যে মামলায় গ্রেফতার হলেন শফিক রেহমান:: জয়কে হত্যার ষড়যন্ত্র
প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে ‘অপহরণের চক্রান্তে’ এফবিআইকে ঘুষ দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপির এক নেতার ছেলের দণ্ডের ঘটনায় বাংলাদেশ পুলিশ যে মামলাটি করেছিল, তাতেই গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে সাংবাদিক শফিক রেহমানকে। শনিবার শফিক রেহমানকে রাজধানীর ইস্কাটন থেকে গ্রেপ্তারের পর তাকে ২০১৫ সালের অগাস্ট মাসের একটি ‘রাষ্ট্রদ্রোহের’ মামলায় গ্রেপ্তারের কথা জানান ডিএমপির উপকমিশনার (মিডিয়া) মারুফ হোসেন সরদার।
ওই মামলাটির এজাহারে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের জাসাস নেতা মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনের ছেলে রিজভী আহমেদ সিজারের এফবিআইকে ঘুষ দেওয়ার কারণে দণ্ডের ঘটনায় তা করা হয়েছে। বাংলাদেশি এক রাজনীতিকের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সংরক্ষিত তথ্য পেতে এফবিআইয়ের এক সদস্যকে ঘুষ দেওয়ায় ২০১৫ সালে সিজারের কারাদণ্ড হয়।
ওই রাজনীতিকের নাম মার্কিন আদালতের নথিপত্রে উহ্য রাখা হলেও যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী জয়ই ওই বাংলাদেশের ওই রাজনীতিক বলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। জয় নিজেও ফেইসবুকে নিজের প্রাণহানির সংশয়ের কথা লেখেন।
ওই ঘটনাটি নিয়ে ২০১৫ সালের ৪ অগাস্ট ডিবির পরিদর্শক ফজলুর রহমান পল্টন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন, যা পরে মামলায় রূপান্তরিত হয়। বিএনপিঘনিষ্ঠ সাংবাদিক শফিক রেহমানকে ওই মামলায়ই গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, জাসাসের সহসভাপতি যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মোহাম্মদ উল্লাহ মামুন এবং দেশে ও দেশের বাইরে অবস্থানরত বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ জয়কে অপহরণ ও হত্যার ষড়যন্ত্র করছে।
যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপি নেতার ছেলের দণ্ডের পর আওয়ামী লীগ নেতারাও দাবি করেন, শেখ হাসিনার ছেলেকে অপহরণের ষড়যন্ত্রে তারেক রহমানসহ বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব জড়িত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা জয় যুক্তরাষ্ট্রে সিজারের বিরুদ্ধে ওই মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছিলেন বলেও জিডিতে তুলে ধরা হয়েছে।
বিএনপির ‘হাইকমান্ড’ থেকে নিজের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও জয় প্রকাশ করেছিলেন বলে এতে বলা হয়। বিষয়টি নিয়ে সংসদে আলোচনার কথাও উল্লেখ করেন ডিবি কর্মকর্তা ফজলুর।
নিউ ইয়র্কের আদালত বিএনপি নেতার ছেলে সিজারকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি ঘুষ লেনদেনে মধ্যস্থতাকারী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক জোহানেস থালেরকেও আড়াই বছরের কারাদণ্ড দেয়। তথ্য পেতে ২০১১ সালে তারা ঘুষ দিয়েছিলেন এফবিআইয়ের স্পেশাল এজেন্ট রবার্ট লাস্টিককে।
বাংলাদেশে পুলিশের করা মামলাটিতে ওই রায়ের বিবরণ দিয়ে বলা হয়েছে, “প্রাপ্ত তথ্যসমূহ পর্যালোচনা করে সন্দেহ করা হচ্ছে যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, বাংলাদেশসহ বিশ্বের যে কোনো দেশে বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্ব মাননীয় উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের জীবননাশসহ যে কোনো ধরনের ক্ষতির ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছেন এবং এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে বিএনপির হাই কমান্ড দেশ ও দেশের বাইরে থেকে অর্থায়ন করছে।”
শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তারের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি বলেছে, সরকারের বিরুদ্ধে লেখার জন্যই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।যুক্তরাজ্যের নাগরিক এই সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের ঘটনাটি ঢাকায় ব্রিটিশ হাই কমিশনে জানানো হয়েছে বলেও জানান বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
শনিবার রাত সোয়া ১০টার দিকে সজীব ওয়াজেদ তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন, ‘কত হরহামেশা আপনি এমন কোন লোককে পাবেন যে আপনাকে হত্যার চেষ্টা করছে? আমার ক্ষেত্রে, আপাতদৃষ্টিতে আমার জানার বাইরেও এটা প্রায়শই হচ্ছে। আমি অপরাধী বা কোন খারাপ মানুষও নই যে এমনটা হবে। এটা শুধু এ জন্য ঘটছে যে আমার মা বাংলাদেশের রাজনীতিতে আছেন এবং আমি সময়ে সময়ে তাঁকে সাহায্য করি। এটা এ জন্যও যে আমাদের বিরোধী দল যারা বিশেষত সহিংস অপরাধমূলক কাজে নিমজ্জিত এবং দেশের শীর্ষ মৌলবাদী দল যারা সরাসরি আইএসআইএসের সঙ্গে যুক্ত, তাদের সঙ্গে জোটভুক্ত।’