Main Menu

২৫ ফেব্রুয়ারি টঙ্গী-ভৈরববাজার ডাবল লাইন উদ্ভোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

+100%-

034139Pic-21ডেস্ক ২৪:: ‘টঙ্গী-ভৈরববাজার ডাবল লাইন প্রকল্প চালু হলে এ পথে সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার গতিবেগে ট্রেন চলাচল করবে। ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটেও যাত্রীরা অনেক কম সময়ে ট্রেনে চলাচল করতে পারবেন। একইভাবে ট্রেন দুর্ঘটনা কমবে’ রেলওয়ে সূত্রে এমনই জানা যায়।

বাংলাদেশ রেলওয়ের মেগা প্রকল্প টঙ্গী-ভৈরববাজার ৬৪ কিলোমিটার ডাবল লাইন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার এ প্রকল্পের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করবেন।

প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী সাগর কৃষ্ণ চক্রবর্তী ও বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী সুকুমার ভৌমিক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে দুই হাজার ২১২.৬১ কোটি টাকা। এর মধ্যে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এক হাজার ৮২৩.০৯ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ সরকার ৩৮৯.৫২ কোটি টাকা অর্থায়ন করেছে।

সুকুমার ভৌমিক বলেন, ‘ডাবল লাইনের ফলে এ রুটে (ঢাকা-ভৈরববাজার) চলাচলকারী কোনো ট্রেন অন্য ট্রেনের জন্য বসে থাকবে না। বিশেষ করে কোনো কারণে ট্রেন দুর্ঘটনার শিকার হলে লাইন ক্লিয়ার না হওয়া পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকত। সিঙ্গেল লাইন থেকে এটি ডাবল লাইন হওয়ায় এখন থেকে এ লাইনে দুর্ঘটনাজনিত কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে না। সবকিছু স্বাভাবিক থাকবে।’

রেলের এ প্রধান প্রকৌশলী বলেন, ‘টঙ্গী-ভৈরববাজার ডাবল লাইন চালুর ফলে এ রুটে চলাচলকারী ট্রেনের যাত্রাসময় অনেক কমে যাচ্ছে। সুবর্ণ এক্সপ্রেসের যাত্রাসময় প্রায় এক ঘণ্টা ১০ মিনিট এবং কনটেইনার ট্রেনের সর্বোচ্চ ৬ ঘণ্টা কমে যাবে। এ ছাড়া অন্যান্য ট্রেন ২০-৪০ মিনিট পর্যন্ত যাত্রাসময় কমবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টার দিকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে টঙ্গী-ভৈরববাজার ডাবল লাইনের উদ্বোধন ঘোষণা করবেন বলে জানান তিনি।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের নির্মাণকাজ বিদায়ী বছরের নভেম্বরে শেষ হয়। এরপর নতুন লাইনে ৩১টি মালবাহী ট্রেন ও তিনটি যাত্রীবাহী ট্রেন ‘ট্রায়াল রান’ হিসেবে চালানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৬ ডিসেম্বর গভর্নমেন্স ইন্সপেক্টর অব বাংলাদেশ রেলওয়ের (জিআইবিআর) প্রতিনিধিদল প্রকল্পটি সরেজমিন পরিদর্শন করেন। জিআইবিআর রিপোর্ট ইতিবাচক হওয়ায় গত ৭ জানুয়ারি অনানুষ্ঠানিকভাবে তথা পরীক্ষামূলকভাবে টঙ্গী-ভৈরববাজার ডাবল লাইনটি চালু করা হয়।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলওয়ে করিডর বাংলাদেশ রেলওয়ে নেটওয়ার্কের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রুট। বাংলাদেশের সীমান্তে রয়েছে ভারত ও মিয়ানমার এবং ল্যান্ডলক্ড দেশ ভুটান ও নেপাল এ দুটি দেশের লাগোয়া। দেশের অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক রেলওয়ে পরিবহনের চাহিদা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেলেও ঢাকা-চট্টগ্রাম সিঙ্গেল লাইন হওয়ায় অধিক সংখ্যক ট্রেন চালু করা সম্ভবপর হচ্ছে না। টঙ্গী-ভৈরববাজার ডাবল লাইনটি চালু হওয়ায় এ পথ অনেকটাই এগিয়ে গেল।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলওয়ে করিডরের মোট ৩২০.৭৯ কিলোমিটারের মধ্যে ঢাকা-টঙ্গী অংশে ২২.৯৪ কিলোমিটার, আশুগঞ্জ-আখাউড়া অংশে ২৫.৯১ কিলোমিটার এবং চিনকি আস্তানা-চট্টগ্রাম অংশে ৬৮.৮২ কিলোমিটার অর্থাৎ ১১৭.৬৭ কিলোমিটার ডাবল লাইন বিদ্যমান রয়েছে। ইতিমধ্যে জাইকার অর্থায়নে লাকসাম-চিনকি আস্তা ৬০.৭৮ কিলোমিটার ডাবল লাইনও চালু হয়েছে। টঙ্গী-ভৈরববাজার ডাবল লাইনটি চালু করার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলওয়ে করিডরে আর মাত্র ৭৮.৩৪ কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইন অবশিষ্ট থাকবে। আর এ অংশটি ডাবল লাইনে উন্নীত করতে ভারতীয় ডলার ক্রেডিট লাইনের অর্থায়নে চলমান অ্যাপ্রোচসহ দ্বিতীয় ভৈরব ও দ্বিতীয় তিতাস রেলসেতু (৬.৭৮ কি.মি.) নির্মাণকাজ এগিয়ে (৬১.৪০ শতাংশ বাস্তবায়ন) চলছে। চলতি বছরের মধ্যেই এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।

রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র আরও জানায়, এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে দুই হাজার ২১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘সিগন্যালিংসহ টঙ্গী থেকে ভৈরব পর্যন্ত ৬৪ কিলোমিটার ডাবল লাইন নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০০৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর একনেকে অনুমোদিত হয়। এ প্রকল্পের ডিজাইন সম্পন্নের পর ২০১০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর দরপত্র আহ্বান করা হয় এবং ২০১১ সালের ২৭ জুলাই চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড (সিআরিইস)-এর সঙ্গে এ প্রকল্প নির্মাণে চুক্তি সই হয়। ২০১১ সালের ২ নভেম্বর এ প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৪ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও প্রকল্পটির নির্মাণকাজের ধীরগতিতে বাস্তবায়ন সময় পিছিয়ে দেওয়া হয়। প্রকল্পের মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চীনের সিআরএসসি। এ ছাড়া সাব-কন্ট্রাকটর হিসেবে কোরিয়ার এলএসআইএস এবং দেশি সংস্থা ম্যাক্স ও তমা কনসোর্টিয়াম যৌথভাবে কাজ করে। প্রকল্পের অধীনে ১১টি স্টেশন ভবন ও দুটি সিগন্যালিং ইকুইপমেন্ট ভবন, ৭১টি ব্রিজ-কালভার্ট, ১২টি নতুন স্টেশন, ২৩টি নতুন প্ল্যাটফর্ম ও শেড নির্মাণ, ১১টি স্টেশনের সিগন্যালিং ব্যবস্থা আধুনিকায়ন, পাঁচটি লেভেল ক্রসিং এবং ১১টি পুরাতন লেভেল ক্রসিংয়ের উন্নয়ন করা হয়। ২০১৫ সালের ২৭ নভেম্বর টঙ্গী-ভৈরববাজার ডাবল লাইনে ট্রেনের ট্রায়াল রান সফলভাবে সম্পন্ন হয়।

টঙ্গী-ভৈরববাজার ডাবল লাইন প্রকল্পের পরিচালক সাগর কৃষ্ণ চক্রবর্তী বলেন, নতুন এ ডাবল লাইন চালু হলে সময় কমে আসার পাশাপাশি ঢাকা থেকে ভৈরব পর্যন্ত ক্রসিং ছাড়াই ট্রেন চলাচল করবে। ফলে চট্টগ্রাম-ঢাকা, ঢাকা-সিলেট ও কিশোরগঞ্জসহ কয়েকটি রুটের রেলযাত্রীরা অপেক্ষাকৃত কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন।






Shares