কুমিল্লা ও আখাউড়া স্টেশনের মধ্যবর্তী মন্দবাগ স্টেশনে মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) সকালে ঘটে যাওয়া ট্রেন দুর্ঘটনা সম্পর্কে বেরিয়ে আসছে নানা তথ্য। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা অভিমুখী ‘তূর্ণা নিশীথা’র চালক ও তার সহকারী ঘুমে থাকার কারণে এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
সূত্রমতে, কুমিল্লা থেকে আখাউড়া সিঙ্গেল লাইন হওয়াতে একটি ট্রেনকে স্টেশনে অপেক্ষায় রেখে অপরটিকে যাওয়ার রাস্তা করে দিতে হয়। স্টেশন মাস্টার কন্ট্রোল রুমের সাথে যোগাযোগ করে সিদ্ধান্ত নেয় চট্টগ্রামমুখী উদয়নকে স্টেশনে অপেক্ষায় রেখে ‘তূর্ণা নিশীথা’কে যেতে দেবে। তাই আউটারে তূর্ণাকে অপেক্ষা করতে জ্বলছিল লালবাতি। একটা ট্রেনকে অপেক্ষায় রাখার জন্য থাকে ৩টি সিগন্যাল, আউটার, হোম, স্টাটারসহ বেশ কিছু কারিগরি প্রক্রিয়া। সে সব অতিক্রম করে তবেই ঢোকে অপেক্ষমান ট্রেন। কিন্তু চালক ঘুমে থাকার কারণে কোনো সিগন্যালই ‘তূর্ণা নিশীথা’র চোখে পড়লো না।
সিগন্যাল অমান্য করেই ৬০-৭০ কিলোমিটার বেগে ছুটে আসছিল ‘তূর্ণা নিশীথা’। বিপরীতে চট্টগ্রামমুখী উদয়ন এক্সপ্রেস স্টেশনে ঢুকে যায়। ঢুকে গিয়ে ৩টি বগিকে ধাক্কা দেয় সজোরে। তূর্ণার আঘাতে ওই বগিগুলোর যাএীদের ভাগ্য রচনা হয়ে যায়। ধাক্কায় ড্রাইভার তাছের উদ্দিন, সহকর্মী অপু দে ও গার্ড আব্দুর রহমানের ঘুম ভাঙলেও ততক্ষণে ঝরে যায় অনেকগুলো প্রাণ। এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ঘটনাস্থলের পান-সিগারেট বিক্রেতা রহমত আলী (৩০)। ঘটনার পরপর দায়িত্বে অবহেলার কারণে লোকো মাস্টারসহ ৩ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। রেলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মিয়া জাহান ‘তূর্ণা নিশীথা’র চালকের অবহেলার কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে তাদের প্রাথমিক ধারণার কথা জানান।
এদিকে দুর্ঘটনায় নিহত ১৬ জনের মৃতদেহ গতকালই স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। দুর্ঘটনার পরপরই লাকসাম ও আখাউড়া থেকে দুটি রিলিফ ট্রেন ঘটনাস্থলে এসে উদ্ধারকাজ শুরু করে। উদয়ন এক্সপ্রেস সামনের অক্ষত ৯টি বগি নিয়ে বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রাম পৌঁছায়। আর মূল লাইন মেরামত শেষে বেলা পৌনে ১১টার দিকে ‘তূর্ণা নিশীথা’ ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।