একক প্রার্থী নিয়ে ঘাম ঝরছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির। এখনই সিদ্ধান্ত হচ্ছে না নূরে আলমের ব্যাপারে
নিজস্ব প্রতিবেদক : স্থানীয় পযায়ের রাজনীতিতে দলীয় কোন্দলের কারণে উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে জেলা বিএনপি।
দলীয় প্রার্থী নিয়ে বিএনপি নেতারা তৃণমূলের নেতা কর্মীদের তোপের মুখে। সেই সঙ্গে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যেও দ্বিধাবোধ সৃষ্টি হচ্ছে।
গত ৫মার্চ পৌর বিএনপির এক শীর্ষ নেতার বাসায় হাজী জাহাঙ্গীরকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয়। দলের শীর্ষ নেতাদের হাজী জাহাঙ্গীরের পদে প্রচারণা চালাতে দেখা গেলেও তৃণমূলের কর্মীদের তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না। জেলা বিএনপির সভাপতির বাসায় দফায় দফায় বৈঠক হচ্ছে কর্মীদের সমর্থন আদায়ের জন্য। বৈঠকে দৃশ্যত সবাই অঙ্গীকারও করছে দলের প্রার্থী জাহাঙ্গীরের সমর্থনে কাজ করার জন্য। কিন্তু মাঠ পর্যায়ের নেতা কর্মীরা তেমন কোন জোড়ালো ভূমিকা রাখছেন না।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হওয়ায় নূরে আলম সিদ্দিকী হতাশ হয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে প্রার্থীতা প্রত্যাহার না করে দলের নেতাদের সিদ্ধান্ত পূণঃ বিবেচনার আহবান জনান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক ব্যবসায়ী সমর্থক জানান, বিএনপি কোন কর্মকান্ডে বিএনপির প্রার্থীকে দেখা যায়নি। প্রার্থী নির্বাচনে ভূল করায় স্থানীয় অনেক বিএনপি সমর্থক বিএনপি তথা ১৯ দলকে প্রত্যাহার করেছেন।
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীতা চাওয়া যুবদলের আহবায়ক মনির হোসেন জানান, জেলা বিএনপি মনোনীত প্রার্থী নিয়ে মাঠ পর্যায়ে হতাশা বিরাজ করেছে । ৩১ মার্চ এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে সাধরণ ভোটার ও বিএনপি তৃণমূল নেতাকর্মীদের চাওয়া পাওয়া কে মূল্যায়ন করা হবে, এমনই প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু আমরা সেই সুযোগটি কাজে লাগাতে পারিনি।
এদিকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করতে যাওয়া প্রার্থী নূরে আলম সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে এখনই কোন চুড়ান্ত শাস্তি আরোপ করতে যাচ্ছে না বিএনপি। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক খোকন জনান, যারা এখনও দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নেননি, আমরা আশা করছি অচিরেই তাদের ক্ষোভ প্রশমিত হবে এবং দলের মূল ধারার প্রার্থীর সাথে কাজ করবেন। মার্কা পাওয়ার পরেও কিভাবে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করবে জানতে চাইলে তিনি জানান, এটা কোন সমস্যা না, সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে এটা ঘোষণা দিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
বিএনপি সমর্থক ভোটারদের এ বারের নির্বাচনে সঠিক প্রার্থীকে ভোট দিতে দারুণ বেগ পেতে হবে। গত ৫ বৎসর যাবৎ উপজেলা পরিষদে ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা নূরে আলম সিদ্দিকী মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক গণসংযোগ করেছেন এবং উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে তার একটি ভোট ব্যাংক বা বলয় গড়ে উঠেছে।
নূরে আলম সিদ্দিকী শেষ পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দিতায় থাকলে জেলা বিএনপি মনোনীত প্রার্থীকে প্রচন্ড বেগ পেতে হবে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে।
বিএনপির প্রার্থী সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্য এবং একজন সফল ব্যবসায়ী হলেও সাধারণ মানুষের সাথে তার গণসংযোগ অনেক কম। নির্বাচনে প্রার্থীদের সাধারণ মানুষের সাথে যেভাবে মিশতে হয়, তা থেকে অনেকটা পিছিয়ে বিএনপির এই প্রার্থী, বিষয়টি নিয়ে খোদ বিএনপির শীর্ষ মহলে আলোচনা হয়েছে।
এবারের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীকে পাশ করাতে সবচেয়ে বেশী ভূমিকা রাখতে হবে জেলা বিএনপি সহ-সভাপতি, সদর উপজেলা সভাপতি ইন্জিঃ খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামলকে। খালেদ হোসেন মাহবুবের বাড়ি উপজেলার দক্ষিণ এলাকায়। এবারের নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দিতাকারীর বাড়িও দক্ষিণ এলাকায়। এবারের নির্বাচনটি শ্যামলের জন্য টেস্ট কেস। উপজেলা আওয়মীলীগ প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ি দক্ষিণ এলাকায় হওয়ায় এ এলাকায় শ্যামল দলের পক্ষে কতটুকু ভোট টানতে পারেন সেটাই বিবেচ্য বিষয়। উত্তর পশ্চিম অঞ্চলে একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থী থাকায় আওয়ামীলীগ প্রার্থীর চেষ্টা থাকবে দক্ষিণ এলাকায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করতে। গত সাংসদ নির্বাচনেও বিএনপি দক্ষিণ এলাকা থেকে আশানুরুপ ভোট লাভ করতে পারেনি। এবারের নির্বাচনে শ্যামল আপ্রাণ চেষ্টা করবে এ অঞ্চলে একটি সম্মানজনক ভোট পাবার জন্য।
বিএনপি প্রার্থী হাজী জাহাঙ্গীরকে পাশ করিয়ে আনতে জেলা বিএনপিকে প্রচুর ঘাম ঝরাতে হবে। তার উপর দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা যদি আপোষ না করে তাহলে নির্বাচনী বৈতরনী পার হওয়া অনেক কঠিন হবে।
জেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দকে জনগণের কাছে ভোট চাওয়ার পূর্বে দলের আন্তঃকোন্দল নিরসনে প্রথমে কাজ করতে হবে। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জেলা বিএনপি, যুবদল এবং ছাত্রদলের অনেক নেতা কর্মীকে প্রকাশ্যেই দেখা যাচ্ছে নূরে আলমের পক্ষে কাজ করতে। এ ধারাটি আর কিছুদিন চললে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে বিএনপির প্রার্থীতা নিয়ে সন্দেহ আরো ঘূণীভূত হবে, যা দলের কোন অংশের জন্যই মঙ্গলকর নয়।।