বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের চুরি যাওয়া অর্থ যেভাবে শ্রীলংকার শালিকার একাউন্টে
বাংলাদেশ ব্যাংকের দুই কোটি ডলার শ্রীলংকার যে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর একাউন্টে জমা হয়েছিল, সেই মহিলা এই প্রথম মুখ খুলেছেন।
বিবিসি বাংলা:: কলম্বোতে রয়টার্স বার্তা সংস্থাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ৩৬ বছর বয়সী হাগোডা গামাগে শালিকা পেরেরা জানিয়েছেন, তাঁর ধারণা ছিল জাপানের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা জাইকা তাকে এই অর্থ দিচ্ছে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য।
শ্রীলংকার ‘শালিকা ফাউন্ডেশন’ নামের যে প্রতিষ্ঠানের একাউন্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের এই অর্থ জমা হয়েছিল, সেটির প্রধান তিনি। এরকম ছোট একটি প্রতিষ্ঠানকে কেন জাইকার মত প্রতিষ্ঠান দুই কোটি ডলার দিতে যাবে, সে প্রশ্নের অবশ্য কোন সদুত্তর তিনি দিতে পারেন নি।
অন্যদিকে জাইকা জানিয়েছে, শ্রীলংকার এই শালিকা ফাউন্ডেশনের সঙ্গে তাদের কোন সম্পর্ক কখনোই ছিল না।
শালিকা ফাউন্ডেশনের একাউন্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশ মিলিয়ন ডলার জমা হয় ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে । শালিকা পেরেরা রয়টার্সের সাংবাদিককে এই লেন-দেনের যে কাগজ দেখিয়েছেন, তাতে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ সরকারের পল্লী বিদ্যুৎ সংস্থা এই অর্থ পাঠিয়েছে। এই অর্থ তারা ২০১০ সালে জাপানের কাছ থেকে ধার করেছিল একটি বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য।
কিন্তু বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মইন উদ্দীনও এই দাবিকে হাস্যকর বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, হয়তো এই লেন-দেনকে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ করার জন্য তারা এই প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করেছে।
শালিকা পেরেরা ‘শালিকা ফাউন্ডেশন’ ছাড়াও আরও কয়েকটি ছোটখাট ব্যবসা চালান। তার অটো পার্টসের ব্যবসা আছে, আছে একটি ক্যাটারিং কোম্পানি এবং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। কিন্তু কোন ব্যবসা যে ভালো চলছে না, সেটা স্বীকার করলেন তিনি।
২০১৪ সালে তিনি লোকসানের মুখে তার পাবলিশিং ব্যবসা বন্ধ করে দেন। এমনকি অফিসের কম্পিউটার পর্যন্ত বিক্রি করে দিতে হয় তাকে।
এখন তিনি ব্যবসা চালান ইন্টারনেট ক্যাফে থেকে। আর সম্ভাব্য বিনিয়োগকারিদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ সেরে নেন পিৎজা হাট বা এরকম কোন রেস্টুরেন্টে।
এত বিশাল অংকের অর্থ কিভাবে তার একাউন্টে আসলো? শালিকা পেরেরার ভাষ্য অনুযায়ী, এক জাপানি মধ্যস্থতাকারির মাধ্যমে তার সঙ্গে জাইকার যোগাযোগ হয়। সেই জাপানি মধ্যস্থতাকারি তাকে জানায়, দুই কোটি ডলার একাউন্টে জমা হওয়ার পর তার ৭৭ লক্ষ ট্রান্সফার করা হবে শালিকার একাউন্টে, আর বাকীটা যাবে তার একাউন্টে।
শ্রীলংকার প্যান এশিয়া ব্যাংক অবশ্য এই টাকা ছাড় করতে দেয়নি, কারণ এত বিরাট অংকের অর্থ দেখে তাদের সন্দেহ হয়।
এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে এই জালিয়াতি ধরা পড়ার পর অর্থ ফেরত চেয়ে পাঠায় বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে এই অর্থ আর জালিয়াতরা তুলে নিতে পারেনি।
শালিকা পেরেরা এবং তার স্বামী, এবং তাদের কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত আরও চারজন পরিচালক যাতে দেশ ত্যাগ করতে না পারে সেজন্যে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে শ্রীলংকার কর্তৃপক্ষ।