকে এনআইএ গ্রেপ্তার করে খাগড়াগড় কাণ্ডের অন্যতম এই অভিযুক্তকে। তদন্তকারী সংস্থার জেরায় সে জানায়, ২০১৪ সালের গোড়ার দিকে ঢাকার মীরপুর ও যাত্রাবাড়ির জঙ্গি ডেরায় বিস্ফোরক ব্যবহার ও বোমা তৈরির করার প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। টানা দেড়মাসের সেই প্রশিক্ষণপর্বে তার ‘শিক্ষক’ ছিল তালহা শেখ এবং কওসর। খাগড়াগড় কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত (পলাতক) তালহা ওপার বাংলায় জামাত-উল-মুজাহিদিনের প্রতিষ্ঠাতা সাইদুর রহমানের ছেলে। তালহার মতোই খাগড়াগড় অভিযুক্ত হিসাবে পলাতক রয়েছে কওসর ওরফে বোমা মিজান ওরফে আনিস ওরফে জাহিদুল ইসলাম।
এনআইএ সূত্রে খবর, রাজনাথের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, হাসিনা সরকারকে উৎখাত করার জন্য জামাত-উল-মুজাহিদিন যে চক্রান্ত করেছিল, তার অংশীদার নুরুল হক মণ্ডল। ওই চক্রান্ত মামলা শুরু করছে ঢাকা। তার অন্যতম অভিযুক্ত হিসাবে নুরুলকে বাংলাদেশের আদালতে হাজির করাতে চাইছেন তাঁরা।