কসবায় ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপনকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ॥আহত অর্ধশতাধিক
রুবেল আহমেদ ॥ কসবায় ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপনকারী আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত সমর্থক ও হেফাজত সমর্থিত সীরাতুন্নবী (সাঃ) উদযাপনকারী ও তাদের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। সোমবার দুপুরে উপজেলা কদমতলী এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দুই দলের সমর্থক ও গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে এক পর্যায়ে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় উপজেলার কদমতলী এলাকা। সংঘর্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে। পরে সেনাবাহীনি ও পুলিশ এসে প্রায় দুই তিনঘণ্টা পর পরিস্থিত নিয়ন্ত্রনে আনেন। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কদমতলী এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহীনি মোতায়েন রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ শাহরিয়ার মুক্তার।
জানা গেছে, প্রতি বছরের মতো আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতাদর্শীরা কসবা উপজেলা চত্বর থেকে জশনে জুলুসের শোভাযাত্রার আয়োজন করে। অপরদিকে হেফাজত ইসলামের কেন্দ্রিয় যুগ্ম প্রচার সম্পাদক মাওলানা গাজী ইয়াকুব ওসমানীর নির্দেশনায় কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা জশনে জুলুসের শোভাযাত্রা প্রতিরোধের ঘোষণা দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সকালে কদমতলী এলাকায় সদর হাসপাতাল মোড়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ও কওমিপন্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে দুপক্ষের লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। পরে ঈদে মিলাদুন্নবী পালনকারীরা ও হেফাজত সমর্থিত সীরাতুন্নবী পালনকারী এবং আড়াইবাড়ী গ্রামবাসী সংঘর্ষে জড়ায়।
এ বিষয়ে হেফাজত ইসলামের কেন্দ্রিয় যুগ্ম প্রচার সম্পাদক মাওলানা ইয়াকুব উসমানী জানান, পৌরসভার সুপার মার্কেট চত্ত¦রে তাদের পক্ষ থেকে সীরাতুন্নবী (সাঃ) উপলক্ষে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। তাদের লোকজন একত্রিত হওয়ার জন্য কদমতলী কোরআন ভাস্কর্যের সামনে সমবেত হতে থাকে। সকাল ১০ টার দিকে পার্শ্ববর্তী টিআলী বাড়ীর মোড় থেকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারী পুরকুইল দরবার শরীফের পীর ছদর উদ্দিন সাহেবের সমর্থিতরা এসে তাদের উপর হামলা করে এবং কোরআনের ভাস্কর্য ও আড়াইবাড়ী মাদরাসায় আক্রমন করে। পরে তাদের সাথে আমাদের সমর্থকদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। আড়াইবাড়ী মাদরাসায় আক্রমন করায় গ্রামবাসীও তাদের উপর চড়াও হয়।
এ বিষয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ঈদে মিলাদুন্নবী সমর্থিত পুরকুইল দরবার শরীফের পীর সাহেব মাওলানা ছদর উদ্দিন বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছতেই পারিনি। এর আগেই হেফাজত সমর্থিত লোকজন নিজেরাই কোরআনের ভাস্কর্য ও আড়াইবাড়ী মাদরাসায় আক্রমন করে আমাদেরকে দোষারোপ করে গ্রামবাসীকে ক্ষেপিয়ে দিয়েছে। আমাদের জশনে জুলুশ বানচাল করার জন্য এবং আমার সাথে যাওয়া লোকজনের উপর হামলা করেন। আমার বহু লোকজন আহত হয়েছে।
আড়াইবাড়ী দরবার শরীফের পীর সাহেব মাওলানা গোলাম খাবির সাঈদি বলেন, হেফাজত নেতাদের সাথে জশনে জুলুশ নিয়ে সুন্নী সম্প্রদায়ের লোকজনের সাথে সংঘর্ষের ঘটনায় আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। জশনে জুলশকারীরা আমাদের মাদরাসায় ও কদমতলী মোড়ে কোরআনের ভাস্কর্য ভাংচুর করে বলে দাবী করেন। মাদরাসায় হামলা করায় গ্রামবাসী তাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ শাহরিয়ার মুক্তার বলেন, দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনী মোতায়েন রাখা হয়েছে।