আজ পবিত্র আশুরা ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিবস
আজ পবিত্র আশুরা। ইসলামিক পঞ্জিকা অনুযায়ী মহররমের দশম দিনকে পবিত্র আশুরা বলা হয়। এটি ইসলাম ধর্ম অনুসারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই পবিত্র আশুরার দিনেই পৃথিবীতে নানা স্মরণীয় ও শোকের ঘটনা ঘটেছে। যার কারণে মুসলিম ইতিহাসে এই দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আমরা জানি, আশুরা মূলত একটি শোকাবহ দিন। কেননা এদিন মুহাম্মদ (সা:)-এর দৌহিত্র হুসাইন ইবনে আলী নির্মমভাবে শহীদ হয়েছিলেন। এ ছাড়া ইসলামের ইতিহাস অনুসারে এই দিনটি আরও নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। এই পবিত্র ১০ মহররম তারিখে আসমান ও যমিন সৃষ্টি করা হয়েছিল। এই দিনে পৃথিবীর প্রথম মানুষ হযরত আদম (আ:) কে সৃষ্টি করা হয়েছিল। এই দিনে আল্লাহ নবীদেরকে স্ব স্ব শত্রুর হাত থেকে আশ্রয় প্রদান করেছেন। এই দিন নবী মুসা (আ:)-এর শত্রু ফেরাউনকে নীল নদে ডুবিয়ে দেয়া হয়। নূহ (আ:)-এর কিস্তি ঝড়ের কবল হতে রক্ষা পেয়েছিলো এবং তিনি জুডি পর্বতশৃংগে নোঙ্গর ফেলেছিলেন। এই দিনে দাউদ (আ:)-এর তাওবা কবুল হয়েছিলো, নমরূদের অগ্নিকু- থেকে ইব্রাহীম (আ:) উদ্ধার পেয়েছিলেন ; আইয়ুব (আ:) দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্ত ও সুস্থতা লাভ করেছিলেন; এদিনে আল্লাহ তা’আলা ঈসা (আ:)-কে ঊর্ধ্বাকাশে উঠিয়ে নিয়েছিলেন। এবং হাসিদে বর্ণিত আছে যে এই তারিখেই কেয়ামত সংঘটিত হবে।
যে কারণে এই দিনটি অধিক গুরুতত্বপূর্ণ তা হলো, হিজরী ৬০ সনে এজিদ বিন মুয়াবিয়া পিতার মৃত্যুর পর নিজেকে মুসলিম বিশ্বের খলিফা হিসাবে ঘোষণা করে। শাসক হিসাবে সে ছিল স্বৈরাচারী ও অত্যাচারী। ইমাম হুসাইন (রা:) এজিদের আনুগত্য করতে অস্বীকৃত হন এবং ইসলামের সংস্কারের লক্ষ্যে মদীনা ছেড়ে মক্কা চলে আসেন।
উল্লেখযোগ্য যে, উমাইয়া শাসনামলে ইসলাম পথভ্রষ্ট হয়ে পড়েছিল। মক্কা থেকে তিনি কুফার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। শেষ পর্যন্ত তিনি কারবালার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। এ সময় উমর ইবনে সাদ আবি ওক্কাসের নেতৃত্বে চার হাজার সৈন্য কারবালায় প্রবেশ করে। কয়েক ঘণ্টা পর শিমার ইবনে জিলজুশান মুরাদির নেতৃত্বে আরো বহু নতুন সৈন্য এসে তার সাথে যোগ দেয়? কারবালায় দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেয়। নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। এই অসম যুদ্ধে ইমাম হুসাইন (রা:) এবং তাঁর ৭২ জন সঙ্গী শাহাদৎ বরণ করেন। শিমার ইবনে জিলজুশান মুরাদি নিজে কণ্ঠদেশে ছুরি চালিয়ে ইমাম হুসাইন (রা:) হত্যা করে। সেদিন ছিল হিজরী ৬১ সনের ১০ মহররম।
কারবালার যুদ্ধ সকাল থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। দিনটি ছিল ১০ অক্টোবর ৬৮০ খ্রিস্টাব্দ (মহাররম ১০, ৬১ হিজরি) এই যুদ্ধে প্রায় ৭২ জন নিহত হন যাদের সকলেই পানি বঞ্চনার শিকার হন। অর্থাৎ সকল পুরুষ সদস্যই নিহত হন কেবলমাত্র রোগা ও দুর্বল জয়নুল আবেদিন ছাড়া।
এ কথা সবাই জানি যে, এটি এক অসম যুদ্ধ ছিল। যেখানে হুসাইন ও তাঁর পরিবার বিশাল এক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীন হন। বিখ্যাত ইতিহাসবিদ আবু রায়হান আল বিন্নি এর মতে, ‘তাঁবুগুলোতে আঙুন ধরিয়ে দেওয়া হয় এবং মৃতদেহগুলোকে ঘোড়ার খুড় দ্বারা ক্ষতবিক্ষত ও পদদলিত করা হয়; মানব ইতিহাসে কেউ এমন নৃশংসতা দেখেনি। হত্যার আগমুহূর্তে হুসাইন বলেন, ‘আমার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে যদি মুহাম্মদের দ্বীন জীবন্ত হয়, তবে আমাকে তরবারি দ্বারা টুকরো টুকরো করে ফেল।’
উমাইয়া সৈন্যরা হুসাইন ও তাঁর পুরুষ সঙ্গীদের হত্যা করার পর সম্পদ লুট করে, মহিলাদে গয়না কেড়ে নেয়। শিমার জয়নাল আবেদীনকে হত্যা করতে চাইলে জয়নাব বিনতে আলী এর প্রচেষ্টায় কমান্ডার উমার ইবনে সাদ তাঁকে জীবিত রাখেন। তাঁকেও বন্দী নারীদের সাথে দামেস্কে ইয়াজিদের দরবারে নিয়ে যাওয়া হয়। এভাবেই কারবালার বিয়োগান্তক ঘটনার পরিসমাপ্তি ঘটে। যা আজও আমাদের করে ব্যথিত, মর্মাহত। আমরা যেন কারবালার শহীদের ভুলে না যাই। তাদের স্মৃতি স্মরণে রেখে ইসলামকে আগলে রাখি, এটাই হোক আমাদের পবিত্র আশুরার শিক্ষা।