চার মাস ধরে বন্ধ কোকিল টেক্সটাইল মিলের কোটি টাকার যন্ত্রপাতি রাতের অন্ধকারে লুট
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কোকিল টেক্সটাইল মিলের কোটি টাকার যন্ত্রপাতি রাতের অন্ধকারে লুট করা হচ্ছে।
শামীম উন বাছির ::১৯৬৬ সালে এনাম পারুমা কোম্পানি শহরের মেড্ডা এলাকার ১১ দশমিক ৮ একর জায়গার ওপর মিলটি চালু করে৷ স্বাধীনতার পর এটি রাষ্ট্রীয়করণ করা হয়৷ ১৭ হাজার ৭২৮টি মাকুসমৃদ্ধ এই মিলের বার্ষিক উৎপাদনক্ষমতা ছিল ১১ দশমিক ৭৮ লাখ টন সুতা৷ সর্বোচ্চ উৎপাদনের জন্য ১৯৮৭ সালে মিলটি পুরস্কার পায়৷ সাত শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী মিলটিতে কর্মরত ছিলেন৷ ১৯৯৮ সালে লোকসানের মুখে মিলটি বন্ধ হয়ে যায়৷ ২০০১ সালের ১২ নভেম্বর দরপত্রের মাধ্যমে নামমাত্র মূল্যে ফারুক হোসেন বেপারীর কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়। মিলের যন্ত্র ও জায়গার দাম প্রায় কয়েক শ কোটি টাকা হলেও ফারুক বেপারীর কাছে তা বিক্রি করা হয় নগদ তিন কোটি টাকা এবং পাঁচ বছরের মধ্যে মিলের দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রায় ১১ কোটি টাকা পরিশোধের শর্তে৷ মালিকানা হস্তান্তরের পর এখানে শিল্পকারখানা ছাড়া অন্য কিছু না করার শর্ত দেওয়া হয়েছিল৷ হয়নি।কিন্তু এসব শর্ত লঙ্ঘন করে প্রথম থেকেই কারখানার মালামাল সরিয়ে নেওয়া শুরু হয়৷ আর কারখানা নামমাত্র চালু থাকে৷ তবে চার মাস ধরে কারখানা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে৷
বেসরকারি খাতে যাওয়ার পর মিলটি আবার চালু হবে এমন আশাই ছিল এলাকার মানুষের। কিন্তু তা বরং লুটপাটের আখড়ায় পরিণত হয়েছে এই কারখানা।
গত বেশ কিছুদিন ধরে মিলের ভেতরের সকল ভারি যন্ত্রপাতি ট্রাকে বের করা হচ্ছিল। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজন এসে বাধা দেয়। ২৩ এপ্রিল রাতের ঘটনার কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানায়, কারখানার বিভিন্ন ফ্লোরে ঢালাই করে বসানো ভারি যন্ত্রপাতি শাবল দিয়ে ভেঙে রাতের অন্ধকারে ট্রাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় সেখানে কয়েকজন পুলিশ সদস্যরা প্রহরায় ছিল। স্থানীয়রা এ সময় বাধা দিলেও পুলিশ কর্মকর্তাদের তৎপরতায় তারা বাধা সরিয়ে নিতে বাধ্য হন। এসব মালামাল কি উদ্দেশ্যে সরিয়ে নেয়া হয়েছে তারও কোনো জবাব পাননি তারা।ট্রাকচালকেরা জানান, তাঁদের ঢাকা ও ভৈরবের ভাঙারি ব্যবসায়ীরা পাঠিয়েছেন৷ এ বিষয়ে কারখানার ব্যবস্থাপক কফিল উদ্দিন জানান, দুই মাস আগে তার নিয়োগ হওয়ার পর থেকে কারখানাটি চালু করার চেষ্টায় তিনি কারখানার ভেতরের মেশিনপত্র এদিক-ওদিক করছেন। যেগুলো বিক্রি করা হচ্ছে সেগুলো উচ্ছিষ্ট যন্ত্রাংশ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনের সাংসদ র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেন, ‘কোকিলের সম্পদ লুট হয়ে থাকলে স্থানীয় প্রশাসনকে তদন্ত করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বলব৷ পাশাপাশি প্রাইভেটাইজেশন বোর্ডের সঙ্গে এ নিয়ে বলব৷’