কাতারে বাংলাদেশ দূতাবাসে ১৫ আগষ্ট জাতীয় শোক দিবস পালিত
আমিনুল ইসলাম,কাতার প্রতিনিধি:: ১৯৭৫ সালের এই দিনে ঘাতকের নির্মম বুলেট স্বপরিবারে আমাদের মাঝ থেকে ছিনিয়ে নেয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীদের হয়ে কাজ করা ঘাতকচক্রের বুলেটে ঝাঁঝড়া হয়ে গিয়েছিল সেদিন বাংলাদেশের হৃদপিন্ড। রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা পিতাকে রক্ষায় সেদিন আমাদের ব্যর্থতাও ছিল হিমালয়সম। অসহায় দেশবাসী নীরবে কেঁদেছে সেদিন। উচ্চ স্বরে প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করতে পারেনি কেউ। ইতিহাসে এই ঘটনার মিল খুঁজে পাওয়া যায় একমাত্র ফোরাত নদীর তীরের কারবালা প্রান্তরের বিয়োগান্ত ঘটনার সাথে। ঘাতকের নিষ্ঠুর বুলেট থেকে নাবালক শিশু আর অন্তঃস্বত্ত্বা নারীও সেদিন রক্ষা পাননি। পিতৃহারা এই জাতীয় শোক দিবসে মহান রাব্বুল আলামীনের কাছে সেদিনে শাহাদাৎবরণকারী সকল শহীদের রুহের মাগফেরাত ও শান্তি কামনা করছি।” -নানা কর্মসূচি হাতে নিয়ে কাতারে বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃক আয়োজিত জাতীয় শোক দিবস অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। স্থানীয় সময় সকাল ন’টায় অনুষ্ঠিত শোক দিবস অনুষ্ঠানে প্রথমে জাতীয় পতাকা অধনর্মিত করা হয়।
পরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমেদ এর সভাপতিত্বে ও দূতাবাসের দ্বিতীয় সচিব নাজমুল হকের সঞ্চালনায়, কোরানখানি, মিলাদ, দোয়া, মোনাজাত ও এক আলোচনা সভার আয়োজন করেন। এতে স্থানীয় আওয়ামীলীগ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বাংলাদেশ সাংবাদিক ফোরাম, মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ, নৌকা নতুন প্রজন্ম, জাতীয় সমাজতাত্ত্বিক দল জাসদ, জাতীয় পাটি, আওয়ামী যুবলীগের নেতাকর্মীসহ বাংলাদেশ কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বক্তব্য রাখেন।
দেশ থেকে প্রেরিত রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাণী পাঠ করে শোনান বক্তারা আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গতিশীল সাহসী নেতৃত্বে বাঙালি জাতি হাজার বছরের পরাধীনতার শিকল ছিড়ে ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীনতার লাল সূর্য। কিন্তু হত্যার মধ্যদিয়ে তাঁকে রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে অপসারণ করে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত পক্ষ বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সংষ্কৃতি ও অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করার অপপ্রয়াস চালায়।
আমাদের যা কিছু মহৎ অর্জন অসাম্প্রদায়িকতা, গণতান্তিক সহনশীলতা, আবহমানকালের সাংস্কৃতি ঐহিত্য, সমৃদ্ধির সম্ভাবনাময় অগ্রযাত্রা তা থেকে রাষ্ট্র কাঠামোকে বিপথে চালাতে অপচেষ্টা করে। পঁচাত্তরের ওই মসিলিপ্ত পনেরই আগষ্টের পর থেকে এখনো ঘাতকচক্র ও ওদের ঘৃণ্য সহযোগীরা মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত পক্ষকে সাথে নিয়ে এক দৃষ্টচক্রের ঘৃর্ণাবর্তে আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রকে ঘোরপাক খাওয়াতে নিরন্তর ক্রিয়াশীল রয়েছে। এরাই পুরস্কৃত করার মাধ্যমে আত্মস্বীকৃত খুনীদের চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়ে রাজনীতিতে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দেয়।
বক্তারা বলেন, পঁচাত্তরের পর থেকে গণতন্ত্রের জন্য যে সংগ্রাম রচিত হয় তার পুরোভাগে থাকে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ। অনেক রক্ত আর আত্মত্যাগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় জনগণের ভোটাধিকার এবং জনগণ ১৯৯৬ সালে সে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে সুদীর্ঘ প্রায় দুযুগ পরে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগকে দেশ পরিচালনার সুযোগ করে দেন বাংলাদেশের মানুষ। পঙ্গার পানি চুক্তি, পার্বত চট্টগ্রামের শান্তি চুক্তি, খাদ্যে সয়নসম্পূর্ণতা অর্জন, দারিদ্র্য বিমোচনে অগ্রগতি, গণশিক্ষার অভাবিত সাফল্য, নারীর ক্ষমতায়নে অগ্রগতি ইত্যাদির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসমৃদ্ধ সমাজ গঠনে আওয়ামীলীগ সরকার উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন করে।
“দেশসেবার প্রথম সুযোগেই ’৭৫-এর খুনীদের রক্ষাকরা ইনডেমনিটি অর্ডিনান্স রহিত করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এভাবে আওয়ামীলীগ আইনের শাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে এক মাইলফলক স্থাপন করে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ২০০১ এর অক্টোবর জাতীয় নির্বাচনের মধ্যদিয়ে বিএনপি- জামাত দুষ্টচক্র রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে নেয়।”
অনুষ্ঠান শেষে একজন কমিউনিটি নেতার বক্তব্য কে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বিরাজ করলে সভা সমাপ্তি ঘোষনা করা হয়।