Main Menu

বাংলাদেশি তাস খেললেন মমতা, ‘জেলাশাসকই ফের নাগরিক শংসাপত্র দিন’

+100%-

image40 Anandabazar Patrika:: বিধানসভা ভোটের মুখে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপা‌ধ্যায় দাবি তুললেন, পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার এক্তিয়ার জেলাশাসকদের হাতে ফেরানো হোক। খুব শীঘ্র নবান্ন এই মর্মে দাবিসনদ দিল্লিতে পাঠাবে বলে বুধবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে জানিয়েছেন মমতা।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ১৯৮৫-র আগে পর্যন্ত বাংলাদেশিদের ভারতীয় নাগরিকত্ব মঞ্জুর করতে পারতেন জেলাশাসকেরা। পরে সন্ত্রাসবাদের নাম করে কেন্দ্র তা কেড়ে নেয়। মমতার কথায়, ‘‘বাংলাদেশ থেকে আসা যে মানুষগুলো এ রাজ্যে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বাস করছেন, রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড আছে, আমি মনে করি, তাঁরা ভারতের নাগরিকত্ব পেতেই পারেন।’’

এবং এমন সময়ে মুখ্যমন্ত্রীর মুখে দাবিটি শোনা গেল, যার দিন তিনেকের মধ্যে গৌড়ীয় মঠের অনুষ্ঠানে কলকাতায় পা রাখতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এর প্রেক্ষিতে বিরোধীরা বলছেন, নবান্নের দাবি নিছক প্রশাসনিক নয়, এতে অন্য উদ্দেশ্যও রয়েছে। কী রকম?

বিরোধীদের বক্তব্য: লোকসভা ভোটের আগে এই মোদী-ই কলকাতায় একাধিক প্রচারসভায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, বাংলাদেশি শরণার্থ়ীদের ভারতীয় নাগরিকত্বদানের আইন সংশোধন করা হবে। যাঁরা অত্যাচারিত হয়ে বা সর্বস্ব খুইয়ে বাংলাদেশ থেকে এসেছেন, তাঁদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দিতে আমরা বদ্ধপরিকর— বলেছিল মোদীর দল। এমনকী মাসখানেক আগে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ অশোকনগরে দাঁড়িয়ে আক্ষেপ করে গিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়া তাঁর মন্ত্রক সেরে ফেললেও রাজ্যসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা না-থাকায় সংশোধিত আইন পাশ করা যাচ্ছে না।

আর এখানেই রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছে বিরোধীরা, যার সঙ্গে সহমত মমতার প্রশাসনেরও একাংশ। এই মহলের পর্যবেক্ষণ, বিজেপির মোকাবিলা তো বটেই, মন্ত্রিসভায় দাবিটি তুলে তৃণমূলনেত্রী এক ঢিলে একাধিক পাখি মারলেন। ব্যাখ্যা হিসেবে রাজনীতির অঙ্কই ঘুরে-ফিরে আসছে নবান্নের একাংশের মুখে। তাঁদের যুক্তি: পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ৬০টি বিধানসভা কেন্দ্রে সংখ্যালঘুরাই হার-জিত নির্ধারণ করেন। কেন্দ্রগুলির অধিকাংশ উত্তরবঙ্গে, যেখানে তৃণমূল গত লোকসভা ভোটে তুলনায় ভাল ফল করলেও দক্ষিণের মতো শক্তিশালী সংগঠন নেই। বরং কোচবিহার থেকে মালদহ, এমনকী মু্র্শিদাবাদেও বিরোধী
প্রভাব যথেষ্ট। সেই প্রভাবে চিড় ধরাতেই তৃণমূলনেত্রী নতুন দাবিতে সরব হয়েছেন বলে বিরোধী ও প্রশাসনের বড় অংশ মনে করছে।

মমতার দাবি আদৌ মান্যতা পাবে কি না, কেন্দ্রই তা ঠিক করবে। ‘‘কিন্তু বিধানসভা ভোটের মুখে রাজ্যে বাম-কংগ্রেস জোট-জল্পনা যখন তুঙ্গে, তখন সংখ্যালঘুদের প্রতি সহমর্মিতার বার্তা দিতে মমতার এই পদক্ষেপ।’’— বলছে বিরোধীরা। তাদের ব্যাখ্যা: পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের নিজস্ব কিছু সংখ্যালঘু ভোট আছে। যার জোরে মালদহ-মু্র্শিদাবাদে তারা শক্তিশালী। অন্য দিকে ক্ষমতা হারানোর পরেও বামেদের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক উপেক্ষা করার মতো নয়। ফলে জোট হলে বিরোধী-ঝুলিতে সংখ্যালঘু ভোট ভাল যাবে, মমতা এটা বিলক্ষণ আঁচ করতে পেরেছেন। পাশাপাশি এ রাজ্যে অনুপ্রবেশকারীর ক্রমবর্ধমান সংখ্যা প্রসঙ্গে পুলিশি রিপোর্ট উদ্ধৃত করে নবান্নের একাংশের বক্তব্য: বিজেপি সীমান্ত এলাকায় হিন্দুত্বের উস্কানি দিয়ে পালে হাওয়া টানতে চাইছে। তার পাল্টা তৃণমূলনেত্রী কৌশলী চালই চেলেছেন।

কেন্দ্রীয় সূত্রের খবর: আশির দশকের গোড়ায় অসমে ‘বিদেশি খেদাও’ অভিযানের শিকার হয়েছিলেন মূলত বাংলাভাষীরা। ১৯৮৫-তে কেন্দ্রের তৎকালীন রাজীব গান্ধীর সরকার বাংলাদেশিদের ভারতীয় নাগরিকত্বদানের এক্তিয়ার ডিএম-দের কাছ থেকে কেড়ে নেয়। সেই ইস্তক কেন্দ্রের হাতেই ওই অধিকার। এখন জেলাশাসকেরা শুধু ‘রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেট’ দিতে পারেন। উপরন্তু সীমান্তবর্তী জেলায় সীমানার পাঁচ কিলোমিটার চৌহদ্দিতে বসবাসকারীদের রেশন কার্ড দেওয়ার যে অধিকার তাঁদের ছিল, এখন তা-ও নেই। রাজ্যে এখন খাদ্য দফতরই রেশন কার্ড বিলি করে।

এমতাবস্থায় নাগরিকত্বের শংসাপত্র প্রদানের এক্তিয়ার ডিএম-দের হাতে ফেরাতে চাওয়াকে ‘ভোটের মুখে সস্তা চমক’ হিসেবেই দেখছে বিরোধীরা। ‘‘কেন্দ্রে এনডিএ এবং ইউপিএ— দুই সরকারেই মন্ত্রী ছিলেন মমতা। ২০০৩-এ যখন নাগরিকত্ব আইন সংশোধন হল, তখন কিছু বললেন না। ঠিক ভোটের আগে মনে পড়ল?’’— প্রশ্ন ছুড়েছেন সিপিএমের সুজন চক্রবর্তী। কংগ্রেসের অধীর চৌধুরীর অভিযোগ, ‘‘এর মধ্যে রাজনীতি আছে। কারণ, জেলাশাসকদের বড় অংশ এখন শাসকদলের জেলা সভাপতি হয়ে গিয়েছেন!’’ প্রদেশ কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘১৯৮৫-৮৬ সালে এমপি হিসেবে মমতাই তৎকালীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বুটা সিংহকে আর্জি জানিয়েছিলেন, নাগরিকত্ব সংক্রান্ত এই দায়িত্ব রাজ্যের হাতে রাখা উচিত নয়। তখন পশ্চিমবঙ্গে বাম সরকার ছিল বলেই কি তিনি ওই অবস্থান নিয়েছিলেন?’’

বিজেপি কী বলে?

বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্যের মন্তব্য, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ এমনিতেই বারুদের স্তূপে বসে। মুখ্যমন্ত্রী আরও সর্বনাশ ডেকে আনতে চান। রাজনৈতিক ভাবে সকলেরই একজোট হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর অদ্ভুত ইচ্ছের প্রতিবাদ করা উচিত।’’






Shares