পুলিশের পিটুনিতে ফল বিক্রেতার পা ভেঙ্গেছে



আখাউড়া প্রতিনিধি: ব্রাহ্মণবাড়িয়া আখাউড়া পুলিশের চার সদস্য উপজেলার আজমপুর গ্রামের নোয়ামুড়া এলাকায় বাহার মিয়া নামের এক ফল বিক্রেতাকে পিটিয়ে পা ভেঙ্গে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে আজমপুর গ্রামের নোয়ামুড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।
বাহার উপজেলার আজমপুর গ্রামের নোয়ামুড়া এলাকার মো খালেকের পুত্র। তিনি বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাহার আজমপুর ট্রেনে ও রেলস্টেশনে ফেরি করে কমলা ও আপেল বিক্রি করে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগে ভর্তি থাকা বাহার মিয়া ভাষ্য মতে, গত শুক্রবার সকার ১১টার দিকে শীত বেশি পড়ায় সে বাড়ির উঠানে রোদ পুহাচ্ছিল। তখন আখাউড়া থানা পুলিশের দুই সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মৃণাল কান্তি ও মো. জালালসহ চার জন পুলিশ সদস্য আজমপুর গ্রামে তাঁর বাড়িতে যায়। পুলিশ সদস্যরা তাকে ডেকে নিয়ে একটি ঘরে ঢুকে তাঁর ঘরে বাড়ি তল্লাশি করার কথা বলে ঘরটি তল্লাশি করেন। পুলিশ তলাশি করে তাঁর ঘরে কিছুই পায়নি। তখন বাহার তাঁর বাড়িতে কিছু নেই এমনটা পুলিশ সদস্যদের জানায়। পুলিশ সদস্যরা তখন বাহারকে বলে, কিছু না থাকলে সমস্যা নেই। তাদের পকেটে গাঁজা ও ফেন্সিডিল আছে। এসব দিয়ে তাকে চালান দেওয়া হবে বলে তাকে জানান তারা। এসব কথা শুনে বাহার ভয় পেয়ে পালানোর জন্য দৌঁড় দিলে পুলিশ সদস্যরা তাঁর পিছনে তাড়া করে । এ সময় তাদের হাতে থাকা হেন্ডকাপ দিয়ে তাকে উদ্দেশ করে ঢিল ছুঁড়ে। হেন্ডকাপটি তাঁর ডান পায়ের ঘোড়ালির উপরে পড়লে সে মাটিয়ে লুটিয়ে পড়ে। এতে তাঁর পায়ের ওই অংশে ক্ষত হয়ে যায়। পরে পুলিশ সদস্যরা পায়ের বুট জুতা দিয়ে তাঁর ক্ষত অংশে আঘাত করতে থাকে। এক পর্যায়ে বাহারের চিৎকার শুনে লোকজন এগিয়ে আসলে পুলিশ সদস্যরা ওই জায়গা থেকে দ্রুত পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন এসে উদ্ধার করে তাকে বাড়িতে নিয়ে যায়। বাহারের স্ত্রী নাজমা বেগম, তাঁর ভাবী সায়েরা খাতুন ও তাঁর ভাইয়ের মেয়ে শিউলি বেগম রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে আখাউড়া থানায় নিয়ে যায়। আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাহারের অবস্থা দেখে পুলিশ সদস্যদের বিচার করবেন বলে বাহারের স্ত্রী ও স্বজনদের আশ্বাস দেন। তিনি বাহারকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে বললে স্বজনরা তাকে আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেণ। গত শুক্রবার সন্ধ্যা আটটার দিকে বাহারকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বাহার মিয়া অভিযোগ করে বলেন, পুলিশরা সব সময় এভাবে টাকার জন্য মানুষকে বিরক্ত করে। তারা মানুষদের তালাশি করে পকেটে থাকা ফেন্সিডিল ও গাজা দিয়ে মানুষদের ফাসিয়ে দেয়। গত চার/পাঁচ মাস আগেও তারা আমার সাথে এমন করেছিল। এবারও টাকার জন্য তারা আমার বাড়িতে এসেছিল।
আজমপুর গ্রামে বাহারের প্রতিবেশী মানিক মিয়া জানান, চিৎকার শুনে তিনি বাড়িতে বের হন। বাহার মাটিয়ে লুটিয়ে পড়েছিল আর পুলিশের চার সদস্য তাকে বেধড়ক পিটাচ্ছিলেন। স্থানীয় লোকজন তারা এগিয়ে গেলে পুলিশ সদস্যরা মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়।
বাহারের স্ত্রী নাজমা বেগম জানান, প্রায় চার/পাঁচ মাস আগে একদিন সন্ধ্যায় বাহার আজমপুর রেলস্টেশন থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। তখনও পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায় এবং মোটা অংকে টাকা দাবি করে। পুলিশ সদস্যদের টাকা দিলে পরদির সকালে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
বাহারের ভাই আব্দুল আওয়াল জানান, আমি তখন বাড়িতে ছিলাম না। খবর পেয়ে বাড়িতে এসে বাহারকে এ অবস্থায় দেখতে পায়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগের কনসালটেন্ট ফখরুল আলম জানান, বাহারের পায়ের গোড়ালির উপরের অংশে ক্ষত ছিল এবং ওই জায়গার হাড় ভেঙ্গে গেছে।
আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অং সা থোয়াই জানান, ওই গ্রামে আওয়াল নামে এক ব্যক্তি মাদক ব্যবসা করে। তকে গ্রেপ্তার করতে আখাউড়া থানার দুই উপ পরিদর্শক (এসআই) মো. জালাল ও মৃণাল কান্তি সেখানে মোটরসাইকেলে যায়। পুলিশ দেখে বাহার দৌড়ে পালিয়ে যায়। পালানোর সময় সে একটি গর্তে পড়ে তার পা ভেঙ্গে ফেলে। পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বাহারের স্ত্রীর কাছে এমন আশ্বাসের কথা বলেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, স্বজনরা তাকে হাসপাতালে নেওয়ার আগে আমার কাছে নিয়ে এসেছিল। তবে তিনি এমন কথা বলেননি।