কসবায় চাচা-চাচি-ভাতিজা’র মামলা মোকাদ্দমার যুদ্ধ
কসবা উপজেলার বায়েক ইউনিয়নের চারুয়া গ্রামে ভূমি সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে চাচা ভাতিজার যোদ্ধে চাঁদাবাজির মামলায় আপন চাচা এখন জেল হাজতে। চাচা-চাচী,ভাতিজা’র মধ্যে জমির ঘটনার বিরোধ নিয়ে এলাকায় মানুষের মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, ভাতিজা একই গ্রামে পাশাপাশি বাড়ি মো: আবদুল মজিদের পুত্র কক্সবাজার জেলায় কর্মরত বাংলাদেশ পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এস.আই) মো: নজরুল ইসলাম ওরফে সুলতান (৪৫) এবং তার ছোট ভাই দুবাই প্রবাসী আলী আহাম্মদ (৩৫) উভয়ে ছুটি কাটানোর নামে বাড়িতে এসে পুলিশের চাকুরীর ভয় দেখিয়ে চাচার বৈধ পাওনা হতে বঞ্চিত করা,তারা দেশীয় অশ্র-সশ্র নিয়ে লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে চাচা আলী আশরাফ, চাচি মনোয়ারা বেগম এবং চাচাত ভাই আরিফুল ইসলামকে গুরুতর আহত করা,আলী আশরাফের বাড়ির পাশে বাঁশের বেড়া দিয়ে পুকুরে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করা, খুন খারাপি করার আশংকা থাকার বিষয়টি মিথ্যা ভিওিহীন বলে দাবী করছেন আপন ভাইয়ের বৌ পেয়ারা,ভাতিজা আবদুর রহিম ও পাড়া প্রতিবেশী এবং সাবেক চেয়ারম্যান মনির হোসেন প্রমুখ।
এদিকে গত ১৫ জুলাই কসবা বায়েক চারুয়া গ্রামের আবদুল লতিফের স্ত্রী পিয়ারা বেগম কসবা টি.আলী ডিগ্রী কলেজের অফিস পিয়ন আলী আশরাফকে আসামী করে কসবা থানায় একটি চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করে। অপরদিকে গত ৩ আগষ্ট একই ব্যক্তি আবদুল লতিফের স্ত্রী পেয়ারা বেগম বাদী হয়ে স্বামী আবদুল লতিফকে অপহরন দেখিয়ে অফিস পিয়ন আলী আশরাফের বিরুদ্ধে জি আর ১১১/১৪বিজ্ঞ আদালতে একটি অপহরন মামলা দায়ের করে।উল্লেখ্য,চাঁদাবাজির মামলায় পুলিশ আলী আশরাফকে গ্রেফতার করে।বিগত দিনেও রাষ্ট্রীয় সম্পদ ক্ষতিসাধন মামলায় বায়েক ইউপি জামায়াতের সভাপতি ও টি আলী কলেজের অফিক পিয়ন আলী আশরাফ গ্রেফতার হয়েছিল। তার দুই ছেলে আরিফুল ইসলাম (২৬) ও ছোট ছেলে শরীফুল ইসলাম(২২) জামায়াত শিবীরের সক্রিয় কর্মী বলে এলাকাবাসী জানান।
গত শুক্রবার (৮ আগষ্ট) সকালে সরেজমিনে ঘটনাস্থল বায়েক ইউনিয়নের চারুয়া গ্রামে গিয়ে দায়েরকৃত মামলার বিষয় গুলোর অবস্থা জানতে চাইলে, এলাকাবাসী সাংবাদিকদের জানান সর্ব প্রথই মামলা দায়ের করেন আলী আশরাফ । এর পর থেকে চাচা ভাতিজা ও ভাই বৌয়ের মধ্যে মামলার যুদ্ধ শুরু হয় । অপর দিকে আলী আশরাফের পরিবার জানান;চাঁদাবাজির মামলাটি সম্পূর্ণ সাজানো এবং অপহরণ মামলাটি সঠিক নয়।এবং পিয়ারা বেগমের স্বামী আবদুল লতিফ মানুষিক অসুস্থ্য ছিল এবং সে কোথায় চলে গেছে তার সন্ধান কেউ আর পায়নি বলে দাবী করছেন।
এ বিষয়ে পিয়ারা বেগম সাংবাদিকদের জানান, গ্রামের সরদার মাতব্বরদের কাছে বিচারের প্রার্থী হয়ে বিচার না পেয়ে আমি মামলা গুলো করতে বাধ্য হয়েছি। পিয়ারা বেগমের ছেলে আবদুর রহিম সাংবাদিকদের জানান,আসামী পক্ষরা নিসিদ্ধ ঘোষিত জামায়তের রাজনীতির সাথে সক্রিয় ভাবে জড়িত। আলী আশরাফ বায়েক ইউপি জামায়াতের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার বিরুদ্ধে গত বিএনপি ও জামায়াতের হরতালে নাশকতা ও গাছ কেটে রাস্তা প্রতিরোধ,রেল লাইন নাশকতা কল্পে জি আর ১০০/১৩(আখাউড়া রেলওয়ে থানা),জি আর ১০১/১৩(আখাউড়া রেলওয়ে থানা),জি আর ৫৬৮/১৩( কসবা থানা ),জি আর ৫১২/১৩(কসবা থানা) মামলা দায়ের হয়,এবং পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার হয়ে জামিনে বাড়িতে এসে আবার আমার পরিবারের উপর সহ চাচাতো ভাই পুলিশ অফিসার মো: নজরুল ইসলাম ওরফে সুলতান ও দুবাই প্রবাসী আলী আহাম্মদ এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপবাদসহ মিথ্যা মামলা,হামলাসহ ষড়যন্ত্র করার পায়তারা অব্যাহত রেখেছেন।
গত ২৬ জুন পুলিশ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম ও দুবাই প্রবাসী আলী আহাম্মদের নেতৃত্বে কিছু উশৃঙ্খল লোক চাচা আলী আশরাফের বাড়িতে হামলা চালিয়ে লক্ষাধিক টাকার মূল্যবান গাছপালা কাটা এবং স্টীল আলমীরার তালা ভেঙ্গে প্রয়োজনীয় সম্পত্তির দলিল পত্র লুট করে নিয়ে যায় মর্মে গত ৩০ জুন ৪ জনকে আসামী করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের হয়েছে বলে দাবী করছেন বিবাদী পক্ষদ্বয়রা। ।
কক্সবাজার জেলায় কর্মরত পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এস.আই) মো: নজরুল ইসলাম ওরফে সুলতানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,আমাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ আদৌ সঠিক নহে। জমির ক্রয়ের সমুদয় মূল্য পরিশোধ করেই জমির দলিল করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ ক্ষতি সাধনে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। তাকে টাকা পয়সা ও কেইস,মামলায় কোন প্রকার সহযোহিতা না করায় আমার ও আমার ছোট ভাই আলী আহাম্মদের বিরুদ্ধে চাচা আলী আশরাফ সহ তার পরিবার মিথ্যা শড়যন্ত্র করছেন।
এ ব্যাপারে বায়েক ইউপি চেয়ারম্যান মো: বিল্লাল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, চাচা ভাতিজা ও ভাইয়ের বৌ পেয়ারা বেগমের মামলা মোকাদ্দমার যুদ্ধ নিস্পত্তির ব্যাপারে জোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। আলী আশরাফ জামায়াতের বায়েক ইউপির সভাপতি বটে। তার বিরুদ্ধে রাস্ট্রীয় সম্পদ ক্ষতি সাধনে কসবা-আখাউড়া থানায় একাধিক মামলা হয়েছে।
আরো উল্লেখ;আলী আশরাফ তার ভাই আঃ লতিফকে ১৯৯০ সালে সামসুর নাহারকে বিবাহ করান। লতিফের প্রধম স্ত্রী বাড়ীর পাশে প্রবাসীর সাথে চলে গেলে আবার আলী আশরাফ ১৯৯৮ সালে আবার কুমিল্লায় আশরাফের শুশ্বড় বাড়ির কাজের মেয়ে পেয়ারা বেগমকে আঃ লতিফের সাথে বিযে দেয়। জানা যায় আবদুল লতিফের সম্পদ আত্বসাৎ করার জন্য আলী আশরাফ তার পরিবারের সদস্যরা একের পর এক নাটকীয় ঘটনা সৃজন করছেন বলে আবদুল লতিফের পরিবার পেয়ারা বেগম ও ছেলে আবদুর রহিম অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে অফিসার ইনচার্জ কসবা থানা মো: মিজানুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, কসবা টি.আলী ডিগ্রি কলেজের অফিস পিয়ন মো: আলী আশরাফকে বিধিমোতাবেক গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বলেন, ফৌজধারী মামলার আসামী যে কোন সময় গ্রেফতার করার বিধান রয়েছে।তার বিরুদ্ধে কসবা,আখাউড়া থানায় নাশকতাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। বিষয়টি যেহেতু ভূমি সংক্রান্ত বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে নিস্পত্তি হতে হবে তবে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।