চলে গেলেন প্রবীণ সাংবাদিক এবিএম মূসা
দেশের প্রবীণ সাংবাদিক এবিএম মূসা আর নেই। বুধবার বেলা দেড়টার দিকে রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন। বিকেলে তার চিকিৎসায় একটি মেডিকেল বোর্ড বসার কথা ছিল। তার মৃত্যুতে সাংবাদিক মহলে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
মঙ্গলবার এবিএম মূসার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে ল্যাব এইডে হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. বরেণ চক্রবর্তী বলেছিলেন, ‘হিজ কন্ডিশন ইজ ভেরি ক্রিটিক্যাল।’
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, এবিএম মূসা অনেকদিন ধরেই অসুস্থ। গত ২৯ মার্চ তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে তাকে কয়েকবার হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণকেন্দ্রে নেয়া হয়। সোমবার রাতে অবস্থা আরো খারাপ হলে এবিএম মূসাকে চিকিৎসকেরা লাইফসাপোর্টে রাখেন।
এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ল্যাবএইড হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই সময় তার শরীরে রক্ত দেয়া হলে তা ভেঙে যেতে থাকে। সেখানে ডা. বরেণ চক্রবর্তীর তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।
এ বি এম মূসা দীর্ঘ ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতার বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন। ১৯৫০ সালে দৈনিক ইনসাফ থেকে তার সাংবাদিকতা জীবন শুরু। ওই বছর তিনি ইংরেজি দৈনিক পাকিস্তান অবজারভারে যোগ দেন। ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তিনি পাকিস্তান অবজারভারে রিপোর্টার, স্পোর্টস রিপোর্টার, বার্তা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় তৎকালীন পাকিস্তান সরকার পাকিস্তান অবজারভার বন্ধ করে দিলে তিনি সংবাদে যোগ দেন। ১৯৫৪ সালে তিনি অবজারভারে ফিরে যান।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বিবিসি, সানডে টাইমস প্রভৃতি পত্রিকার সংবাদদাতা হিসেবে তিনি রণাঙ্গন থেকে সংবাদ প্রেরণ করতেন। স্বাধীনতার পর তিনি বিটিভির মহাব্যবস্থাপক, মর্নিং নিউজের সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৮ সালে এ বি এম মূসা ব্যাংককে অবস্থিত জাতিসংঘের পরিবেশ কার্যক্রমের (এসকাপ) এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক পদে যোগ দেন।
দেশে ফিরে তিনি ১৯৮১ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক এবং ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার মহাব্যবস্থাপক ও প্রধান সম্পাদক ছিলেন। ২০০৪ সালে তিনি কিছু দিন দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। সম্পাদকের দায়িত্ব থেকে অবসর নেয়ার পর তিনি বিভিন্ন পত্রিকায় কলাম এবং টক শোতে নিয়মিত কথা বলতেন। সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ মতামতের কারণে তিনি ছিলেন টক শোর অতি জনপ্রিয় মুখ।