নবীনগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজ প্রতিরোধ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত
নিজস্ব প্রতিবেদক :: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলা সদরে ‘চিরকুট’ পাঠিয়ে বিভিন্ন বাড়িতে চাঁদা দাবি ও আগুন লাগানোর ঘটনা আশংকাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গতকাল মঙ্গলবার (০৮.০৪.১৪) উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে দলমত নির্বিশেষে সব পেশার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এক ‘বিশেষ আইন শৃংখলা সভা’ অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় গত দুই মাসেরও বেশী সময় ধরে চলা পৌর শহরের বিভিন্ন বাড়িতে অসংখ্য ‘চিরকুট’ পাঠিয়ে চাঁদা দাবি ও একাধিক বাড়িতে দুর্বৃত্তদের আগুন দেওয়ার ঘটনা প্রতিরোধে পৌর এলাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে জন প্রতিনিধিদের নের্তৃত্বে ‘সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজ প্রতিরোধ কমিটি’ গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাশাপাশি নবীনগর বাজারসহ প্রতিটি পাড়া মহল্লায় নিজস্ব অর্থায়ানে রাত্রিকালীন পাহাড়া জোরদার করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু শাহেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে এতে উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউল হক সরকার, নব নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন সরকার, সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ আবুল কালাম, আইনজীবি সমিতির সভাপতি সুজিত কুমার দেব, নবীনগর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মেজবাহ উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামীলীগের যুুগ্ম আহবায়ক বোরহানউদ্দিন আহমেদ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিকবৃন্দসহ বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য, বিশেষ এই আইন শৃংখলা সভা শেষ হওয়ার মাত্র ৮ ঘন্টার ব্যবধানে দুর্বৃত্তরা শহরের আদালত সড়কের বিশিষ্ট এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর কাছে মোবাইল ফোনে ২৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে অন্যন্যদের মতো একই কায়দায় ওই স্বর্ণ ব্যবসায়ীরও দোকান ও বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকী দেয়।
পত্রিকায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই হিন্দু ব্যবসায়ী বলেন,‘মঙ্গলবার রাত পৌনে নয়টার দিকে মোবাইলে ফোন করে এসব মিটিংয়ে কোন লাভ হবেনা উল্লেখ করে আমার কাছে ২৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। অন্যথায় অন্যদের মতো আমার দোকান ও বাড়িঘর পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকী দেওয়া হয়।’
ওই বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কান্নাজড়িত কন্ঠে এ প্রতিনিধিকে বলেন,‘দাদা, পত্রিকায় আমার নাম প্রকাশিত হলে, ওরা হয়তো আমার ছেলেকে মেরে ফেলবে। নতুবা নবীনগর ছেড়ে আমাদের অন্যত্র চলে যেতে হবে।’ (বক্তব্য রেকর্ডকৃত)।
ঘটনাটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু শাহেদ চৌধুরীকে অবগত করে তাঁর কাছে রাত নয়টার দিকে দুর্বৃত্তদের মোবাইল ফোন নম্বরটি দেওয়া হলে, তিনি বলেন,‘এটিতো দেখছি ওই একই নম্বর। যে নম্বর থেকে ইতিমধ্যে ফোন করে চাঁদা চেয়ে না পেয়ে বিভিন্ন বাড়িতে আগুন দিচ্ছে দুর্বৃত্তরা।’
তিনি নিজেও বারবার ঘটে চলা এসব অনাকাংখিত ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন,‘নম্বরটি পুলিশের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে র্যাবের সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মর্তার সঙ্গেও আমার কথা হয়েছে।’
সহকারি পুলিশ সুপার (নবীনগর সার্কেল) মোহাম্মদ শফিউর রহমান আজ বুধবার বলেন,‘পুলিশ এসব প্রতিরোধে আন্তরিকভাবে কাজ করছে। দুর্বৃত্তদের ফোন নম্বরগুলোও পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে এসব ঘটনা প্রতিরোধে পুলিশী টহল বাড়ানোসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।’
প্রসংগত, গত দুই মাসে উপজেলা সদরের প্রদীপ সেনগুপ্ত, রতন বনিক, সঞ্জিত সাহা, অ্যামেরিকা প্রবাসি বিপ্লব দেব, অঅবু তাহেরসহ একাধিক বাড়িতে একই কায়দায় ‘চিরকুট’ পাঠিয়ে দাবিকৃত টাকা না পেয়ে আগুন দেয় দুর্বত্তরা। এতে স্থানীয় জনমনে আতংক দেখা দেয়। এ নিয়ে বিগত দিনে বিভিন্ন পত্রিকায় একাধিক সংবাদও ছাপা হয়।