ভারত আশুগঞ্জ বন্দর দিয়ে সার ও ইস্পাত নিতে চায়



ডেস্ক রির্পোট : বাংলাদেশের আশুগঞ্জ নদীবন্দর ব্যবহার করে স্থায়ীভাবে সার ও ইস্পাত নিতে চায় ভারত। বাংলাদেশের নদীবন্দর ব্যবহার করলে একই সঙ্গে খরচ ও সময় দুটিই কমবে ভারতের।
বাংলাদেশের নৌ সচিব শফিক আলম মেহদী জানান, ভারতের পক্ষ থেকে আশুগঞ্জ নদীবন্দর ব্যবহারের প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। তবে এ বন্দর ব্যবহারের জন্য সরকারের হাই কমান্ডের নির্দেশের অপেক্ষা করছে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়। ভারতকে এ ধরনের সুবিধা দিতে উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্ত লাগবে। এটি হতে পারে সরকারের নীতি নির্ধারনী কোন সদস্য বা মন্ত্রী পর্যায়ের কোন ব্যক্তির সিদ্ধান্ত।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের নদীবন্দর ব্যবহার করে ২৫ হাজার টন খাদ্য-শস্য আখাউড়া দিয়ে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে নিয়ে যায় ভারত। এছাড়া গত বছরের আগস্ট-নভেম্বর মাসে ১০ হাজার টন খাদ্য শস্য নিয়ে যায়। এর বিনিময়ে ভারতকে শুল্ক ও কর পরিশোধ করতে হয়েছিল।
তারপরে ২৫ হাজার টন খাদ্য শস্য শিপমেন্ট করার জন্য অপেক্ষা করছে। এ মালামালের জন্য বাংলাদেশের নদীবন্দর ব্যবহার করলে ফি দিতে হবে। এখনো নির্ধারিত করা হয়নি ফি ও শুল্কের হার। প্রতিবেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে কি পরিমাণ হার নির্ধারণ করা হবে তার অনুশীলন চলছে । এ পরীক্ষামূলক হার নির্ধারণের পরে তা পরবর্তী সময়ে মন্ত্রিপরিষদে উত্থাপনের জন্য পাঠানো হবে বলে নৌ সচিব জানান।
এদিকে নৌ মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, কোলকাতার বাণিজ্যিক কোম্পানিগুলো ভারত-বাংলাদেশ প্রটোকল রুট ব্যবহার করে বাণিজ্যিক পণ্য নিতে আগ্রহী। তার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের হালদা বন্দর ব্যবহার করে টাটা কেমিক্যাল লিমিটেড ত্রিপুরায় ৩০ হাজার টন সার পাঠাতে চায়। এছাড়া ভারত বাংলাদেশের আশুগঞ্জ নদীবন্দরে ট্টাকের মাধ্যমে শিপমেন্ট করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
একই সঙ্গে মেসার্স টাটা স্টিল কোম্পানি আশুগঞ্জ নদীবন্দর ব্যবহার করে আগরতলায় বাণিজ্যিক পণ্য পাঠাতে চায়। তবে ভারতের পক্ষ থেকে কি পরিমাণ কার্গো ব্যবহার করা হবে তার কোন সংখ্যা উলে¬খ করেনি বলে জানান তিনি।
এ প্রস্তাবনা বিবেচনার জন্য ঢাকায় ভারতের দূতাবাস নৌ মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করেছে। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় ভারতের এ প্রস্তাবনাটি সম্প্রতি মতামতের জন্য বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডবি-উটিএ)’র কাছে হস্তান্তর করেছে।
জুনে ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে তাগিদ দেওয়া হয়েছিল যাতে আশুগঞ্জ নদীবন্দর দ্রুত ব্যবহার করা যায় সে ব্যবস্থা করার জন্য। এছাড়া চলতি বছরের ২০ এপ্রিল নয়া দিলি¬তে দুই দেশের নৌ সচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল আশুগঞ্জের বন্দরে কার্গো ব্যবহার করার জন্য সিদ্ধান্ত নিতে।
ভারতের অরুণাচল, আসাম, মেঘালয়, মনিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড ও ত্রিপুরা এ সেভেন সিস্টারের নাগরিকদের খাদ্য সরবরাহ করতে আশুগঞ্জ নদীবন্দর ব্যবহার করতে বাংলাদেশের ভূ-খন্ড ব্যবহার করতে চায় ভারত।
ভারতের সেভেন সিস্টার খ্যাত এ রাজ্যগুলোতে কোলকাতা থেকে পণ্য আনতে গুয়াহাটি বন্দর ব্যবহার করে আগরতলায় আসতে হয়। এ জন্য ১ হাজার ৬৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। আর বাংলাদেশের ভূ-খন্ডের আশুগঞ্জ নদীবন্দর ব্যবহার করলে মাত্র ৩৫০ কি.মি পথ পাড়ি দিতে হবে ভারতকে।
আওয়ামী লীগের নেতৃতাধীন সরকার ২০১২ সালের জানুয়ারিতে প্রতিবেশি দেশকে ট্রানজিট ও ট্টানশিপমেন্ট সুবিধা দিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় একটি কমিটি গঠন করে। ভারতকে বাংলাদেশের ৯টি সড়ক পথ, ৫টি নৌ পথ ও ৯টি রেলপথ ব্যবহার করার সুপারিশ করেছে কমিটি। তবে ভারতকে ট্টানজিট সুবিধা দেওয়ার আগে অবকাঠামো আরো শক্তিশালী করারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।