আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ৫১ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে সম্প্রসারণের উদ্যোগ:: সম্ভাব্য ব্যয় ৩ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা
ডেস্ক ২৪::ভারতীয় ঋণের টাকায় ট্রানজিটের সড়ক নির্মাণ করা হবে। এ জন্য আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত প্রায় ৫১ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প প্রস্তাব পাঠিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
এ প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা। ২০০ কোটি ডলারের ভারতীয় দ্বিতীয় লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) প্রকল্প তালিকায় এ প্রকল্পটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ প্রকল্পে এলওসি থেকে পাওয়া যাবে প্রায় ২ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা। বাকি টাকা সরকার নিজে দেবে।
দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান নৌ প্রটোকলের আওতায় ট্রানজিট নিচ্ছে ভারত। ট্রানজিট পথটি হলো কলকাতা থেকে আশুগঞ্জ পর্যন্ত নৌপথে; আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া পর্যন্ত সড়কপথে গিয়ে আগরতলা পৌঁছানো হয়। গত রোববার থেকে নিয়মিত ট্রানজিটের প্রথম চালান এক হাজার টন স্টিল শিট আশুগঞ্জ থেকে সড়কপথে আগরতলায় নেওয়া শুরু হয়েছে।
কয়েক মাস আগেই আশুগঞ্জ নদীবন্দর-সরাইল-ধরখার-আখাউড়া স্থলবন্দর মহাসড়ককে চার লেন জাতীয় মহাসড়কে উন্নীতকরণ প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। গত ২৮ এপ্রিল এ প্রকল্পটি নিয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রকল্পের কেনাকাটা ব্যয় নিয়ে আরও সুস্পষ্ট করার নির্দেশ দেওয়া হয়। শিগগিরই সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর থেকে সংশোধিত পূর্ণাঙ্গ প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (ভৌত অবকাঠামো বিভাগ) খোরশেদ আলম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ত্রিপুরার সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও ট্রানজিট যোগাযোগ সহজ করতে এ প্রকল্পটি বেশ ভালো। প্রস্তাবের কিছু অংশে সংশোধনের জন্য সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। ওই অধিদপ্তর থেকে সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানোর পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, তা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।
২০১৬ সালের মার্চ মাসে শুরু হয়ে প্রকল্পটি শেষ হবে ২০১৯ সালের জুন মাসে। এ প্রকল্পের আওতায় বিদ্যমান সড়ক চার লেনে উন্নীত করার পাশাপাশি দুটি বড় সেতু হবে। এ ছাড়া কিছু ছোট সেতু-কালভার্ট, আন্ডারপাস, রেল ওভারপাস ইত্যাদি নির্মাণ করা হবে। ১২৩ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হবে।
গত সপ্তাহে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত পণ্যবাহী ভারী যান চলাচলের জন্য উপযোগী নয়; সড়কটি বেশ সরু। শুধু আশুগঞ্জ থেকে সরাইল বিশ্বরোড মোড় পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার সিলেট মহাসড়কের অংশ হওয়ায় তা ভারী যান চলাচলের অনেকটাই উপযোগী। এরপর সরাইল বিশ্বরোড থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর হয়ে ধরখার পর্যন্ত সড়কটি বেশ সরু। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সুহিলপুর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সড়কের বেশ কিছু অংশে ভাঙাচোরা দেখা গেছে। এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর পেরিয়ে রামরাইল, রাধিকা হয়ে ধরখার পর্যন্ত বেশ কিছু স্থানে সড়কের পিচ ঢালাই উঠে গেছে; ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ধরখার থেকে আখাউড়া স্থলবন্দরের কাছাকাছি সেনারবদি পর্যন্ত প্রায় ১১ কিলোমিটার সড়ক অত্যন্ত সরু এবং বেশ কিছু বিপজ্জনক মোড় রয়েছে। এ কারণে পণ্যবাহী ট্রাক ও ট্রেইলর চলাচল বেশ কষ্টসাধ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ। এ সড়কের আলেকপুর ও চিনাইর এলাকায় দুটি সেতুর জরাজীর্ণ দশা। স্থলবন্দর-সংলগ্ন নারায়ণপুর এলাকায় প্রায় ১০০ ফুট সড়ক দেবে গেছে। এ ছাড়া তিতাস নদের কিছুটা আগে রেলপথে লেভেল ক্রসিং নেই।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ট্রাক ও ট্যাংকলরি চালক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ইদন মিয়া বলেন, এ সড়কে ভারী পণ্যবাহী ট্রাক চালাতে কষ্ট হয়। বিপজ্জনক মোড়ের কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে।সূত্র:: প্রথম আলো