Main Menu

পাভেলের ভিসা প্রতারণায় পথে বসেছে ২০ পরিবার

+100%-

সারোয়ার হাজারী পলাশ : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার ২০ বেকার যুবক বিদেশ যাওয়ার জন্য টাকা দিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তাদের পরিবার এখন দিশেহারা। কিন্তু প্রতারক সাইপ্রাসপ্রবাসী মেসবাহ উদ্দিন পাভেল ধরাছোঁয়ার বাইরে। পাভেল বিজয়নগরের দুলালপুর গ্রামের টিঅ্যান্ডটি কর্মকর্তা সমুজ আলীর ছেলে।

জানা যায়, ২০০৮ সালে স্টুডেন্ট ভিসায় সাইপ্রাসে যান মেসবাহ উদ্দিন পাভেল। সেখানে পড়াশোনার পাশাপাশি একটা গাড়ির গ্যারেজে কাজ নেন তিনি। চার বছর পর ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশে আসেন পাভেল, ৩ মাস পর আবার চলে যান সাইপ্রাসে।

সাইপ্রাসে গাড়ির গ্যারেজে কাজ করার সময় পরিচয় হয় ঢাকার এক ছেলের সঙ্গে। জানা যায়, একসময় পাভেল গ্যারেজের কাজ ছেড়ে দিয়ে ঢাকার ছেলেটির সঙ্গে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে।

জানা যায়, পাভেল সে সময়ে মাত্র ৮ মাসে আয় করেন প্রায় ৯০ লাখ টাকা। তারপর ২০১৩ সালে মার্চ মাসে আবারো ছুটিতে দেশে আসেন পাভেল। তখন প্রায় ৪০ লাখ টাকা খরচ করে কুঁড়েঘর থেকে পাকা বাড়ি তৈরি করেন পাভেল। ২ লাখ টাকা খরচ করে এলাকার মানুষকে দাওয়াত খাওয়ান।

প্রায় ৫ লাখ টাকা খরচ করে তার বাবাকে হজ করিয়েছেন, প্রায় ৬ লক্ষ টাকা খরচ করে বোনের বিয়ে দিয়েছেন পাভেল।

আর এসব দেখেই এলাকার বেকার ছেলেরা পাভেলের প্রতি মুগ্ধ হয়ে যায়। তারাও সাইপ্রাসে যাওয়ার জন্য পাভেলের পেছনে ঘুরতে থাকেন। প্রতারক ও মাদক ব্যবসায়ী পাভেলও রাজি হয় বেকার যুবকদের ভিসা দেওয়ার জন্য।

এরপরই পাভেল বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের প্রভাবশালী তাবরিছ সরকার চেয়ারম্যানের এক আত্মীয়কে ঢাকার একটি ট্রাভেল এজেন্সি থেকে ভিসা দিয়ে সাইপ্রাসে পাঠায়। কিছুদিন পর পাভেল বিষ্ণুপুর গ্রামের মহিউদ্দিন মাহিনের ছোটভাইকে আরেকটি ভিসা দেন। এতে পাভেলের নাম ছড়িয়ে যায় বিজয়নগর এলাকা জুড়ে।

আর পাভেল এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলো। তারপরই এলাকার প্রায় ২০ বেকার যুবকের প্রত্যেকের কাছ থেকে তিনি ৫ থেকে ৮ লাখ টাকা করে নিয়ে নেন। কেউ জমি বিক্রি করে, কেউ চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ভাগ্য ফেরানোর আশায় পাভেলকে টাকা দেন। পাভেল তাদের কথা দেয়, তিন মাসের মধ্যে ভিসা দেওয়া হবে। যদিও এসব টাকা লেনদেনের কোনো ডকুমেন্ট বিদেশে যেতে ইচ্ছুক যুবকদের পরিবার রাখেননি।

কিন্তু এই তিন মাস যেন আর শেষ হয় না। যুবকদের পরিবারের পক্ষ থেকে পাভেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে একথা-সেকথা বলে সময় নিতে থাকেন। কিন্তু সেই সময় আর শেষ হয় না, ভিসাও আসে না।

এরমধ্যেই একদিন রাতের আঁধারে সবাইকে ফাঁকি দিয়ে পাভেল আবার সাইপ্রাসে চলে যায়। তখন  সবার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। তারা খোঁজ-খবর নিয়ে তখন জানতে পারেন, পাভেল বিষ্ণুপুর গ্রামে যে দুজনকে সাইপ্রাসে যাওয়ার ভিসা দিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে একজন ইতোমধ্যেই ফিরে এসেছেন, আরেকজন এখনো কষ্টে-সৃষ্টে সাইপ্রাসে টিকে আছেন।

এ ব্যাপারে বিজয়নগর থানার মিরাশানি পলিটেকনিক একাডেমির সিনিয়র শিক্ষক মাহতাব উদ্দিন জানান, পাভেল তার বড়ছেলে মাসুম মেহবুবের খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু। মেজছেলে রাসেল মাহমুদকে সাইপ্রাসে পাঠানোর জন্য পাভেলকে ৬ লাখ টাকা দেওয়া হয়।

‘শেষ পর্যন্ত তার প্রতারণার বিষয়টি বুঝে ফেললে পাভেলকে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য চাপ দেই। তখন সে মাত্র ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা ফেরত দেয়। পরে ইসলামী ব্যাংকের আখাউড়া শাখার বিপরীতে ৩ লাখ টাকার একটি চেক দেয় পাভেল। কিন্তু সেখানে কোনো টাকা ছিলো না।’

বিষয়টি পরে ভুক্তভোগী মাহতাব উদ্দিন প্রতারক পাভেলের বাবাকে জানান। পাভেলের বাবা এক মাসের মধ্যে টাকা ফেরতের আশ্বাস দিলেও তা আজো পাওয়া যায়নি।

তারপর বিষয়টি দুলালপুর এলাকার কয়েকজন মাতাব্বরকেও জানান মাহতাব উদ্দিন।

এ ব্যাপারে প্রতারিত বিষ্ণুপুর গ্রামের মহিউদ্দিন বলেন, পাভেল আমার খুব কাছের বন্ধু ছিলো। এমনও দিন গেছে, যখন পাভেলের ঘরে খাবার ছিল না। এক কিলোমিটার হেঁটে আমাদের বাড়িতে খেতে আসতো পাভেল।

‘সেই পাভেল আমার ছোট ভাইকে সাইপ্রাস থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে এসে আমার সর্বনাশ করেছে। আমি তার হাতে ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলাম। সেই টাকা এখন সুদসহ প্রায় ১৩ লাখ হয়েছে। এখন আর আমার ঘরের ভিটা বিক্রি করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই’, আফসোস করে বলেন মহিউদ্দিন।

পাভেলের প্রতারণার শিকার হয়েছেন বিজয়নগর থানার মহেশপুর গ্রামের ইয়াকুবও।

তিনি জানান, পাভেল আত্মীয় হয়েও আমার ছোটভাইকে সাইপ্রাসের ভিসা দেবে বলে টাকা নিয়ে প্রতারণা করেছে।

এ ব্যাপারে প্রতারক পাভেলের বাবা প্রথমে কথা বলতে না চাইলেও পরে একসময় তিনি টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেন।

তিনি বলেন, ‘পাভেল এলাকার মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। কিন্তু পাভেল টাকা মেরে খাবে না। ৫ বছর পরে হলেও সে টাকা ফেরত দিবে।’

পাভেলের ছোট চাচা জানায়, পাভেল এরমধ্যে ঢাকায় প্রায় ৬০ লাখ টাকা দিয়ে একটি জমি কিনেছেন।






Shares