Main Menu

ভবনসংকটে ১১ বিদ্যালয় মাঠেই চলছে পাঠদান

+100%-

ভবনসংকটে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার ১১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খোলা আকাশের নিচে পাঠদান করা হচ্ছে। এই ১১ বিদ্যালয়ের ১০টির ভবনই পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে প্রায় এক হাজার ২০০ শিক্ষার্থীকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।


উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও শিক্ষা কমিটির সভাপতি রুহুল আমিন ভূঁইয়া বলেন, উপজেলায় মোট প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৬৩টি। এর মধ্যে ১১টি সরকারি বিদ্যালয়ের নতুন ভবন লাগবে। বিদ্যালয়গুলোর ভবন নির্মাণের জন্য উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভায় কার্যবিবরণী তৈরি করে তা স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

উপজেলা শিক্ষা কার্যালয়ের কর্মকর্তা সূত্র জানায়, উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের লতুয়ামুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৮০। শিক্ষক আছেন চারজন। বিদ্যালয় ভবনটি ২০০৯ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে মাঠেই চলছে পাঠদান। আজ অবধি এ বিদ্যালয়ে কোনো ভবন হয়নি। সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, পরিত্যক্ত ভবনের পাশের গাছতলায় পাঠদান চলছে। পাশের আক্কাছ আলীর বাড়িতে বিদ্যালয়ের আলমারি ও অন্য মালামাল রাখা হয়েছে।

পঞ্চম শ্রেণীর মোছেনা আক্তার বলে, ‘স্যাররা মাঠে ক্লাস নেন। এমনে মাঠে পড়তে ভালা লাগে না। ম্যাঘ-বাদলার দিনে ইস্কুল বন্ধ থাকে।’

প্রধান শিক্ষক পারভিন আক্তার বলেন, ‘অন্যের বাড়িতে রাখা আলমারিতে কাগজপত্র ও শিক্ষা উপকরণ রাখি। কর্তৃপক্ষকে বারবার বলেও কাজ হচ্ছে না। এ বছর ভবন না হলে ছেলেমেয়ে ধরে রাখা যাবে না।’

এদিকে কসবা পৌর এলাকার বগাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত। এখানে বর্তমানে শিক্ষার্থী আছে ৩৮৪ জন। ২০১৩ সালের ৪ এপ্রিল ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। ওই দিন থেকেই ভবনে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে মাঠে ও বারান্দায় চলছে পাঠদান।

প্রধান শিক্ষক আয়েশা খাতুন বলেন, ভবনধসের আশঙ্কায় এখানে পাঠদান বন্ধ করে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

লতুয়ামুড়া ও বগাবাড়ি ছাড়াও মাঠে পাঠদান করতে হচ্ছে এ রকম বিদ্যালয়গুলো হলো: আমখার, বড়মুড়া, জগন্নাথপুর, ভাতশালা, উত্তর চকবস্তা, কুটি, জাজিসার ও ধামসার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ ১০টি বিদ্যালয়ের চিত্র কমবেশি একই রকম। এগুলোতে মাঠে পাঠদান করতে হচ্ছে। এতে শিশুরা পাঠে মনোযোগ দিতে পারছে না। তা ছাড়া, বিদ্যালয় ভবন না থাকায় বাচ্চাদের মধ্যে হীনম্মন্যতারও সৃষ্টি হচ্ছে।

মনকাশাইর ধর্মপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও মাঠে পাঠদান করা হচ্ছে। অবশ্য এখানে কারণ ভিন্ন। ১৯৬৯ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৪ সালে এখানে ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়। পর্যায়ক্রমে বিদ্যালয়টি অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে। এখানে বর্তমানে শিক্ষার্থী ৪০১ জন। দুই পালায় এসব শিক্ষার্থীকে পাঠদান করা হচ্ছে। প্রতি পালার জন্য সাতটি করে কক্ষের প্রয়োজন। অথচ শ্রেণীকক্ষ আছে মাত্র চারটি। বাধ্য হয়ে তিনটি শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মাঠে পাঠদান করতে হচ্ছে।

শিক্ষক মোজামেঞ্চল হক বলেন, দ্বিতীয় শ্রেণীর ক ও খ শাখা এবং শিশুসহ তিনটি শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মাঠে ও বারান্দায় পাঠদান করতে হচ্ছে।
কসবা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লায়লা নুর বলেন, ‘কয়েকটি বিদ্যালয়ের ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন করে ভবন নির্মাণের জন্য শিক্ষা অধিদপ্তরে চাহিদা দেওয়া হয়েছে। দেখা যাক, কবে অনুমোদন পাওয়া যায়।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জালাল সাইফুর রহমান বলেন, লতুয়ামুড়াসহ ১১টি বিদ্যালয়ে ভবনের অভাব রয়েছে। বেশির ভাগ ভবনই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তাই লতুয়ামুড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়টিকে প্রথমে রেখে ১১টি বিদ্যালয়েরই ভবন নির্মাণের জন্য শিক্ষা কমিটির মারফত প্রাক্কলন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।






Shares