সৌদি আরবে খাবার সঙ্কটে শতাধিক বাংলাদেশী
বিবিসি বাংলা:: সৌদি আরবে আটকা পড়া শ্রমিকদের একজন ফরিদপুরের মিজানুর রহমান। আঠারো বছর ধরে তিনি সেখানে কাজ করছেন। কিন্তু হঠাৎ করে কাজ হারানোয় এবার তার দিন কাটছে কোনও রকমে একবেলা খেয়ে।
তিনি টেলিফোনে বিবিসি বাংলাকে বলেন, “এখন একবেলা খানা খাই। তিন বেলার খাবারের জায়গায় দিনের মধ্যে একবেলা খাই। ভারতের কিছু বড় বড় কোম্পানি আছে তারা সাহায্য করছে। তারা মূলত ভারতীয়দের সাহায্য করছে, সেখান থেকে আমরাও কিছু কিছু পাই”।
বাংলাদেশের অভিবাসী শ্রমিকদের একটি বড় অংশই কাজ করে সৌদি আরবে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম ক্রমাগত পড়তে থাকায় সৌদিতে বহু কোম্পানিতে কাজ বন্ধ হতে শুরু করেছে গত বছর থেকেই।
সবচেয়ে বেশি শোচনীয় অবস্থা নির্মাণ সংস্থাগুলোর। অনেক প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের হঠাৎ করেই ছাঁটাই করা হয়েছে। অনেকে মাসের পর মাসে বেতন পাচ্ছেন না, শ্রমিকদের জন্য নির্মিত শিবিরগুলোতে তাদের দিন কাটছে প্রায় অভূক্ত অবস্থায়।
মিজানুর রহমান জানান, যেখানে তিনি কাজ করতেন সেখানে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ফিলিপিন্স এবং শ্রীলংকার শ্রমিকরা কাজ করতো। একবছর আগে কোম্পানির নিবন্ধন বাতিল হয়ে যায়। এরপর থেকে বেতন বন্ধ করে দেয়া হয়।
গত চারমাস ধরে খাওয়াও বন্ধ করে দেয়া হয় । ইসলামী দাওয়াত সেন্টার নামে একটি প্রতিষ্ঠান রমজান মাসে খাবার দিয়েছিল। এরপর আরেকটি কোম্পানি কিছু চাল-ডাল দিয়ে যায়। পাকিস্তান এবং ভারতীয় কোম্পানি সাহায্য করেছে।
“এখন করুণ অবস্থা কারও কাছে এক টাকাও নাই” বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মিজানুর রহমান অভিযোগ করেন, “দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন, কিন্তু তারা ব্যবস্থা নিবেন কিভাবে? দূতাবাসের কোনও কর্মকর্তা এসে দেখেন নি আমারা কি অবস্থায় আছি। খেয়ে আছি না না খেযে আছি এসে কেউ দেখে নাই। শুধু বলে আসবো আসবো”।
তিনি আরও বলেন, কারও আকামা নাই। আকামা ছাড়া গেটের বাইরে যাওয়া যায় না। গেটের বাইরে গেলেই পুলিশ আক্রমণ করে। একবার পুলিশ ধরলেই ২০হাজার টাকা জরিমানা করে।
“এখন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোনও মন্ত্রী বা বড় কোন বড় মানুষ যদি আমাদের পাশে দাঁড়ায় তাহলে হয়তো একটা কিছু হবে। যদি কোনও প্রতিষ্ঠানে বদলি হয়ে কাজ করতে পারি, তা বদলি হতেও ৭০/৮০ হাজার টাকা লাগে। মানুষ খেতেই পায় না এত টাকা কোথা থেকে দিব?”
আরেকজন বাংলাদেশী শ্রমিক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা এলাকার আব্দুল করিম জানান, ১৪০ জনেরও বেশি বাংলাদেশী শ্রমিক এখন এ অবস্থায় আছেন।
কর্তৃপক্ষ বলছে, এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে আসা শ্রমিক, যারা সে দেশে বেকার রয়েছেন, তারা যাতে অন্য চাকরিতে ঢুকতে পারেন বা দেশ ত্যাগ করতে পারেন সে লক্ষ্যে বিধিনিষেধ শিথিল করা হবে।
ভারতীয় শ্রমিকদের মধ্যে প্রায় আট হাজার বেকার হয়ে পড়েছেন। তবে তাদের ভবিষ্যত নিয়ে কথা বলতে সেদেশের মন্ত্রী পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ভিকে সিং এখন জেদ্দায় রয়েছেন। পাকিস্তানেরও কয়েকশো শ্রমিক এখন সেখানে কর্মহীন।