ট্রেন দুর্ঘটনা চালকের গাফিলতিতে



লোকোমাস্টার (চালক), সহকারী চালক এবং গার্ডের (পরিচালক) গাফিলতিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার মন্দবাগে ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে গঠিত তদন্ত কমিটিগুলোর প্রতিবেদনে এ তথ্য এসেছে। মঙ্গলবার রেলভবনে সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ প্রকাশ করেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।
গত ১২ নভেম্বর ভোর রাতে মন্দবাগ স্টেশনে অপেক্ষমান সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী ‘উদয়ন এপপ্রেস’কে ধাক্কা দেয় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী ‘তূর্ণা নিশীথা এপপ্রেস’। এতে নিহত হন ১৭ জন। আহত হয়েছে ৫৪ জন। দুর্ঘটনার কারণে রেল মন্ত্রণালয় এবং রেলওয়ে চারটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে।
রেলমন্ত্রী জানান, তিনটি কমিটির প্রতিবেদন পেয়েছেন। সবক’টিতেই বলা হয়েছে দুর্ঘটনার কারণ চালকের অসর্তকতা। ‘তূর্ণা নিশীথা’র চালক তাসির উদ্দিন তিনটি সিগন্যাল অমান্য করে স্টেশনে প্রবেশ করে ‘উদয়ন এপপ্রেস’কে ধাক্কা দেয়। ট্রেন থামাতে সময়মত ব্রেক করেননি চালক। ভ্যাকুয়াম খুলে দিয়ে ট্রেন থামানোর সুযোগ ছিল গার্ডের। গার্ড আবদুর রহমান সেই দায়িত্ব পালন করেননি।
দুর্ঘটনা প্রতিরোধে পাঁচটি সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটিগুলো। এগুলো হলো- ট্রেনের লোকোমোটিভে (ইঞ্জিনে) সিসি ক্যামেরা স্থাপন, ট্রেন পরিচালনার সঙ্গে যুক্তদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ, ট্রেন পরিচালনায় যুক্ত কর্মচারীদের শূণ্য পদ দ্রুত পূরণ করা, স্টেশন ও ট্রেনের মধ্যে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করা এবং স্বয়ংক্রিয় ট্রেন থামানো (এটিএস) পদ্ধতি চালু করা। নূরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছেন, এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করবে মন্ত্রণালয়।
রেলের মহাপরিচালক মো. শামসুজ্জামান সংবাদ সম্মেলনে জানান, ট্রেনে তিন ধরনের ব্রেক থাকে। এর মধ্যে একটি ‘সুপার ইমারজেন্সি ব্রেক’। তা কষে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ট্রেন থামানো যায়। কিন্তু চালক তাসির ও তার সহকারী অপু দে কেউ ব্রেক করেননি। স্টেশনের আউটারের সিগন্যাল, হোম সিগন্যাল অমান্য করার পর ব্রেক করেন চালক। তখন আর কিছু করার ছিল না।
মহাপরিচালক জানান, চালক ঘুমিয়ে ছিলেন না। ঘুমিয়ে থাকলে তিনি স্টেশনে প্রবেশের পর ব্রেক করতে পারতেন না। স্টেশনের আউটারে ট্রেনটির গতি ছিল ঘণ্টায় ৭৭ কিলোমিটার। উদয়ন এপপ্রেস’কে ধাক্কা দেওয়ার সময় গতি ছিল ২২ কিলোমিটার। চালক ঘুমন্ত অবস্থায় থাকলে ট্রেনের গতি কমত না।
দুর্ঘটনার পর চালক ও গার্ড জানিয়েছিলেন মাটির স্তুপের কারণে তারা স্টেশনের আউটারের লালবাতি দেখতে পারেননি। রেলমন্ত্রী জানান, এ দাবি সঠিক নয়। তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সংকেত দেখতে না পাওয়ার মতো উচ্চতার মাটির স্তুপ পায়নি। চালক তাসির গ্রেড-১ লোকোমাস্টার। তিনি অভিজ্ঞ চালক। অনভিজ্ঞতার কারণে দুর্ঘটনা ঘটেনি।
অতীতের দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালকরা কেউ শাস্তি পায়নি- সাংবাদিকরা এ তথ্য দেওয়ার পর নূরুল ইসলাম সুজন জানান, অভিযুক্ত চালক, সহকারী চালক ও গার্ডকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এখন তাদের বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
১৮৯০ সালের রেল আইনানুযায়ী ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণহানীর ঘটনায় সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড দেওয়া যাবে চালককে। রেল সচিব মোফাজ্জেল হোসেন জানিয়েছেন, যুগপোযোগী আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।