ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় লিচু উৎপাদনে বিপর্যয়, চাষীরা বিপাকে কোটি কোটি টাকা ক্ষতির আশংকা
লিচু। পুষ্টিকর সু-স্বাদু ফল। রসালো টক টকে লাল লিচু দেখলে কার মন না চাইবে ফলটি খেতে। গত কয়েক বছর ধরে ব্রাহ্মনবাড়িয়ার বিজয়নগরে বানিজ্যিক ভিত্তিতে লিচু চাষ হচ্ছে। অত্যন্ত লাভ জনক লিচু বিক্রী করে চাষীরা বেজায় খুশী। হঠাৎ কৃষকের যেন বাজ পড়েছে। চাষীরা দিশেহারা। জলবায়ুর পরিবর্তন জনিত সমস্যায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে লিচু উৎপাদনে। এমনিতে বিজয়নগরে প্রতিবছর ১০/১৫ কোটি টাকার লিচু বেচা কেনা হয়। আশা করা হয়েছিল এবার আরো বেশী বিক্রী হবে। কিন্তু ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। চাষীদের মধ্যে চলছে হাহাকার। বিক্রী তো দূরের কথা খাবারের লিচুই মিলবে না এবার। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না বলে জানিয়েছে লিচু চাষীরা।
বিজয়নগর উপজেলার আওলিয়া বাজারে প্রতিদিন কাক ডাকা ভোরে অর্ধকোটি টাকার লিচু পাইকারী বিক্রি হত। কুমিল্লা, সিলেট, চট্রগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত হত এখানকার লিচু। কিন্তু এ বছর বৈরী আবহাওয়ায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় চাষীদের সেখান থেকে আবহাওয়ার বৈরীতায় উৎপাদনে ধ্বস নেমেছে। যে লিচুর বাগান গত বছর ৩ লাখ টাকা বিক্রী হয়েছে, সে বাগানে এবার খাবারের লিচু নেই। কর্মকর্তারা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ন সহনশীল জাত উদ্ভাবন করার জন্য কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউটকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সঠিক ভাবে ফলন না হওয়ায় কয়েক কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির আশংকা দেখা দিয়েছে।
আশির দশকে ব্রাহ্মনবাড়িয়ার বিজয়নগরে লিচু চাষ শুরু হয়। প্রতিকুল আবহাওয়ায় চলতি অর্থ বছরে জেলায় লিচু উৎপাদনে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। চলতি মওসুমে জেলায় ১২ শ ৫০ মেট্রিক টন লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার বাজার মুল্য অন্তত ৩০ কোটি টাকা। আবাদ হয়েছে ৪৫০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদিত লিচুর মধ্যে বোম্বে, পাটনাই ও চায়না থ্রী উল্লেখযোগ্য। চারা রোপনের ৩/৪ বছর পরেই গাছে ফল আসে। গুনগতমান ভাল ও বিষমুক্ত হওয়ায় এর কদর দিন দিন বৃদ্ধি পায়। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ও কুমিল্লা, সিলেট, চট্রগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত হচ্ছে এখানকার লিচু। গত ফেব্রুয়ারী মাসে অতিরিক্ত শীত পড়ায় এবং পরবর্তীতে অসময়ের ভারি বৃষ্টিপাতে লিচু গাছের ফুল ঝরে যায়। এতে লিচু চাষ মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ফলন ভালো না হওয়ায় চলতি বছর লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না। এতে শত শত লিচু চাষি মারাত্মক অর্থনৈতিক ক্ষতির কবলে পড়েছে। একজন লিচু চাষী জানান কোন বাগানে তেমন লিচু আসে নাই। দেশী গাছে কিছু লিচু আসলেও বোম্বে গাছে কোন লিচু আসে নাই। লিচু চাষী কবির হোসেন বলেন, অতিরিক্ত শীত ও বৃষ্টিতে লিচুর ফুল ঝড়ে যায়, অসময়ের বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গেছে। গাছে অনেক লিচুই আসেনি আবার আসলেও ঝরে গেছে। মাহবতাব বলেন, কৃষকের কোটি কোটি টাকার লস হয়েছে। বোম্বাই-পাটনা জাতের লিচু ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। দেশী জাতের গাছে কিছু লিচু এসেছে। কৃষকের অনেক ক্ষতি হয়েছে। বাগান মালিক ফরিদ উদ্দিন ভুইয়া বলেন, এ বছর আমাদের এখানে প্রাকৃতিক কারনে লিচু ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। উৎপাদন কম হয়েছে। যে বাগে ৩ লাখ টাকার লিচু গত বছর বিক্রি হয়েছে। সেই বাগান থেকে এ বছর খাবারের জন্য লিচু ও পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা এ ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারন প্রশিক্ষণ অফিসার, সাইফুল আলম এ প্রতিবেদককে বলেন, এবার লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না। চাষিরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ন সহনশীল জাত উদ্ভাবন করার জন্য কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউটকে পরামর্শ দিয়েছি।