সিরিয়া পালানোর পথে চার বাংলাদেশী ধৃত অসমে



ঢাকার গুলশানে আর্টিজান বেকারিতে হামলার ঘটনার ষড়যন্ত্রকারী হিসাবে চার বাংলাদেশি যুবককে গ্রেপ্তার করেছে অসম পুলিশ। ধৃতরা ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বাংলাদেশ শাখা জেএমবি’র (নিউ) সঙ্গে যুক্ত। তারা হামলাকারীদের আশ্রয়ের ব্যবস্থাও করেছিল বলে জানা গিয়েছে। ভারতীয় পাসপোর্ট জোগাড় করে আইএস-এর এই সহমর্মীরা সিরিয়া পালানোর ছক কষেছিল। সহযোগী এক দেশীয় যুবকের মৃতদেহ অসমের করিমগঞ্জের নীলমবাজার থানার বড়গুল-চামলা গ্রামে ফেলে পালিয়ে যাওয়ার সময় মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে এই বাংলাদেশিদের।
তদন্তে জানা গিয়েছে, চোরাপথে মেঘালয়ের উমকিয়াং সীমান্ত পেরিয়ে মাসখানেক আগে ওই পাঁচজন এদেশে ঢুকেছিল। করিমগঞ্জের কালীগঞ্জ এলাকায় ফয়জুর রহমান নামে এক ব্যক্তির বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকছিল তারা। গোয়েন্দারা বলছেন, করিমগঞ্জের বিনোদিনী গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে নাগরিকত্বের নথিপত্র জোগাড় করে এই জঙ্গিরা ভারতীয় পাসপোর্টের জন্য আবেদনও করেছিল। এমনকী ভোটার পরিচয়পত্র ও আধার কার্ডও বানিয়ে নিয়েছিল তারা। ধৃতদের কাছ থেকে এইসব নথিপত্র ছাড়াও একটি ভারতীয় পাসপোর্টও মিলেছে। সেটি জনৈক সাহাবুদ্দিনের। তাদের জেরা করে গোয়েন্দারা জেনেছেন, জেএমবি (নিউ) সংগঠনে তামিম আহমেদ চৌধুরি ও মহম্মদ সুলেমানের পরই স্থান এই সাহাবুদ্দিনের। গুলশান হামলার সঙ্গে যুক্ত সাহাবুদ্দিন ওই পাসপোর্ট নিয়ে দুবাই হয়ে সিরিয়া যাওয়ার মতলবে ছিল। করিমগঞ্জে আশ্রয় দেওয়া, ভাড়া নেওয়ার জন্য বাড়ি খুঁজে দেওয়া এবং ভারতীয় নথিপত্র জোগাড়ে সাহায্য করাসহ আরও বেশ কয়েকটি অভিযোগে জঙ্গিদের সহযোগী হিসাবে দুই ভারতীয় লিংকম্যানকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হল কালীগঞ্জের শাহজাহান আহমেদ ও মইনুল হক চৌধুরি। এদের মধ্যে শাহজাহান দুবাই প্রবাসী। তার সঙ্গে আইএস-এর প্রত্যক্ষ সংস্রবের প্রমাণ পেয়েছেন গোয়েন্দারা। শাহজাহানই মেঘালয়ের মহেশখোলা থেকে গাড়িতে চাপিয়ে জঙ্গিদের করিমগঞ্জে নিয়ে এসেছিল।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি) সূত্রে জানা গিয়েছে, গুলশান হামলার কয়েকদিন পরেই মেঘালয় ও অসম সরকারকে একটি সতর্কবার্তায় জানানো হয়েছিল, বাংলাদেশ থেকে তাড়া খেয়ে জঙ্গি সংগঠনের পাঁচ সদস্য সিলেট থেকে মেঘালয়ের সাউথ গারো হিলসের উমকিয়াং সীমান্ত পেরিয়ে এদেশে ঢুকেছে। করিমগঞ্জে ধৃতরাই জঙ্গিদের সেই দলের সদস্য বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে। ধৃতরা আদালতের নির্দেশে পুলিশ হেপাজতে রয়েছে।
করিমগঞ্জের পুলিশ সুপার প্রদীপরঞ্জন কর জানিয়েছেন, পাঁচজন জঙ্গির যে দলটি মেঘালয় সীমান্ত দিয়ে এদেশে ঢুকেছিল, তারা প্রত্যেকেই সিলেটের জকিগঞ্জ থানার বাসিন্দা। সোমবার দলের এক সদস্য ইজাত আলি আচমকাই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। একটি গাড়িতে চাপিয়ে ইজাতের দেহ বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বড়গুল-চামলা গ্রামে ফেলতে গিয়ে ধরা পড়ে যায় দুই ভারতীয় লিংকম্যান এবং চার বাংলাদেশি জঙ্গি। পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, ধৃত চার বাংলাদেশি হল, সুমন আহমেদ ওরফে কামালউদ্দিন, দিলওয়ার হোসেন ওরফে জামালউদ্দিন, সাবির আহমেদ ওরফে বসিরউদ্দিন ও শাহিদ আহমেদ ওরফে হারিসউদ্দিন।