উচ্চশিক্ষিত ১০ আত্মঘাতী মহিলা জঙ্গি লুকিয়ে কলকাতায়য়
দেবাঞ্জন দাস, কলকাতা: ঢাকার গুলশান হামলার ষড়যন্ত্রে যুক্ত আত্মঘাতী স্কোয়াডের কমপক্ষে ১০ জন মহিলা জঙ্গি পশ্চিমবঙ্গে গা-ঢাকা দিয়ে রয়েছে বলে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সিকে (এনআইএ) জানিয়ে দিয়ে গেলেন বাংলাদেশের গোয়েন্দারা। ওই মহিলা জঙ্গিরা বাংলাদেশের ‘জামাত-উল-মুজাহিদিন (নিউ)’ আত্মঘাতী স্কোয়াডের সদস্য বলে এনআইএ’কে জানানো হয়েছে। এদের মধ্যে তিনজন খাগড়াগড়পর্বে মঙ্গলকোটের শিমুলিয়া ও লালগোলার মুকিমনগরের জেহাদি জঙ্গি শিবির থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছিল বলে এনআইএ’কে জানানো হয়েছে। ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গি সন্দেহে ধৃত মহম্মদ মসিরউদ্দিন ওরফে মুসাকে জেরা করতে কয়েকদিন আগে কলকাতায় এসেছিলেন বাংলাদেশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিইউ) তিন গোয়েন্দা। তাঁরা জানিয়ে গিয়েছেন, পলাতক এই মহিলা জঙ্গিদের মধ্যে কেউ ফার্মেসি কোর্স, কেউ ইঞ্জিনিয়ারিং আবার কেউ ডাক্তারি পড়ুয়া। এই দলের সদস্যদের কেউ কেউ আবার পাসপোর্ট-ভিসা নিয়ে রীতিমতো আনুষ্ঠানিক ভাবে এপার বাংলায় এসে থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা।
কীভাবে জানা গেল আত্মঘাতী মহিলা জঙ্গিদের বিষয়টি? সিটিটিইউ সূত্রে জানা গিয়েছে, গুলশান হামলার পরে দেশজুড়ে জঙ্গি-জেহাদি বিরোধী অভিযানে গত ৯ জুলাই সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মোট সাতজন মহিলাকে। বিবাহিতা এবং একাধিক সন্তানের জননী ওই মহিলাদের মধ্যে তিনজন ছিল আইএস মতাদর্শে বিশ্বাসী নিউ জেএমবি জঙ্গিদের ‘আত্মঘাতী স্কোয়াডে’র সদস্য। টাঙ্গাইলের জোকারচর এলাকা থেকে ধৃত ওই তিন জঙ্গি হল জান্নাতি ওরফে জেমি, সাজিদা আখতার এবং রোজিনা বেগম। তাদের জেরা করে জানা যায়, খাগড়াগড়পর্বে তাদের প্রশিক্ষণ হয়েছিল মঙ্গলকোট ও মুকিমনগরের জেহাদি ডেরায়। তাদের থেকেই জানা যায়, বাংলাদেশজুড়ে সক্রিয় রয়েছে কমপক্ষে ৫০ জন মহিলা জঙ্গি। তাদের সবাই কমবেশি শিক্ষিত। দলে রয়েছে আত্মঘাতী স্কোয়াডের সদস্যও।
টাঙ্গাইলে ধৃত জঙ্গিদের কাছ থেকে মেলা তথ্য সূত্র ধরে গত ১৬ জুলাই ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় নিউ জেএমবি সংগঠনের আত্মঘাতী স্কোয়াডের চার মহিলা সদস্যকে। তারা হল ঢাকা মেডিকেল কলেজে শিক্ষানবিশ চিকিৎসক ইসতিসানা আখতার ঐশী এবং মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ফার্মেসি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী খাদিজা পারভিন মেঘলা, ইশরাত জাহান মউ এবং আকলিমা রহমান মণি। ধৃতদের সঙ্গে গুলশান হামলাকারীদের সরাসরি যোগাযোগ ছিল বলে জেরায় জেনেছেন গোয়েন্দারা। সিটিটিইউ সূত্রে জানা গিয়েছে, জঙ্গি সন্দেহে ধৃত শিক্ষানবিশ চিকিৎসক ঐশীর ল্যাপটপ থেকে দুই বাংলা জুড়ে নিউ জেএমবি’র বিছানো জাল সম্পর্কে বিশদ তথ্য মিলেছে। গোয়েন্দারা বলছেন, ফেসবুকে দু’টি পেজ খুলে সতীর্থ জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত ঐশী। ‘ইসলাম ক্লাস ফর গার্লস-৩’ এবং ‘ব্লাড রোজ’ নামে ওই দু’টি পেজ থেকে নিউ জেএমবি’র মহিলা জঙ্গিদের সম্পর্কে প্রচুর তথ্য পেয়েছেন বাংলাদেশের গোয়েন্দারা। ওই ল্যাপটপ থেকেই খাগড়াগড়কাণ্ডে পলাতক এ রাজ্যের পাঁচ মহিলা জঙ্গি আলিমা, বিলকিস বেগম, খাদিজা বিবি, সায়মা বিবি এবং সালিমা বিবি সম্পর্কে তথ্য মিলেছে। এছাড়াও সে দেশে নিউ জেএমবি’র আত্মঘাতী স্কোয়াডের কমপক্ষে ২৭ জন মহিলা জঙ্গি সম্পর্কে তথ্য পেয়েছেন সিটিটিইউ গোয়েন্দারা। তাদের মধ্যে ১০ জন পশ্চিমবঙ্গে গা-ঢাকা দিয়ে রয়েছে বলে এনআইএ’কে জানিয়েছেন বাংলাদেশের গোয়েন্দারা।
এই ১০ জন কারা? জাতীয় তদন্তকারী সংস্থাকে দেওয়া বাংলাদেশের তালিকা অনুযায়ী তারা হল, সফিয়া ওরফে সানজিদা ওরফে ঝিনুক, মাইমুনা ওরফে মাহমুদা ওরফে লায়লা, তাসনুভা ওরফে তাহিরা, শায়লা ওরফে শাহিদা, দিনাত জাহান ওরফে নওমি ওরফে বাণী, তানজিলা ওরফে মুন্নি, আলিয়া ওরফে তিন্নি ওরফে তিতলি, মণিরা জাহান ওরফে মিলি এবং সাবিহা ওরফে মিতু। গোয়েন্দারা বলছেন, এই ১০ জনের মধ্যে লায়লা, পুতুল এবং মিলি খাগড়াগড়পর্বে এপার বাংলার জেহাদি-জঙ্গি শিবিরে প্রশিক্ষণ নিয়েছিল বলে জানা গিয়েছে।