Main Menu

জাওয়াহিরির মেয়েদের বিনিময়ে কয়ানির ছেলেকে ছাড়িয়েছে পাক সেনা?

+100%-

pkডেস্ক ২৪:: সম্প্রতি একটি চাঞ্চল্যকর খবর আমেরিকায় পৌঁছেছে৷ কট্টরপন্থী মুসলিম সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী আল-কায়েদা দাবি করেছে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রাক্তন প্রধান অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল পারভেজ আশফাক কয়ানির ছেলেকে অপহরণ করে মুক্তিপণ বাবদ আল-কায়েদা প্রধান আয়মান আল-জাওয়াহিরির দুই মেয়েকে তারা ছাড়িয়ে নেতে পেরেছে৷ আমেরিকার লং ওয়ার জার্নালকে উদ্ধৃত করে টাইমস অব ইন্ডিয়ার স্বনামধন্য সাংবাদিক চিদানন্দ রাজঘট্ট এই খবর জানিয়েছেন৷

চিদানন্দ রাজঘট্ট লিখেছেন, আগস্ট মাসেই আল-কায়েদার অন লাইন ম্যাগাজিন আল-মাসরা তাদের প্রথম পাতায় এই কথা ঘোষণা করেছিল৷ শুক্রবার আমেরিকার লং ওয়ার জার্নালে সে খবর প্রকাশিত হয়৷ আল-কায়েদার সাময়িকী বলছে, পাকিস্তানের ‘অধার্মিক’ সেনাবাহিনীকে পথ দেখিয়ে নিয়ে গিয়েছিল এক গুপ্তচর৷ তারই সাহায্য নিয়ে পাক সেনাবাহিনী তিন ‘অসহায়’ রমণীকে পাকড়াও করে৷ এই তিন রমণীর মধ্যে দুজন আয়মান আল-জাওয়াহিরির আত্মজা, ফতিমা এবং উমাইমা৷ আর একজন আল-কায়েদার এক ‘শহিদে’র বিধবা৷ আল-মাসরার দাবি অনুযায়ী এই ‘শহিদ’ আবার কোনও হেঁজিপেজি লোক ছিল না৷ ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকার মাটিতে আত্মঘাতী বিমান হামলার ছক কষেছিল যারা, আদনান শুক্রাজুমা ছিল তাদেরই একজন৷ জাওয়াহিরির দুই মেয়ের সঙ্গে এই শুক্রাজুমার বিধবা সামিয়াকেও পাকড়াও করে পাক সেনাবাহিনী৷ গত মাসে আল-মাসরার ঘোষণায় জানানো হয় যে, ওই তিন মহিলাকে যে শুধু ‘উদ্ধার’ করা হয়েছে তা নয়, যে গুপ্তচর পাক সেনাবাহিনীকে পথ দেখিয়ে ওই তিন অসহায়ার আস্তানায় নিয়ে গিয়েছিল তারও গর্দান নেওয়া হয়েছে৷ আল-কায়েদার বক্তব্য অনুযায়ী, তিন মহিলাকেই ছাড়িয়ে আনার পর তাদের নির্বিঘ্নে মিশরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে৷

কিন্তু প্রশ্ন দেখা দিয়েছে অন্য কারণে৷ পাক সেনাবাহিনীর হাতে জাওয়াহিরির কন্যাদের আটক হওয়ার খবর বেশ কিছু দিন ধরেই সোশ্যাল নেটওয়ার্কে ঘোরাফেরা করছিল৷ কিন্তু অবসরপ্রাপ্ত পাক জেনারেল কয়ানির ছেলে সরোশ যে অপহৃত হয়েছে, এবং আয়মান আল-জাওয়াহিরির দুই মেয়ে সহ আটক তিন রমণীর বিনিময়েই যে তার মুক্তি মিলেছে এহেন খবর আল-কায়েদা ভিন্ন আর কোনও সূত্রেই মেলেনি৷ সম্প্রতি যাঁর অপহরণ নিয়ে সব থেকে বেশি খবর বেরিয়েছে তিনি হলেন পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানির ছেলে আলি গিলানি৷ মার্কিন-আফগান বাহিনীর যৌথ অভিযানে আলি গিলানি মুক্তি পান৷ মুক্তি মেলার পর এক সাক্ষাৎকারে প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রীর ছেলে বলেন, বন্দি অবস্থায় তিনি শুনেছিলেন যে আল-কায়েদার কয়েকজন পাণ্ডার ‘জেনানা’দের বিনিময়ে তাঁকে ছাড়া হবে৷

আমেরিকার কাছেও যা খবর তা হল এই, ২০১৫ সালের গোড়ায় পাকিস্তানের ওয়াজিরিস্তান প্রদেশে যখন ধারাবাহিক বোমাবর্ষণ চলছিল তখনই সেখান থেকে বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে ডেরাডান্ডা তুলে পালানোর চেষ্টা করে আয়মান আল-জাওয়াহিরির দুই মেয়ে, ফতিমা এবং উমাইমা৷ কোলে-কাঁখে মিলিয়ে ফতিমার ছেলেপুলে সাতখানা, আর উমাইমার পাঁচটা৷ তাদের সঙ্গে ছিল আদনান শুক্রাজুমার বিধবাও৷ সেই সময়েই পাক সেনাবাহিনীর হাতে তারা ধরা পড়ে যায়৷ জুলাই মাসে আল-কায়েদা এক বিবৃতি দিয়ে জানায়, ‘‘আটকদের ছাড়ানোর প্রশ্নে বেইমান পাক সেনাবাহিনীর সঙ্গে যাবতীয় আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে৷’’ পরে আবার আল-কায়েদার তরফ থেকেই জানানো হয়, ‘দাম্ভিক’ পাক সেনাবাহিনী প্রথমে বন্দি বিনিময়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেও দীর্ঘ আলোচনার শেষে তাতে নিমরাজি হয়েছে৷

এ থেকেই পরিষ্কার, বাইরে যে কথাই বলুক কিংবা যে ধরনের হাবভাবই করুক না কেন, পাক সেনাবাহিনী এখনও গোপনে আল-কায়েদার সঙ্গে আগের মতোই যোগাযোগ রেখে চলছে এবং উভয় তরফে নিয়মিত কথাবার্তা চালাচালিও হয়৷ মার্কিন লং ওয়ার জার্নালকে উদ্ধৃত করে চিদানন্দ রাজঘট্ট লিখছেন, আল-মাসরার সাম্প্রতিক ঘোষণায় মনে হচ্ছে আলি গিলানিকে পণবন্দি করার প্রসঙ্গটি চাপা দিতেই যেন আল-কায়েদা কয়ানির ছেলের অপহরণ ও বন্দি বিনিময়ের বিষয়টি যেচে পাড়ছে৷ তাদের দাবিই যে সঠিক সেটা প্রমাণ করতেই যেন আল-কায়েদার অন-লাইন ম্যাগাজিনে জেনারেল কয়ানির একটি ছবিও ছাপা হয়েছে৷ যদিও লং ওয়ার জার্নালের মতে, এতে কোনও কিছুই প্রমাণিত হয় না৷ কারণ, কয়ানির ছেলের অপহরণের বিষয়টি কোনও নিরপেক্ষ সংবাদ সূত্রে মিলছে না৷ এ থেকে বোঝা যায়, বিভ্রান্তি ছড়ানোর ক্ষেত্রে আল-কায়েদা তার পুরানো ছক এবং কৌশল সমানে বজায় রেখে চালিয়ে যাচ্ছে৷ আর তাতে পাক সেনাবাহিনীর একটি অংশের মদতও তারা নিশ্চিতভাবে পাচ্ছে৷

শাসক-অভিজাত মহলের কাউকে অপহরণ করে বন্দি বিনিময় কিংবা অর্থ দাবি পাকিস্তানে অনেক দিন ধরেই চলে আসছে৷ সেদেশের মানুষের কাছে ব্যাপারটা এখন গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে৷ হালে এই প্রতিবেশী দেশে বেশ সাড়া জাগিয়েছিল পাক পাঞ্জাব প্রদেশের প্রাক্তন শাসনকর্তা সলমন তাসিরের ছেলে শাহবাজ তাসিরের অপহরণ কাণ্ড৷ যদিও কীভাবে এবং কিসের বিনিময়ে এই অভিজাতরা জঙ্গি কিংবা দুষ্কৃতীদের কবল থেকে ‘মুক্তি’ পান তা রহস্যই থেকে যায়৷

জেনারেল কয়ানির সামরিক কেরিয়ার শুরু হয়েছিল নিতান্ত এলেবেলেভাবে৷ পাক সেনাবাহিনীতে গোড়ায় তিনি ছিলেন একজন জুনিয়র কমিশনড অফিসার৷ ক্রমে মূলত মার্কিন সেনাবাহিনীর উপরমহলের আশীর্বাদে তিনি ধাপে ধাপে সেনাপ্রধান হন৷ এবং, যে কোনও পাক সেনাকর্তার মতোই দুহাতে টাকাপয়সা কামিয়ে একেবারে লাল হয়ে যান৷ জেনারেল থাকতে থাকতেই তিনি বেশ বড় মাপের একটি বেনামা ব্যাবসা ফাঁদেন৷ ফৌজি ফার্টিলাইজার কোম্পানি৷ কয়ানির ছেলে সরোশ এই সার কারখানারই এক এক্সিকিউটিভ৷ অবরসপ্রাপ্ত জেনারেল কয়ানির আপন ভাই কামরান কয়ানিও সুকুমার রায়ের ভাষায় একেবারে ‘তৈরি ছেলে’৷ ১৭০০ কোটি টাকার সেনা আবাসন জমি কেলেঙ্কারিতে ফেঁসে তিনি আপাতত ফেরার৷ তা নিয়ে এখন চালাচ্ছে পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরো৷ মজা হল, পাক মিডিয়াও সেদেশের সেনাকর্তাদের কেলেঙ্কারির কথা তখনই জানতে পারে যখন তাঁরা অবসর নেন৷ পারভেজ মোশারফ কিংবা কয়ানির দুর্নীতি এবং আর্থিক কেলেঙ্কারির কথাও জানাজানি হয় তাঁরা রিটায়ার করার পর৷ এখন পাকিস্তানি মিডিয়ায় জেনারেল রাহিল শরিফের অশেষ গুণকীর্তন চলছে৷ পাক সেনাবাহিনীর তরফ থেকে টন টন সামরিক মেডেলে সাজিয়ে তাঁকে ‘ফিল্ড মার্শাল’ করার কথাও নাকি ভাবা হচ্ছে৷ আগামী নভেম্বর মাসে পাক সেনাপ্রধানের পদ থেকে জেনারেল রাহিল শরিফের অবসর নেওয়ার কথা৷ তার পর হয়তো তাঁর সম্পর্কেও আরও অনেক সুন্দর সুন্দর ব্যাপার পাক সংবাদ সূত্রে জানা যাবে৷ ঠিক যেমনটা জানা গিয়েছে পারভেজ মোশারফ কিংবা পারভেজ আশফাক কয়ানির কাজ-কারবার সম্পর্কে৷






Shares