প্রতিনিধি ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে পুলিশের দারোগার কাছে ঘুষের টাকা ফেরত চাওয়ায় মামলার বাদী ও স্বজনদের গ্রেপ্তারের হুমকি দিচ্ছে পুলিশ। পুলিশের লিখে দেয়া একটি কাগজে বাদীর স্বাক্ষর আদায়ের জন্য নানান কৌশলে দিনরাত চাপ দিচ্ছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। স্বাক্ষর না করলে মামলার বিশাল ক্ষতি হয়ে যাবে এমনটি বলছেন বার বার। এ ঘটনায় বাদী শিউলী বেগম তার তিন মাস বয়সী কন্যা শিশুকে নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তার বৃদ্ধ পিতা ও স্বজনরা ২৪ ঘন্টা পার করছেন আতঙ্কে। ঝামেলা থেকে বাঁচতে হলে পুলিশের লিখে দেওয়া কাগজে স্বাক্ষর করার জন্য পুলিশের বশিভূত বিভিন্ন লোক দিয়ে তদবির করা হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলা সদর ইউনিয়নের সৈয়দটুলা বাঘাসুতা গ্রামে বাদী শিউলী বেগমের বাড়িতে গিয়ে এসব জানা গেছে। এলাকাবাসী জানান, গত ২৮ জুলাই বিভিন্ন গনমাধ্যমে সরাইল থানার দ্বিতীয় কর্মকর্তা ফরহাদ আব্বাসকে দেয়া ঘুষের দেড় লক্ষ টাকা ফেরত চাওয়ার বিষয়টি প্রকাশিত হয়। বিষয়টি ধামা চাপা দিতে মামলার আইও ফরহাদ আব্বাস দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। বিভিন্ন কৌশলে বিষয়টি অস্বীকার করার জন্য বাদী ও তার স্বজনদের উপর চাপ অব্যাহত রাখেন। দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক বরাবর ঘুষের টাকা দেয়া, ফেরত চাওয়া ও থানায় ধরনা সকল বিষয় মিথ্যা বানোয়াট ইত্যাদি লিখে শিউলীর স্বাক্ষরের জন্য সময় বেঁধে দিয়ে তার পিতার নিকট একটি কাগজ পাঠিয়েছেন ফরহাদ আব্বাস। গতকাল বৃহস্পতিবারই ছিল স্বাক্ষর দেয়ার শেষ দিন। সময় পার হলেই বিপদে পড়তে হবে পুলিশের পক্ষ থেকে এমন নির্দেশনা ছিল বাদীর প্রতি। সত্যকে মিথ্যায় পরিণত করতে নারাজ বাদী ও তার স্বজনরা। স্বাক্ষর তারা দেয়নি। শিউলী বেগমের পিতা আবদুল আলীম (৬২) বলেন, প্রতিপক্ষের মামলার ফাইনাল দেয়ার কথা বলে দারোগা ফরহাদ তিন লাখ টাকা দাবী করেছিল। দেড় লাখ টাকা দিয়েছি। আমার বিধবা মেয়েটা মিথ্যা মামলার আসামী হয়ে এখন গ্রাম ছাড়া। কোন কাজ করেনি। টাকা ফেরত চাওয়ায় উল্টো আমাদেরকে হুমকি দিচ্ছে পুলিশ। একটি কাগজ লিখে পাঠিয়েছে স্বাক্ষর দেয়ার জন্য। টাকা দেয়ার বিষয়টি দারোগা অস্বীকার করছে কেন ? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, দারোগা এখন বিপদে পড়েছে তাই এমনটি বলছে। শিউলীর চাচা আবদুল হামিদ (৬০) বলেন, আমি সহ কয়েক জনে রফিকের বাসায় বসে ফরহাদ স্যারকে নিজ হাতে এক লাখ টাকা দিয়েছি। তিনি বলেছেন এ টাকা থেকে ওসি সার্কেল এসপি সহ অনেককে দিতে হবে। তবে তার দাবী ছিল তিন লাখ। ফরহাদ স্যার একটি কাগজ লিখে স্বাক্ষরের জন্য পাঠিয়েছেন। কাগজের কথাগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। তিনি নিজের সুবিধার জন্য এ কাগজে স্বাক্ষর নেয়ার চেষ্টা করছেন। শিউলীর ভগ্নিপতি জামাল মিয়া জানান, দেড় লাখ টাকা দারোগা ফেরত দিবে এমন আশ্বাস দিয়ে আমাকে দুই দিন ঘুরিয়েছেন স্বল্পনোয়াগাঁও গ্রামের রফিক মিয়া। এ বিষয়ে এস আই ফরহাদ আব্বাসের সাথে কথা বলতে থানায় গেলে তাকে থানায় গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উত্তম কুমার চক্রবর্তী বলেন, পুরো বিষয়টি আমার অজানা। পত্রিকার রিপোর্ট পড়ে আমি সকল বিষয় জেনেছি। গত ১ জুলাই উপজেলা সদরের প্রাতঃবাজার এলাকায় নিজ বাড়িতে প্রবাসী মাজু মিয়াকে প্রথম স্ত্রী ও তার তিন সন্তানসহ অন্যরা নৃশংসভাবে খুন করে। এ ঘটনায় তার দ্বিতীয় স্ত্রী শিউলী বেগম মামলা করলে পুলিশ মাজু মিয়ার প্রথম স্ত্রী আনোয়ারা বেগম ও ছেলে আকবর মিয়াকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে ৭ জুলাই এ খুনের ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাল্টা মামলা করে মাজু মিয়ার বড় মেয়ে শিল্পী আক্তার। এতে শিউলী বেগম ও তার স্বজনদের আসামি করা হয়। আদালত দু’টি মামলা একত্রে তদন্তের নির্দেশ দেন। |