রাজধানীর বেইলি রোডে পাঁচ দিনের পার্বত্য মেলা
ডেস্ক ২৪:: পাহাড়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি পাহাড়ি তিন জেলা রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি নিয়ে গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম। ভিন্ন সংস্কৃতি, ভিন্ন খাবার আর ভিন্ন পোশাক ও বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির কারণে লাল-সবুজের পতাকার পাহাড়ি অংশের বাসিন্দাদের প্রতি সমতলের মানুষদের আগ্রহের মাত্রাটা একটু বেশি।
বৈচিত্র্যময় জীবনযাত্রার মানুষদের জীবনযাপনের নানা অনুষঙ্গ নিয়ে বেইলি রোডে বসেছে পাঁচদিনের পার্বত্য মেলা। খাবার, হাতে তৈরি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি, শোপিস ইত্যাদির সমাহারে মনে হয় যেন একখণ্ড পার্বত্য চট্টগ্রাম তুলে আনা হয়েছে বেইলি রোডের অফিসার্স ক্লাব সংলগ্ন পশ্চিম পার্শ্বের খালি মাঠে।
পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে গতকাল রোববার বিকেলে রাজধানীর বেইলি রোডের অফিসার্স ক্লাবের পশ্চিম পাশের মাঠে শান্তির পায়রা ও নানা রঙের বেলুন উড়িয়ে এই মেলার উদ্বোধন করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।উদ্বোধন শেষে মেলা পরিদর্শন করেন আগত অথিতিবৃন্দ।
চাদর, মাফলার, ফতুয়া, পাহাড়ি খাবার ও হাতে তৈরি নানা দ্রব্যাদির ৬৫টি স্টলের সমাহারে সাজানো হয়েছে এই মেলা। চাকমা, মগ, মারমা আদিবাসীদের সাজানো স্টলের নান্দনিকতায় মেলার সমগ্র প্রান্তরে ফুটে উঠেছে পাহাড়ি বৈচিত্র্য। মেলার বিশেষ খাবার হিসেবে দর্শনার্থীদের মন কেড়েছে রাঙামাটির ভিন্ন স্বাদের বিশেষ খাবার। বাঁশের চোঙায় মুরগির মাংসের বিশেষ খাবার ‘ব্যাম্বো চিকেন’ খাবারটি মেলায় আগতদের কাছে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি করেছে। ‘গরবা’ নামের এই দোকানটির স্বত্বাধিকারী জানান, ব্যাম্বো চিকেন’ খাবারটি পাহাড়িদের অনেক প্রিয় একটি খাবার। সমতলের মানুষরা এই খাবারটির বিষয়ে খুব একটা জ্ঞাত নয় বলেই এ খাবারটির প্রতি মেলায় আগতদের আগ্রহটা বেশি লক্ষণীয় ছিল বলেও তিনি মনে করেন। জয় হ্যান্ডিক্রাফটসের স্টল সাজানো হয়েছে বিভিন্ন ধরনের পোশাকের সমাহারে। এই দোকানটিতে পাওয়া যাচ্ছে পাহাড়ি মেয়েদের কোমরের সঙ্গে সুতা বেঁধে ভিন্ন ধরনের কাজের মাধ্যমে বোনা বিশেষ চাদর। যার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০০ থেকে ১ হাজার টাকা। মেয়েদের ভিন্ন ধরনের হাত ব্যাগ পাওয়া যাচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে। এই দোকানটির স্বত্বাধিকারী তাপসী চাকমা জানান, পাহাড়ি দ্রব্যাদির প্রতি সমতলের মানুষদের আগ্রহ দেখে এই মেলা নিয়ে তারা আশাবাদী। বান্দরবান এগ্রিকালচার প্রোডাক্টসের স্টলে দেখা মিলেছে বিভিন্ন ধরনের পাহাড়ি খাবার। এই স্টলের উল্লেখযোগ্য খাবারের মধ্যে রয়েছে টক ফল, পাহাড়ি কলা, পাহাড়ি আলু, কাঁটাফুল, মাটির কচু ইত্যাদি। দোকানি ভানদ্রেম লাল জানান, প্রথম দিনে বিক্রি তেমন একটা না হলেও পরবর্তী দিনগুলোতে তাদের বিক্রি বাড়বে। নান্দনিক সৌন্দর্য সংবলিত হস্তশিল্পের পসরা সাজিয়ে বসেছে থং ছি মিং নামের স্টল। বাঁশের তৈরি গøাস, ছাঁইদানি, ভিজিটিং কার্ড রাখার বক্স, কলমদানি, টিস্যু বক্স, বাঁশের ট্রে, টব, বাঁশের লাইট বক্স ছাড়াও বিভিন্ন শোপিসের পসরা সাজিয়ে বসা এই দোকানটির স্বত্বাধিকারি অং সাই মারমা জানান বাঁশের তৈরি তাদের হস্তশিল্পের জন্য মেলায় আগতদের আগ্রহের মাত্রাটা একটু বেশি। এই স্টলটিতে বাঁশের গøাস পাওয়া যাচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়, ভিজিটিং কার্ড রাখার বক্স পাওয়া যাচ্ছে ৩০০ টাকায়, কলমদানি পাওয়ার যাচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়, টিস্যু বক্স পাওয়া যাচ্ছে ৫০০ টাকায়, বাঁশের টব পাওয়া যাচ্ছে ৪০০ টাকায় বাঁশের তৈরি ট্রে পাওয়া যাচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে, বাঁশের নৌকা পাওয়া যাচ্ছে ৫৫০ টাকায়, ছাঁইদানি পাওয়া যাচ্ছে ২০০ টাকায়। এই দোকানের অংসাই মারমা জানান, পণ্য তৈরির পর পরিবহন খরচ বেশি হওয়াতে অনিচ্ছাকৃত স্বত্ত্বেও তাদের পণ্যগুলো দাম একটু বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে। এই দোকানের ব্যতিক্রমী খাবারের মধ্যে আরো রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ধান ও চাল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে : সুরবি ধান, মরুই ধান, মালতি ধান, চেব্রেরে, বিন্নি (ঝুম) ধান, সিদিরে গেলং, কামারাং, ময়ূর, সোনামুখি, রাঙাধান, সুরি ধান, নিপিকি, লাল চড়–ই ধান, খিলং ধান ইত্যাদি। প্রতিটি দোকানের খাবার ও দ্রব্যাদিতে পাহাড়িদের কঠোর পরিশ্রম ও সহজ-সরল জীবনযাত্রার মান ফুটে উঠেছে।
প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সবশ্রেণির দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে মেলা প্রাঙ্গণ। ১৫ ডিসেম্বর শেষ হবে পাঁচদিনের এই পার্বত্য মেলা।