Main Menu

মালয়েশিয়ার গোপন আস্তানা থেকে নাশকতার ছক হুজি শীর্ষ নেতৃত্বের

ভারতের চিন্তা বাড়িয়ে বাংলাদেশে ফের সক্রিয় হুজি

+100%-

huji-finalবিশেষ প্রতিবেদন: ফের গোয়েন্দাদের চিন্তার কারণ হুজি৷ ভারতে বারবার নাশকতার পিছনে জড়িত এই পাকিস্তানপন্থী জঙ্গি সংগঠনটি আবারও বাংলাদেশে তার অবস্থান শক্তিশালী করছে৷ ফের হুজি সক্রিয় হওয়ায় চিন্তা বাড়ছে গোয়েন্দাদের৷ হরকত উল জেহাদ আল ইসলামি বাংলাদেশ বা হুজিবি জঙ্গি সংগঠনের অন্যতম টার্গেট বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ গোয়েন্দাদের ধারণা, হুজিবি ও জেএমবি এই দুই বাংলাদেশি জঙ্গি সংগঠন অসমের বিভিন্ন অংশে নাশকতা চালাবে৷ তাদের টার্গেট হবে পশ্চিমবঙ্গ৷ পাকিস্তান থেকে তাদের মদত দিচ্ছে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন৷ হুজির নেটওয়ার্ক ছড়িয়েছে মালয়েশিয়ায়৷  বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সংবাদপত্র ‘সমকাল’ হুজির সাম্প্রতিক গতিবিধি নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত করেছে৷

huji

ঘটনা ১: ২০০১ সালে ঢাকায় বাংলা বর্ষবরণের দিনে পরপর বিস্ফোরণে বাংলাদেশে নববর্ষ রক্তাক্ত হয়েছিল৷ ঢাকার রমনা উদ্যানে সেই বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় ১০ জনের৷
ঘটনা ২: বারো বছর আগে ঢাকায় রাজনৈতিক সমাবেশে  ভয়ঙ্কর নাশকতায় তৎকালীন বিরোধী নেত্রী  শেখ হাসিনাকে প্রকাশ্যে খুনের চেষ্টা হয়েছিল৷ ২০০৪ সালের সেই  গ্রেনেড হামলায় কোনরকমে বেঁচেছিলেন তিনি৷ তবে মৃত্যু হয়েছিল ২৪ জনের৷
এই দুটি নাশকতা যে জঙ্গি সংগঠনটির দ্বারা পরিচালিত সেই হরকত উল জিহাদ আল ইসলামি বাংলাদেশ (হুজিবি) আবারও তার শক্তি সঞ্চয় করেছে৷ নাশকতার আরও নজির তৈরি করতে গোপনে সংগঠনটির নতুন কমিটি প্রস্তুতি নিয়েছে৷  বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্য ও সূত্র বিশ্লেষণ করে এমনই জানাচ্ছে সংবাদপত্র ‘সমকাল’৷ এই সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে,  ‘সম্প্রতি দেশে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি), জামা’আতুল মুজাহিদীন অব বাংলাদেশের (জেএমবি) ‘অতি তৎপরতায়’ হুজির কার্যক্রম চাপা পড়লেও তারা নিষ্ক্রিয় নয়’।

huji-4সংবাদপত্রটির প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বাংলাদেশ জুড়ে নাশকতার নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কয়েকটি কমিটি গঠন করেছে জঙ্গি সংগঠনটি৷ তবে ঢাকার কমান্ডার মাওলানা খালেদ সইফুল্লা এখন মালয়েশিয়ায় রয়েছে৷  বাংলাদেশ পুলিশের গোয়েন্দা শাখার দাবি, হুজির নেতৃত্ব তাদের সংগঠনকে ঢেলে সাজাতে তৎপর৷ এ ব্যাপারে তারা জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)  ও আনসারুল্লা বাংলা টিম (এবিটিকে)-এর মতো জঙ্গি সগঠনের সন্ত্রাস থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের নতুন করে তৈরি করেছে৷  সংগঠনের অনেক নেতাকর্মী নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য ইন্টারনেটের বিশেষ অ্যাপস ব্যবহার করে। কাতার ও মালয়েশিয়া থেকেও হুন্ডির মাধ্যমে হুজির কাছে অর্থ আসছে।
বাংলাদেশে হুজি জঙ্গি সংগঠনের বাড়বাড়ন্ত চিন্তার কারণ ভারতের কাছেও৷ জঙ্গি সংগঠনটির হামলায় বারবার রক্তাক্ত হয়েছে ভারত৷
১: বারাণসীর সঙ্কটমোচন মন্দিরে বিস্ফোরণ (২০০৬), ঘটনায় নিহত ২৮
২: হায়দরাবাদ বিস্ফোরণে (২০০৭) নিহত ৪২
৩: জয়পুর বিস্ফোরণ (২০০৮), ঘটনায় নিহত ৮০, এই নাশকতায়  হুজির অন্যতম সহযোগী হরকত উল জেদহাদ আল ইসলামি
৪: আমেদাবাদ বিস্ফোরণে (২০০৮) নিহত ৫৬,  নাশকতায়  হুজির অন্যতম সহযোগী ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন ও হরকত উল জেদহাদ আল ইসলামি৷
৫: দিল্লি বিস্ফোরণে (২০০৮) নিহত ৩০,  নাশকতায়  হুজির অন্যতম সহযোগী ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন
৬: আগরতলা বিস্ফোরণ (২০০৮), নিহত চার জখম শতাধিক
৭: অসমের গুয়াহাটি, বরপেটা রোড, বঙ্গাইগাঁও ও কোকরাঝাড়ে ধারাবাহিক বিস্ফোরণ (২০০৮), নিহত ৮১
৮: দিল্লি বিস্ফোরণ (২০১১), নিহত ১৭

বোঝাই যাচ্ছে দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত ও বাংলাদেশে কীভাবে নাশকতা চালিয়েছে হুজি৷ বিশেষ করে ভারতে৷বাংলাদেশে হুজি আবার যত শক্তিশালী হয়ে উঠবে ততই চিন্তা বাড়বে ভারতের৷ এমনই ধারণা গোয়েন্দা বিভাগের৷

huji-2

বাংলাদেশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলামের দাবি, গত ২৩ জুলাই পুরান ঢাকা থেকে হুজির ঢাকার সভাপতি (উত্তর) মুফতি মাওলানা নাজিমউদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়৷  তার কাছে সংগঠনের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র মিলেছে৷ এরপরেই হুজির ক্রমাগত শক্তি সঞ্চয় করার বিষয়ে জানতে পারেন গোয়েন্দারা৷ পুলিশ সূত্র উদ্ধৃত করে ওপার বাংলার সংবাদপত্র সমকাল জানাচ্ছে, হুজি দৃশ্যত দুর্বল হলেও তারা গোপনে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে।

১৯৮৮ সাল থেকে বাংলাদেশে হুজি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছিল। গোয়েন্দা তথ্য বলছে, আফগানিস্তানে সোভিতেয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে  লড়াই ফেরত  ‘মুজাহিদ’দের নিয়ে গড়ে ওঠা পাকিস্তানপন্থী  জঙ্গি সংগঠন হল হুজি। মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ঘিরেই সংগঠনটি পরিচালিত হয়৷  তালিবান জঙ্গি সংগঠন দুর্বল হওয়ার পর বাংলাদেশে হুজি সংগঠনটিও দুর্বল হয়ে পড়েছিল। কিন্তু  ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের ছায়া যুদ্ধ চালানোর সূত্র ধরেই হুজিকে বারবার নাশকতায় মদত দিয়েছে বিভিন্ন পাকপন্থী জঙ্গি সংগঠনগুলি৷ বাংলাদেশে হুজিকে আর্থিকভাবে শক্তিশালী করার পিছনে যে প্রভাবশালী গোষ্ঠী সাহায্য করত তারা আবারও সক্রিয়৷ সেই সূত্র ধরেই মধ্যপ্রাচ্য থেকে হুজির কাছে পৌঁছে যাচ্ছে আর্থিক সাহায্য৷চিন্তিত বাংলাদেশের গোয়েন্দা বিভাগ৷ সেই চিন্তা ছড়িয়ে পড়ছে ভারতের গোয়েন্দা বিভাগেও৷






Shares