Main Menu

অবশেষে জেলে ডিবি’র এ এস আই জাহাঙ্গীর

+100%-

শামীম উন বাছির: অবশেষে জেলে যেতেই হলো ব্রাহ্মণবাড়িয়া গোয়েন্দা পুলিশের সাবেক এ এস আই মো: জাহাঙ্গীর আলমকে। এক তরুনীকে যৌন নিপিড়নের মামলায় গতকাল রোববার জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো: জালাল উদ্দিন তার জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরনের নির্দেশ দেন।
শহরের ভাদুঘরে গত ৯ ই জুলাই রাতে এক তরুনীকে যৌন নিপীড়ন করার ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে গত ১৬ ই জুলাই এএসআই মো: জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে মামলা হয়। আদালত বাদীর এজাহার গ্রহন করে এর বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ সফিউল আজম গত ৩ রা সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে তদন্ত সম্পন্ন করেন।এই তদন্তে এ এস আই জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। এরপর গতকাল সে আদালতে জামিনের জন্যে হাজির হলে আদালত তার জামিন নাকচ করে জেল হাজতে প্রেরন করার নির্দেশ দেন। এদিকে জাহাঙ্গীরকে কারাগারে প্রেরনের আদেশ দেয়ার পর পুলিশ তাকে কোর্ট হাজতের ভেতরে না নিয়ে হাজতের সামনে চেয়ারে বসিয়ে রাখে। সেখান থেকে সিএনজি অটোরিকসা করে গোপনে জেল হাজতে নিয়ে যায়। এই মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবি শেখ নাজমুল সাকিব রিয়াদ জানান,জাহাঙ্গীর কয়েকদিন আগে ৬ লাখ টাকায় ঘটনাটি মিটমাট করে ফেলে। এরপর গতকাল আপোষের শর্তে আদালতের কাছে জামিন চাইতে আসে। এর আগে গত ৩ রা নবেম্বর আদালত জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করে। এরপর উচ্চ আদালত থেকে ৮ সপ্তাহের জামিনে আসে। উল্লেখ্য, ব্রাহ্মণবাড়িয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে গত ১৬ ই জুলাই এএসআই মো: জাহাঙ্গীর আলমকে আসামী করে মামলাটি করেন নির্যাতনের শিকার আখি আক্তারের মা মোছাম্মৎ পারুল বেগম । মামলার আর্জিতে তিনি অভিযোগ করেন-আসামী এএসআই মো: জাহাঙ্গীর আলম পর নারী লোভী লোক। গত ৯ ই জুলাই রাত সাড়ে ১১ টায় সে আরো ২ জনকে নিয়ে ভাদুঘরে তাদের বাসায় এসে দরজা ধাক্কাতে থাকে। ঘটনার সময় বাদীনী পারুল বেগম তার চিকিৎসার জন্যে ঢাকায় ছিলেন। তাদের দরজা ধাক্কানোর বিষয়টি মোবাইল ফোনে আখি  জানানোর মুহুর্তেই  জাহাঙ্গীর ও আরো দুজন জোরপূর্বক ঘরে প্রবেশ করে। তাদের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম আখিকে ঝাপটে ধরে। এরপর তার শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে,গোপনাঙ্গে এবং সমস্ত শরীরে অনবরত হাত বুলাতে থাকে। জামার নিচ দিয়ে বুকে,পেটে হাত চালানোর সময় তার কবল থেকে বাচার জন্যে চেষ্টা করলে জাহাঙ্গীর তাকে চরথাপ্পর মারে। এসময় আমার ছোট ছেলে আমার মেয়েকে বাচাতে আসলে জাহাঙ্গীর তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এই ফাকে আমার মেয়ে আখি দৌড়ে বাড়ির ছাদে উঠে যায়। জাহাঙ্গীরও তার পিছু পিছু ছাদে গিয়ে আবার আখিকে জাবরে ধরে ধর্ষন করতে উদ্ব্যত হয়। আখির প্রানপন আত্বরক্ষার চেষ্টার মুখে  জাহাঙ্গীর একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে তাকে ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এতে আখি কোমরে ভাঙাসহ সারা শরীরে জখম হয়। এসময় আমার ছেলে অটোরিকসা চালক সাকিল মিয়া বাড়ি ফিরে এসে ঘটনার প্রতিবাদ করতে থাকলে এএসআই জাহাঙ্গীর তাকে আটক করে নিয়ে যায়। পরে ৫ টি ফেন্সিডিল ও ১০ টি ইয়াবা ট্যাবলেট দিয়ে তার বিরুদ্ধে মাদকের মামলা দেয়।
আদালত বাদীর এজাহার গ্রহন করে এর বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ সফিউল আজম গত ৩ রা সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে তদন্ত সম্পন্ন করেন। তিনি বাদীসহ ৪ জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য গ্রহন করেন।তদন্ত প্রতিবেদনে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ সফিউল আজম তার মতামত ও সিদ্ধান্তে বলেছেন-‘সার্বিক পর্যালোচনায় নালিশের দরখাস্ত ,স্বাক্ষীগনের জবানবন্দী দৃষ্টে প্রতীয়মান হয় যে,দরখাস্তে বর্নিত আসামী জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৯(৪)(খ)ধারার অপরাধ প্রাথমিকভাবে সত্য বলে প্রতীয়মান হয়’। পরবর্তী কার্যক্রম এর জন্যে ৫ ই সেপ্টেম্বর এই তদন্ত প্রতিবেদন  স্বাক্ষীদের জবানবন্দীসহ মূল নথি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে প্রেরন করা হয়। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল তদন্ত রিপোর্ট গ্রহন করেন এবং এ এস আই জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০(সংশোধিত ২০০৩) এর ৯(৪)(খ)ধারার অপরাধ আমলে নিয়ে সমন জারী করেন।
আদালত প্রথমে ৭ দিনের মধ্যে এ মামলার অভিযোগের তদন্তের জন্যে র‌্যাব-৯ কে নির্দেশ দিয়েছিলেন। র‌্যাব-৯ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের নির্দেশ এবং র‌্যাব হেড কোয়াটারের মাধ্যম ব্যতিত র‌্যাব তদন্ত করতে পারেনা বলে আদালতকে অবহিত করলে আদালত পরবর্তীতে বিচার বিভাগীয় তদন্তের জন্যে নির্দেশ দেন। বিচার বিভাগীয় তদন্তকালে বিচারক মামলার বাদী পারুল আক্তার,স্বাক্ষী আখি আক্তার,শাকিল ও সাকিবের বক্তব্য শুনেন।
পুলিশের আলোচিত এই এ এস আই বর্তমানে চট্টগ্রামে কর্মরত। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কর্মরত থাকাকালে জাহাঙ্গীরের অপকর্ম ছিল লাগামহীন। জেলার পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাদের আশকারায় সে হয়ে উঠে বেপড়োয়া। সবশেষে তার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠার পরও পুলিশের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।






Shares