নাসিরনগরে কৃষকের পাকা ধানের স্বপ্নে শিলাবৃষ্টির ছোবল
মুরাদ মৃধা,নাসিরনগর সংবাদদাতাঃ কালবৈশাখী ঝড়ে কৃষকের পাকা ধান ঘরে তুলার স্বপ্ন হঠাৎ করেই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কৃষকের স্বপ্ন ম্লান করে দিয়েছে অসময়ের শিলাবৃষ্টি। কৃষক যখন পাকা ধান ঘরে তোলার স্বপ্ন দেখছিলেন ঠিক তখনই শিলা বৃষ্টিতে তাদের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়। পাশাপাশি গাছপালা ও ঘরবাড়িরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ভলাকুট ইউনিয়নে প্রায় ২১৫০ হেক্টর জমিতে এবছর বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৭শত হেক্টর জমিতে বিয়াড় আটাশ চাষ করা হয়েছিল। কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে এসকল জমির প্রায় ৯৯শতাংশ পাকা ধান জড়ে গেছে বলে নিশ্চিত করেন ভরাকুট ব্লকের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মমিনুল হক।
মোবাইল ফোনে কৃষক নোয়াব খান জানান,আমি কৃষি ব্যাংক থিক্কা এক লাক্ষ ২০ হাজার টাকা ঋণ আনছি। সেটাকা দিয়া ১২কানি(বিঘা) বিয়াড় আডাইশ(আটাশ) ধান করছিলাম। কিন্তু আমার সব শেষ হইয়া হেছেগা। অহন কেমনে ছেলেমেয়ে লইয়া বাচুম। সরকার কি আমরারে দেখব?
নাসিরনগর সদর ইউনিয়নের ব্লকের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আসাদের সাথে কথা হলে তিনি জানান, সদর ইউনিয়নের নাসিরপুর,টেকানগন,মন্নরপুর,কামারগাঁয়ের বেশির ভাগ গ্রামের পাকা ধান শিলা বৃষ্টিতে ৯০ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে।
নাসিরনগর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ২ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকালে কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে নাসিরনগর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে প্রায় ৬ হাজার ১ শত পয়ষট্টি হেক্টর জমির পাকা ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বেশি ক্ষতি হয়েছে উপজেলার সদর ইউনিয়ন,গোয়ালনগর,ভলাকুট,চাতলপাড় ও গোকর্ণ ইউনিয়নে।
সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে। এ বছর সেখানে আবাদ করা হয়েছে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর ধান। এর মধ্যে প্রায় ১ হাজার ৮শত হেক্টর জমির বিয়াড় আটাশ পাকা ধানের ৯৯ শতাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। বিয়াড় ২৯ এর প্রায় ২৫শতাংশ নষ্ট হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা কৃষি অফিসের একজন কর্মচারী। কথা হয় গোয়ালনগর ইউনিয়নের কৃষক আবুল কাশেমের সাথে,তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন,আমাদের ইউনিয়নে ধানি ক্ষেতের বেশি ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে পাকা ধানের। আগাম জাতের(বিয়াড় ২৮) পাকা ধান ৯০ শতাংশ জড়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, আমার ১০ বিঘা জমিতে বিয়াড় ২৮ জাতের ধান করেছিলাম। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ফসল করে আমার মতো আজ অনেক কৃষকই অসহায়। একদিকে ফসল নষ্ট অন্যদিকে ঋণ ও সুদের টাকা কিভাবে পরিশোধ করবে সে চিন্তাসহ ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ এসব নিয়ে কৃষক আজ দিশেহারা।
গোয়ালনগর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোঃ আজহারুল বলেন, আমার ইউনিয়নের শত শত কৃষকের পাকা ধানের ক্ষতি হয়েছে। যাদের ক্ষতি হয়েছে তারা দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষ। সরকারের কাছে আমার আবেদন সরকারী ভাবে যেন তাদের এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সাহায্য সহযোগিতা করা হয়।
ভলাকুট ইউনিয়নের কৃষাণী সিমা রাণী সরকার বলেন, গরীবের কপাল সবদিক দিয়া খারাপ। ছেলে-মেয়ে লইয়্যা দুইলা ভাত খামু এই ভাইগ্যও শেষ। দুই কানি(বিঘা) জমি করছিলাম হিডা কালকার পাথ্বরের(শিলা) বৃষ্টি শেষ কইরা দিচে। কথা হয় কৃষক নারায়ন দেব ও জামাল উদ্দিন খানের সাথে। তারা বলেন আমরা বেশি ফলনের লাইগ্যা ২০ কানি(বিঘা) জমিতে বিয়াড় আটাশ করেছিলাম। কারণ বিয়াড় আডাইশ ফলনে ভালা। আগাম জাতের ধান। কিন্তু কালহার (গতকালের) শিলাবৃষ্টিতে আমরার সব শেষ। এই জমির ধান আর কাইটা আনতে যামুনা। কারণ ক্ষেতে আর ধান নাই সব শিলে পালাই দিছে। এহন শুদু বন(ধান গাছ) দাড়াইয়া আচে।
নাসিরনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান বলেন, উপজেলয়া এবছর প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়। গতকালের কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টিতে প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমির পাকা ধানের ব্যাপক ও আংশিক ক্ষতি হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। মাঠ পর্যায়ের প্রকৃত চিত্র জানতে আমরা চেষ্টা করছি।