বিজয়নগরে মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন




ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় মনির উদ্দিন খাঁন নামে এক প্রভাবশালী প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে বয়োজ্যেষ্ঠ আবু তাহের (৬৫) ও তার পরিবারকে একের পর এক ভুয়া মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার বেলা ১২টার দিকে উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের খাটিঙ্গা গ্রামে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
মনির উদ্দিন খাঁন উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের খাটিঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা। বয়োজ্যেষ্ঠ আবু তাহেরও একই গ্রামের বাসিন্দা ও মনিরের প্রতিবেশী।
বুধবার বেলা ১২টার দিকে খাটিঙ্গা বাজারে মানববন্ধনের আয়োজন করে এলাকাবাসী। মানববন্ধনে বয়োজ্যেষ্ঠ আবু তাহের মিয়া সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সিরাজ খাঁ, আবু তালেব, আবু তাহের চৌধুরী, আবুল ফায়েজ প্রমুখ। বাজারের ব্যবসায়ীরাও মানববন্ধনে অংশ নেন।
আবু তাহের মিয়া বলেন, মনির উদ্দিন খাঁন একের পর এক ভুয়া ও মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে ও আমার পরিবারকে হয়রানি করতেছে। এলাকার সবাই এসব জানে। মূলত জমিজামা নিয়ে বিরোধের জেরে এসব করছে মনির। মনির এলাকার একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তাঁর মাদকের ব্যবসা সম্পর্কেও এলাকার সবাই জানে।
গ্রামের আবুল ফায়েজ, সিরাজ খাঁ ও আবু তালেব বলেন, আবু তাহের ও তার পরিবারের সবাই ভালো মানুষ। মনির উদ্দিন খাঁন টাকা পয়সা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মানববন্ধনসহ অপপ্রচার চালাচ্ছে। বিভিন্ন মামলা দিয়ে অযথা হয়রানি করতেছে। এই যে হায়রানি করাচ্ছে, এর একটিও সত্য নয়।
আবু তাহের চৌধুরী বলেন, উপরের কোনো মহলের মাধ্যমে এভাবে হয়রানি করছে মনির। আমরা প্রশাসনসহ সরকারের কাছে এসব বিষয় সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
মানববন্ধন শেষ হওয়ার পরপরই নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে আবু তাহের মিয়া। এসময় তিনি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। তিনি বলেন, গ্রামের মনির উদ্দিন খাঁনের সঙ্গে জমি নিয়ে আমার বিরোধ চলে আসছে। মনির চলতি বছর জমিজামার বিষয় নিয়ে আমার বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর সিনিয়র সহকারী জাজ আদালতে মামলা করেন, যা চলমান রয়েছে।
মামলা দায়ের করার পর কোনো দলিলপত্র দেখাতে পারেনি মনির উদ্দিন খাঁন। আদালত অসন্তুষ্ট হয়ে মনিরের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করে আদালত। এতে ক্ষিপ হয়ে মনির আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করা শুরু করে। একের পর এক কাল্পনিক কাহিনী সাজিয়ে মিথ্যা ফৌজদারী মামলা দায়ের করেন মনির। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল (বিজয়নগর) আদালতে দায়ের করা এক মামলার তদন্ত হয়। তদন্তে মনিরের এক মামলার ঘটনা সঠিক নয় বলে প্রমাণিত হয়।
তিনি বলেন, মনির উদ্দিন নিজে ও তার সহযোগীদের বাদী করে পরপর আমাদের বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিনিয়র জুড়িসিয়াল (বিজয়নগর) আদালতে পাঁচটি মামলা দায়ের করে। পাঁচটি মামলাই ভুয়া, মিথ্যা ও কাল্পনিক ঘটনা দিয়ে সাজানো বলে তিনি দাবি করেন।
তিনি জানান, গত ৩ এপ্রিল মনির নিজে বাদী হয়ে, আবু তাহের, তার বড় ছেলে ও বড় ভাই আবুল ফায়েজ মিয়াকে আসামী করে আদালতে মামলা করেন। মামলয় উল্লেখ করা অভিযােগ প্রমাণিত না হওয়ায় এই মামলা থেকে আমাদের স্থায়ী জামিন দিয়েছে আদালত।
তিনি বলেন, মনির ও তার সহযােগীদের করা মামলায় সাক্ষী ৩/৪ ছাড়া আর কেউ নেই। তারাই ৩/৪ বাদী হয়ে মামলা করছেন আবার তারায় সাক্ষী হচ্ছেন। এসব মামলার কোনো সত্যতা নেই। সব মিথ্যা ও বানােয়াট। তিনি মনির ও তার লোকজনের একের পর এক মামলা দিয়ে হয়রানির ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, আমি এসবের বিরুদ্ধে বিচার চাই।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল প্রথম আদালতে মনিরের সহযোগী শাহ আলমের মামলাটি তদন্ত করেন উপজেলার আউলিয়া বাজার তদন্ত কেন্দ্রের উপপরিদর্শক মোজাম্মেল হক। তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়, শাহ আলম তার ছেলেকে সৌদি আরব পাঠাতে আলামিন ও তার বাবা আবু তাহের মিয়া সঙ্গে সাড়ে চার লাখ টাকার চুক্তি করেন। দুই কিস্তিতে শাহ আলম মামলার আসামি আবু তাহের ও তার ছেলেকে আর আমিনকে তিন লাখ টাকা দেন। মনির উদ্দিনসহ মামলার ৬জন সাক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার কোনো ধরনের সত্যতা পায়নি। ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়নি মর্মে গত ৩ আগস্ট আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত মনির উদ্দিন খাঁন বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই বাইরে বড় হয়েছি ও দীর্ঘদিন মালয়েশিয়া ছিলাম। আবু তাহের ও তার ভাই আবুল ফায়েজের দখলে ১৩৪ শতক জমি রয়েছে। সেখানে তারা পৈত্রিক সূত্রে ১০০শতক ও আমি ৩৪শতক জমি পাওনা। জমি ফেরত চাইলে বিরোধ শুরু হয়। আমি কোনো হয়রানি করছি না।
আবু তাহের মিয়া ও আবুল ফায়েজ বলেন, মনির আমাদের কাছে কোনো জায়গা পাওনা না। শুধু শুধু হয়রানি করছে।
« সরাইলে আশ্রয়ণের ভীত নির্মাণের পর প্রমাণ হলো জায়গাটি ব্যাক্তি মালিকানার , সরকারের লাখ টাকা গচ্ছা (পূর্বের সংবাদ)