উন্নয়নশীল এই বাংলাদেশ সমালোচকদের মুখে এক চপেটাঘাত : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ায় স্বাধীনতার পর যারা এ দেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলতো তাদের মুখে এখন চপেটাঘাত পড়েছে।
সোমবার বিকেলে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদের মাসব্যাপী একক চিত্রপ্রদর্শনীর উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে একটি মহল বলতো, এ দেশ স্বাধীন হয়ে কী করবে। তারা তলাবিহীন ঝুড়িই হবে। আমি মনে করি সেসব সমালোচনাকারীদের মুখে এখন চপেটাঘাত পড়েছে এবং বাঙালিরাই তা করেছে।’
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এবং ভারতের কলকাতার গ্যাঞ্জেস আর্ট গ্যালারি ‘শান্তি’ শীর্ষক এই চিত্রপ্রদর্শনীর আয়োজন করে।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব ইব্রাহিম হোসেইন খান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী ও গ্যাঞ্জেস আর্ট গ্যালারি পরিচালক স্মিতা বাজোরিয়া এতে বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে শাহাবুদ্দিন আহমেদের লেখা ‘আমার মুক্তিযুদ্ধ’ বইয়ের মোড়কও উন্মোচন করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এডিসি) উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার বিষয়টি বিশ্বের স্বীকৃতি অর্জন করেছে। তিনি বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদক্ষেপ অনুসরণ করায় আমরা এখন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছি।’ শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশকে স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায়ে রেখে গিয়েছিলেন, কিন্তু ৩৮ বছরেও বাংলাদেশ আর কোন মর্যাদায় উন্নীত হতে পারেনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে জাতিসংঘের স্বীকৃতি পেয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন অর্থনৈতিকভাবে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর কৌশল শিখেছি। এখন আমরা অন্যের ওপর নির্ভরশীল নই। আমরা প্রমাণ করেছি, আমরা নিজেরাই নিজেদের দেশের উন্নয়ন করতে পারি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস ফিরিয়ে আনতে নিরলস প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। কারণ, কয়েক প্রজন্ম স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস থেকে বঞ্চিত রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘তাদের সামনে একটি বিকৃত ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সত্যিকার ইতিহাস তুলে ধরা, যাতে একটি বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা মর্যাদা অর্জন করতে পারি।’
শেখ হাসিনা বলেন, একটি জাতি তখনই আলোকিত হয়, যখন এর শিক্ষা, সংস্কৃতি ও শিল্পকলা সমৃদ্ধ হয়। বঙ্গবন্ধুর উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি রাজনৈতিক স্বাধীনতার সঙ্গে জড়িত।
তিনি বলেন, ’৭৫-এর পর কিভাবে দেশের সংস্কৃতিকে ধ্বংস করা হয়েছে তা আমরা দেখেছি। কিন্তু আমরা সবসময়ই আমাদের শিল্পকলা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখার চেষ্টা করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার চায় বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে এবং বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। এ লক্ষ্য অর্জনে আমরা প্রতিটি পদক্ষেপ নিয়েছি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ চেতনা যাতে আবার হারিয়ে না যায় এ জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা দেশকে একটি পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। বাংলাদেশ যাতে আর রাজাকার-আলবদরদের দেশে পরিণত না হয়, সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাংলাদেশ তার পথ হারিয়ে ফেলে। জনগণের সামনে উপস্থাপন করা হয় একটি বিকৃত ইতিহাস।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু তাঁর সারাজীবন লড়াই করে গেছেন এবং বছরের পর বছর কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে দিন কাটিয়েছেন। কিন্তু কারো কাছে মাথানত করেননি।
আন্দোলনের মাধ্যমে কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু যখন মুক্তি লাভ করেন সে প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সে সময় তিনি বলেছিলেন, ‘রক্তের বিনিময়ে আপনারা আমাকে মুক্ত করেছেন এবং রক্তের বিনিময়ে আমি এ ঋণ শোধ করবো। রক্ত দিয়ে তিনি তা করেছেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের জনগণ তাঁর ঋণ শোধ করবে। তিনি বলেন, আমরা যদি গরীব ও দুস্থ মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারি, তাহলে তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, শুধু খাদ্যের মাধ্যমে কোন ব্যক্তির ক্ষুধা মেটে না, তার মনের ক্ষুধাও পূরণ করতে হবে। আর এ মনের ক্ষুধা পূরণ করতে পারে শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু কবি, শিল্পী, লেখক ও সাহিত্যিকদের খুবই ভালোবাসতেন এবং শ্রদ্ধা করতেন। তিনি বলেন, ‘তারা অবাধে আমাদের বাড়িতে যাতায়াত করতেন।’
রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা একে অপরের পরিপূরক উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কবি, সাহিত্যিক ও শিল্পীদের অংশগ্রহণ ছাড়া কোন কর্মসূচি সফল করা সম্ভব নয়।
শাহাবুদ্দিনকে বাংলাদেশের সম্পদ হিসেবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বড় কথা হচ্ছেÑ তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।
তিনি বলেন, ‘তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। তার তুলির টানে তা-ই উঠে এসেছে। এ জন্য আমরা গর্বিত।’
এ শিল্পীর দীর্ঘজীবন কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই আমাদের গৌরবোজ্জ্বল স্বাধীনতা যুদ্ধের কথা তার তুলিতে অব্যাহতভাবে উঠে আসুক।
প্রদর্শনীতে শিল্পী শাহাবুদ্দিনের ৩০টি চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছে। এতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মহাত্মা গান্ধীর প্রতিকৃতির পাশাপাশি ‘মুক্তিযোদ্ধা’, ‘বীরাঙ্গনা’, ‘গতি’, ‘বিজয়’ এবং আরো অনেক চিত্রকর্ম রয়েছে।
প্রদর্শনী প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত (শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা) দর্শকদের জন্য খোলা থাকবে। এ প্রদর্শনী এর আগে ভারতের গ্যাঞ্জেস আর্ট গ্যালারিতে প্রদর্শিত হয়।