Main Menu

কসবা প্রবাসীকে বিয়ের ফাঁদে ফেলে অপহরণ, মুক্তিপণের দাবিতে নির্যাতন

+100%-

নরসিংদী সদর উপজেলার সাটিরপাড়ার মারিয়া আক্তার মন্টির (২৩) বিয়ের ফাঁদে পড়ে অনেককেই মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হয়েছে। সম্প্রতি তার ফাঁদে পড়েছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা এলাকার সৌদি আরব প্রবাসী রাসেল হাসান। বিয়ের পর নানা কৌশলে তার কাছ থেকে মন্টি হাতিয়ে নেয় ২ লাখ টাকা। এতেই ক্ষান্ত হয়নি সে। ভুয়া ডিবি পুলিশ দিয়ে অপহরণ করে রাসেলকে। মুক্তিপণ বাবদ ১০ লাখ টাকা দাবি করে। নির্যাতনের ভিডিও রাসেলের মায়ের মোবাইলে পাঠিয়ে আদায় করে আরও ৬০ হাজার টাকা। এছাড়া মিথ্যা ধর্ষণ ও অপহরণের মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে অনেককে। শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) নরসিংদী জেলা সদর এলাকা থেকে মন্টি, তার বাবা, ভাইসহ ওই চক্রের চার সদস্যকে আটক করে র‍্যাব।

তারা হলো−মন্টি, তার বাবা বাদল মিয়া, বড় ভাই পাপ্পু মিয়া এবং তার সাবেক স্বামী অভিত মিয়া।

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১১ সিনিয়র সহকারী পরিচালক আলেপ উদ্দিন জানান, আটককৃতরা সংঘবদ্ধ অপহরণকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা বিভিন্ন এলাকার বিত্তবান ব্যক্তিদের কৌশলে অপহরণের পর নির্যাতন করে পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ বাবদ মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিতো।

তিনি বলেন, মন্টি এর আগে আরও ৪-৫টি বিয়ে করে একইভাবে নির্যাতন ও জিম্মি করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। সর্বশেষ সে বিয়ে করে রাসেলকে। মূলত রাসেলের অর্থ হাতিয়ে নিতেই মন্টি, তার বাবা ও বড় ভাই অপহরণ করেছিল বলে আটককৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।

র‍্যাব কর্মকর্তা বলেন, ২৮ ডিসেম্বর ভুয়া ডিবি পুলিশ পরিচয়ে সাত-আটজনের একটি দল রাসেলকে নরসিংদী আদালতের সামনে থেকে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। গাড়িতে তুলেই তাকে মারধর করে হাত-পা-চোখ বেঁধে ফেলে। এসময় সে পানি চাইলে কোমল পানীয়ের সঙ্গে চেতনানাশক কিছু মিশিয়ে খাইয়ে দেয়। এটি পান করার পরপরই সে অচেতন হয়ে পড়ে। জ্ঞান ফিরে আসার পর সে নিজেকে একটি ফ্ল্যাটে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় দেখতে পায়।  অপহরণকারীরা ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে নির্যাতন করে। একপর্যায়ে রাসেলের পরিবারের সঙ্গে দুই লাখ টাকায় দফরফা হলে বিকাশের মাধ্যমে ৬০ হাজার টাকা নেয় অপহরণকারীরা। বাকি টাকা আদায় করতে ২৯ ডিসেম্বর তারা রাসেলকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে বের হয়। মাঝপথে রাসেল প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার কথা বললে তাকে গাড়ি থেকে নামানো হয়। এসময় রাসেল ডাকাত বলে চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন তাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে অপহরণকারীরা পালিয়ে যায়। পরে অপহরণকারীরা রাসেলকে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া এবং মামলা না করতে নানাভাবে হুমকি দিতে থাকে। পরে র‌্যাব-১১ কার্যালয়ে গিয়ে সে অভিযোগ করে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব চারজনকে আটক করে।

রাসেল জানায়, ২০১৮ সালে সাটিরপাড়া এলাকায় চাচাতো ভাইয়ের টেইলারের দোকানে মন্টির সঙ্গে পরিচয় ও প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ছয় মাস পর সৌদি আরবের ভিসা পেয়ে সেখানে চলে যায়। এরপর তাদের বিয়ে হয়। পরে মন্টির ভাইকে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে তার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা নেয় মন্টির পরিবার। দুই বছর পর দেশে ফিরে এলে পুনরায় তার কাছে টাকা চায়। এছাড়া মিথ্যা ধর্ষণ মামলা দিয়েও তাকে হয়রানি করা হয়। ওই মামলায় ১৩ দিন কারাগারেও ছিল রাসেল। জামিনে বের হওয়ার পর মীমাংসার কথা বলে মন্টির বড় ভাই পাপ্পু নরসিংদী আদালতে চত্বরে ডেকে নেয়। কথা বলার একপর্যায়ে ভুয়া ডিবি পুলিশ সাজিয়ে তাকে অপহরণ করে। এরপর মুক্তিপণের দাবিতে তাকে নির্যাতন করে। এই পুরো ঘটনাটি মোবাইল ফোনে দিকনির্দেশনা দেয় মন্টি।

এই ঘটনায় জড়িত বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন ওই র‍্যাব কর্মকর্তা।






Shares