উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় ছাত্রী ও তার মাকে মারধর
প্রতিনিধি : উত্ত্যক্তের ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে দশম শ্রেণীর এক স্কুল ছাত্রী ও তার মা উত্ত্যক্তকারীদের হামলায় গুরুতর হয়েছেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই স্কুল ছাত্রীকে উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দি লাইফ কেয়ার হাসপাতাল ও তার মা জুলেখা বেগম (৩৫) কে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গত রোববার বিকেলে উপজেলার চম্পকনগর ইউনিয়নের সোনাবির্ষপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
তাদের বাড়ি উপজেলার চম্পকনগর ইউনিয়নের সোনাবির্ষপাড়া গ্রামের সেলিম খন্দকারের মেয়ে। সে চম্পকনগর মডেল স্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেণীর ছাত্রী। এ ঘটনায় মেয়েটির বাবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এলাকাবাসী ও অভিযোগ থেকে জানা যায়, উপজেলার সোনবার্ষিপাড়া গ্রামে ওই মেয়েটির বড় চাচা মন্তু মিয়ার ছেলে সুমন মিয়া (২৮) আট মাস আগে বিদেশ থেকে আসে। সুমন ওই মেয়েকে একটি বোরকা দেয়। মেয়েটির বাবা সেলিম খন্দকার, দ্ইু চাচা মন্তু মিয়া ও সোনা মিয়ার মাঝে পাঁচ ছয়মাস আগে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ ছিল। বেশ কিছু দিন ধরে মন্তু মিয়ার তিন ছেলে- সজল মিয়া (২০), উজ্জল মিয়া (১৭), আপন মিয়া (১৫) ও একই গ্রামের সোনা মিয়ার ছেলে- সাদ্দাম হোসেন (২২) বশির মিয়া (১৮) রাসেল মিয়া (১৫) দশম শ্রেণীর ওই ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করে আসছে। গত রোববার সকালে ওই ছাত্রী প্রাইভেট পড়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়। বাড়ির একটু সামনে যাওয়ার পর সজল, উজ্জল, আপন, সাদ্দাম, বশির ও রাসেল তার পথ অবরোধ করে তাকে উত্ত্যক্ত করেন। তারা মেয়েটির পরনে থাকা বোরকা টেনে হিচড়ে জোরপূর্বক খুলে ফেলতে চাই। তাদের উত্ত্যক্ত থেকে বাঁচার জন্য ওই ছাত্রী বাড়িতে ফিরে যায়। সে বিষয়টি তার বাবাকে জানায়। তার বাবা ওই ছাত্রীকে সাথে নিয়ে বিষয়টি লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বশিরুল হক ভূঁইয়াকে জানান। পরে ইউএনও সেলিমকে অভিযোগের একটি কপি বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছেও জমা দিতে বলেন। পরে সেলিম দুপুর তিনটার দিকে তার মেয়েকে নিয়ে থানায় যায়। থানায় অভিযোগ জমা দেওয়ার পর সেলিম তার মেয়েকে বাড়িতে পাঠান। অভিযোগ পাওয়ার পর বিজয়নগর থানা পুলিশ সেলিমকে সাথে নিয়ে বিষয়টি তদন্ত করার জন্য সোনাবির্ষপাড়া গ্রামে যান। উত্ত্যক্তকারীরা বাড়িতে না থাকায় পুলিশ থানায় ফিরে যায়। প্রত্যক্ষদর্শী ও ওই ছাত্রীর পরিবার জানায়, পুলিশ চলে যাওয়ার পর মেয়েটির চাচাতো ভাই রাম দা, ছুরি ও লাঠিসহ বেশ করেকটি দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ওই ছাত্রীর বাড়িতে ভাঙ্গচুর ও লুটপাট চালায়। এ সময় উত্ত্যক্তকারীরা ওই ছাত্রীকে শারিরিকভাবে লাঞ্ছিতও করে। তার ওই ছাত্রী ও তার মায়ের উপর হামলা চালায়। হামলায় ওই ছাত্রীর বাম হাতের একটি আঙ্গুল ভেঙ্গে যায়। পরে তাদের চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এসে তাদের উদ্ধার করে। বর্তমানে তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি বেসরকারি ক্লিনিক দি লাইফ কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দশম শ্রেণীর ওই ছাত্রী বলেন, বেশ কিছু দিন ধরে স্কুলে আসা যাওযার পথে তারা (উত্ত্যক্তরীরা) তাকে উত্ত্যক্ত করে আসছে। গত রোববার তারা আামার পরনে থাকা বোরকা টেনে খুলে ফেলতে চেয়েছে। পরে আমি বাড়ি ফিরে যাই। ওই ছাত্রী আরও জানায়, বিকেলে তার মাকে আক্রমন করার সময় সে বাধা দিলে তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও মারধর করা হয়। ওই ছাত্রী জানতে চাই, সে কি এ ঘটনার বিচার পাবে না ?
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বশিরুল হক ভূইয়া বলেন, লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি তদন্ত করার জন্য আমি ওসিকে বলেছি। পরে বিকেলে ওই মেয়ে ও তার মাকে মারধরের কথা জেনে ওসিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পুনঃরায় বলেছি।
বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রসুল আহমেদ নিজামী, উত্ত্যক্তকারীরা ওই মেয়েটির চাচাতো ভাই। তাদের মাঝে সম্পত্তি নিয়ে দ্বন্ধ চলছে। গত রোববার থানায় কোন লিখিত অভিযোগ দিয়েছে কিনা জানতে চাইলে ওসি জানান, গত রোববার প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার সময় মেয়েটির চাচাতো ভাই তাকে উত্ত্যক্ত করেছে এমন একটি লিখিত অভিযোগ থানায় দিয়েছে।