Main Menu

নাসিরনগরের পল্লীতে ব্যতিক্রমধর্মী শুঁটকি মেলা

+100%-

নিজস্ব প্রতিনিধি :: মূদ্রার প্রচলন হওয়ার আগে পৃথিবীর প্রায় সব স্থানেই ‘পণ্যের বিনিময়ে পণ্য’ প্রথা প্রচলিত ছিলো। এ কথা জানা যায় ইতিহাসের পাতায়। কিন্তু এমনই এক ব্যতিক্রমধর্মী বিনিময় প্রথা দেখতে পাওয়া যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় এক শুটকি মেলায়!

নাসিরনগর উপজেলার কুলিকুণ্ডা গ্রামে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে প্রতি বছর বসে ব্যতিক্রমধর্মী এ শুটকির মেলা। বাংলা নববর্ষের দ্বিতীয় দিনে স্থানীয় জেলেরা তাদের পূর্ব-পুরুষদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এ মেলার আয়োজন করে।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আমদানি করা শুটকি এ মেলায় বিনিময় প্রথায় বিক্রি হয়। স্থানীয় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্যের বিনিময়ে মেলা থেকে শুটকি কিনে নেন। বহু বছর থেকে প্রচলিত এ মেলা নিয়মিতভাবে প্রতিবছর বৈশাখের দ্বিতীয় দিনে অনুষ্ঠিত হয়।

স্থানীয়রা জানায়, এ মেলা আয়োজনের কোনো কমিটি নেই। শত বছরেরও বেশি সময় ধরে এ মেলা বসছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শুটকি ব্যবসায়ী ছাড়াও ভোজন রসিকরা আসেন এ মেলায়।  ‘পণ্যের বিনিময়ে পণ্য’- এ পদ্ধতিতে বিক্রি হয় শুটকি।

এ মেলার ইতিহাস অনেক পুরনো। উপজেলা সদরের বাসিন্দা স্থানীয় মৎস্যজীবী সমিতির নেতা তপন দাস বলেন, ছোটবেলায় বাপ-দাদার হাত ধরে এ মেলায় এসেছি। শুনেছি তারও বহু আগে থেকে এ মেলা চলে আসছে।

স্থানীয় অজিত দাস বলেন, স্থানীয় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত চাল, আলু, সরিষা, পেঁয়াজ ও রসুনসহ নানা পণ্যের বিনিময়ে শুটকি কিনে নেন। তবে, নগদ টাকার বিনিময়েও শুটকি কেনা-বেচা হয় বলে জানান তিনি।

সরেজমিনে দেখা যায়, মেলায় প্রায় দুইশর বেশি রকমের শুটকির পসরা নিয়ে বসেছেন দোকানিরা। এসব পসরায় বোয়াল, গজার, শোল, বাইন, পুঁটি ও টেংরাসহ দেশীয় মাছের তৈরি শুটকিই বেশি।

এছাড়া, মেলায় ইলিশসহ সামুদ্রিকসহ বিভিন্ন জাতের মাছের শুটকি পাওয়া যায়। শুটকি ছাড়াও ইলিশ ও কার্প জাতীয় বিভিন্ন মাছের ডিমও উঠেছে এ মেলায়।

মেলায় নাসিরনগর ও পার্শ্ববর্তী এলাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, সিলেট ও সুনামগঞ্জের ব্যবসায়ীরা শুটকি নিয়ে আসেন। এসব শুটকির আকর্ষণে দূর-দুরান্ত থেকে ভোজন রসিকরাও এ মেলায় শুটকি কিনতে আসেন।

মেলায় শুটকি কিনতে আসা ব্রাহ্মণবাড়িয়া অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক চিন্ময় ভট্টচার্য্য বলেন, গত কয়েক বছর ধরে আমি নিয়মিত এ মেলায় শুটকি কিনতে আসি। দেশীয় মাছের শুটকি ভাল পাওয়া যায় এ মেলায়।

সুনামগঞ্জ থেকে আসা শুটকি বিক্রেতা অনিল দাস বলেন, গত প্রায় ১০ বছর ধরে এ মেলায় শুটকি নিয়ে আসি। তবে এবারে ক্রেতার সমাগম কিছুটা কম হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের বাসিন্দা শুটকি বিক্রেতা ঠাকুর চাঁন দাস বলেন, ক্রেতা সমাগম কম থাকলেও এবার আমাদের বিক্রি অনেক ভালো হয়েছে।

মেলা তদারকির দায়িত্বে থাকা কুলিকুণ্ডা গ্রামের বাসিন্দা মোতালেব মাতবর জানান, এই মেলা সম্পূর্ণ ইজারা মুক্ত। দূর-দুরান্তের ব্যবসায়ীরা যাতে হয়রানির শিকার না হন, সে ব্যাপারেও কঠোর নজরদারি করা হয়। 






Shares