‘সেই স্বৈরাচার এখনও ক্ষমতার অংশ’ -ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আনু মুহাম্মদ
ঘটা করে স্বৈরাচারকে সঙ্গে নিয়েই স্বৈরাচারদের গুলিতে নিহতদের স্মরণ করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
তিনি বলেন, ‘১০ নভেম্বর দুই শহীদকে স্মরণ করা হয়েছে। কিন্তু যে স্বৈরাচারের গুলিতে নূর হোসেন জীবন দিয়েছে সেই স্বৈরাচার এখনও ক্ষমতার অংশ। যেই স্বৈরাচারি ব্যবস্থার পতনের জন্য বাংলাদেশের মানুষ ষাটের দশকে, আশির দশকে আন্দোলন করেছে, সেই ব্যবস্থা এখনও অটল আছে’।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জেলা শিল্পকলা একামেীর হলরুমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ভাষাসংগ্রামী আব্দুল মতিন স্মরণসভা কমিটি আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ আরো বলেন, একটা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে দুর্র্নীতিবাজ, লুটেরা, দখলদার, ব্যবসায়ি, সামরিক শাসন, স্বৈরতন্ত্র স্থায়ী রূপ পেয়েছে। সেই রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার ভাঁজে ভাঁজেই যুদ্ধাপরাধীরা এত বছর ধরে তাদের রাজনীতি ধরে রেখেছে। সেই প্রক্রিয়ায়ই তৈরি হচ্ছে লুটেরা শক্তি, যারা লুন্ঠন-দখলের মাধ্যমে প্রবাসী ও গামের্›ট শ্রমিকদের জমানো বিপুল অংকের টাকা পাচার করে দিচ্ছে।
বাংলাদেশের বিপুল সম্পদের সমাবেশ আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই দেশের উর্বর জমি দিয়ে ষোল কোটি মানুষের জীবনের চাহিদা মেটানো সম্ভব। অথচ আমাদের বারো কোটি মানুষই দরিদ্রসীমার নিচে বাস করছে। কিন্তু কিছু লোক এদেশে সফল হচ্ছে। সম্পদ আমাদের সমস্যা নয়। সমস্যা হচ্ছে জনগণের স্বার্থের পরিপন্থী রাজনীতির সমস্যা। তিনি বলেন, যারা জনগণের সম্পদের উপর জনগণের মালিকানা নিশ্চিত করে তারাই দেশপ্রেমিক।
স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরেও একটা আন্তর্জাতিক কিংবা উন্নতমানের হাসপাতাল নির্মিত হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতিরা অসুস্থ্য হলে বিদেশে চলে যান। কিন্তু একটা ভালো হাসপতাল করার ইচ্ছা তাদের মধ্যে এত বছরেও জাগ্রত হয়নি। বাংলাদেশের চেয়ে অনেক কম সম্পদ নিয়েও কিউবার মতো ছোট রাষ্ট্র তাদের সকল নাগরিকদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করেছে।
আমাদের মধ্যে থাকা খনিজ সম্পদ উত্তোলনের জন্য দক্ষ প্রকৌশলী ৪৩ বছরেও তৈরি হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরে যে গ্যাস সম্পদ রয়েছে তা দিয়ে শত বছরের জ্বালানি সমস্যা মিটে যেতো। কিন্তু সেই সম্পদ উত্তোলনে আমাদের দক্ষ প্রকৌশলী নেই। তাহলে বাংলাদেশের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় কি শুধু বিদেশে প্রকৌশলী সাপ্লাই দেওয়ার জন্য? তাহলে জনগণের টাকায় এই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চলছে কেন?
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ভাষাসংগ্রামী আব্দুল মতিন স্মরণসভা কমিটির আহবায়ক কমরেড মতিলাল বণিকের সভাপতিত্বে ও অনুশীলন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক আবদুন নূরের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকোট নাসির মিয়া।
সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা জাসদ সভাপতি অ্যাডভোকেট আকতার হোসেন সাঈদ, ওয়ার্কার্স পার্টির সম্পাদক অ্যাডভোকেট কাজী মাসুদ আহমেদ, ঐক্য-ন্যাপ সভাপতি প্রবীর কুমার দেব, সিপিবি নেতা ঈসা খাঁন ও নয়া গণতান্ত্রিক গণমোর্চার আহবায়ক সৈয়দ সালাউদ্দিন মুকুল। সভায় একুশের কবিতা আবৃত্তি করেন বাচিকশিল্পী মো. মনির হোসেন, হাবিবুর রহমান পারভেজ ও বাছির দুলাল।