সাংবাদিকতা করতে লাগবে সনদ



ডেস্ক ২৪:: প্রকৃত সাংবাদিকদের সুরক্ষা এবং অপসাংবাদিকতা প্রতিরোধ করতে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। আর এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে বলা হচ্ছে এখন প্রত্যেক সাংবাদিকের পেশাগত সনদ থাকা বাধ্যতামূলক। সনদ ছাড়া আগামীতে কেউ সাংবাদিকতা করতে পারবে না।
হলুদ সাংবাদিকতা ও ভুয়া সাংবাদিকদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে এবং প্রকৃত সাংবাদিকরা যাতে হয়রানির শিকার না হন তা নিশ্চিত করতে এ উদ্যোগ হাতে নিয়েছে প্রেস কাউন্সিল।
সনদের এই দাবিটি শুধু সরকারের নয়, বরং প্রকৃত সাংবাদিকরাই তুলছেন। অপসাংবাদিকতার কারণে প্রকৃত সাংবাদিকরা এখন চরম উদ্বিগ্ন। তারা চান অপসাংবাদিকতা বন্ধে সনদের ব্যবস্থা করতে। অপসাংবাদিকতা ঠেকাতে প্রেস কাউন্সিল ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে নানা পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। মূলত সাংবাদিকতার জন্য এক ধরনের নীতিমালা ঠিক করা হচ্ছে।
প্রেস কাউন্সিল সূত্রে জানা গেছে, এ বিষয়ে সুপারিশ আকারে প্রেস কাউন্সিল থেকে একটি প্রতিবেদন পাঠানো হবে তথ্য মন্ত্রণালয়ে। এরপর যাচাই-বাছাই শেষে এর ভিত্তিতে আইন তৈরি করা হবে। প্রেস কাউন্সিল যেসব সুপারিশ করতে যাচ্ছে তার মধ্যে সাংবাদিকদের সনদ নেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকছে। এছাড়া প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা লেখার কারণে মানহানির মামলা করতে হলে তা কেবল প্রেস কাউন্সিলে করার বিধানও রাখা হচ্ছে।
প্রেস কাউন্সিল সূত্রে আরো জানা যায়, সাংবাদিকদের সনদ নেওয়ার পরীক্ষার কাঠামো ও বিষয়বস্তু নিয়েও প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হচ্ছে। এতে বলা হচ্ছে, যারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়াশোনা করে সাংবাদিকতা পেশায় আসতে চাইবেন তাদের ক্ষেত্রে শুধু মৌখিক পরীক্ষা নিয়েই সনদ দেওয়া হবে।
অন্যদিকে মূলধারার সংবাদমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে পত্রিকা কিংবা টেলিভিশনের সম্পাদক তাদের অধীনে থাকা সাংবাদিকদের তালিকা প্রেস কাউন্সিলে পাঠালে সনদ ইস্যু করা হবে। কিন্তু নতুন করে সাংবাদিকতা শুরু করতে চাইলে সনদ নিতে হবে।
পেশাগত কারণে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মানহানি মামলার বিষয়টি নিয়েও সুপারিশ করা হচ্ছে। দেশের সব পর্যায়ের মানুষের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা আদালতে হলেও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কেউ মানহানির মামলা করতে চাইলে তা যেন কেবল প্রেস কাউন্সিলেই করার বিধান করা হয় সে বিষয়ে সুপারিশ করা হচ্ছে।
প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে কথা বলেছেন। তাকে একটি প্রস্তাব তৈরি করার জন্য বলা হয়েছে এবং সে অনুযায়ী প্রেস কাউন্সিল প্রতিবেদন তৈরি করছে। প্রেস কাউন্সিলের সভায় অনুমোদিত হওয়ার পর সুপারিশসহ প্রতিবেদনটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
অপসাংবাদিকতা বন্ধ করতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সনদ ছাড়া আগামীতে কেউ সাংবাদিকতা করতে পারবে না। সাংবাদিকতা করতে হলে অবশ্যই সনদ লাগবে। আর এই সনদের দাবিটি সরকারের নয় বরং প্রকৃত সাংবাদিকরাই তুলছেন।
তিনি আরও বলেন, অপসাংবাদিকতার কারণে প্রকৃত সাংবাদিকরা এখন চরম উদ্বিগ্ন। তারা চান অপসাংবাদিকতা বন্ধে সনদের ব্যবস্থা করতে। তাই প্রকৃত সাংবাদিকদের প্রেস কাউন্সিলে তালিকাভুক্ত করা এবং পরীক্ষার মাধ্যমে সনদ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সাংবাদিকতা করতে হলে কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হবে জানতে চাইলে প্রেস কাউন্সিলের সচিব শ্যামল চন্দ্র কর্মকার বলেন, এখন এসব বিষয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে মতামত নিয়ে সুপারিশ তৈরি করা হচ্ছে। প্রেস কাউন্সিলের সবার মতামত নেওয়া হবে। আলোচনার মাধ্যমে কী ধরনের সিদ্ধান্ত নিলে ত্রুটিমুক্তভাবে এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা যায় সেটা নিয়ে আমরা কাজ করছি।
প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের মহাপরিচালক শাহ আলমগীর বলেন, সাংবাদিক পরিচয়ে প্রতারণা পুরো সাংবাদিক সমাজের জন্য সম্মানহানিকর। তবে সাংবাদিকদের সনদের আওতায় আনার পরিকল্পনা আমাদেরও আছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল সনদ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে, সেই মতে তারা কাজও শুরু করেছে। আমরাও এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছি।
তিনি বলেন, যারা সাংবাদিকতা পেশায় আসতে চাইবে তাদের জন্য পরীক্ষা কিংবা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সনদের ব্যবস্থা করার চিন্তাভাবনা করছে সরকার। সনদ ছাড়া কেউ যেন সাংবাদিকতা পেশায় আসতে না পারে। আর এটা বাস্তবায়ন করা হলে হয়তো এ পেশায় অপসাংবাদিকতা অনেক কমে আসবে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের চেয়ারম্যান বলেন, অপসাংবাদিকতা বন্ধে সরকারের এ উদ্যোগ ইতিবাচক। এটা বাস্তবায়ন করা হলে অপসাংবাদিকতা অনেক কমে আসবে। যে কেউ ইচ্ছা করলেই এ পেশায় প্রবেশ করতে পারবে না। তবে এ আইন করার আগে গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনার দরকার আছে। সনদ দেওয়ার প্রক্রিয়া ও মাপকাঠি সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে হবে। তাহলেই হয়তো উদ্যোগটি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হবে।