ভুক্তভোগীর পরিবারকে গ্রাম ছাড়া করার হুমকি!
নাসিরনগরে কিশোরী ধর্ষণ, ঘটনা ধামাচাপা দিতে গ্রাম্য সালিশ!



নিজস্ব প্রতিবেদক:: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ১৫ বছরের এক কিশোরীকে আইকুল (২০) নামে এক বখাটের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ধর্ষণের ঘটনাকে গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীর পরিবার। এদিকে ধর্ষকের পরিবারের লোকজন ওই কিশোরীর পরিবারকে গ্রাম ছাড়া করার হুমকি দিচ্ছে।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে নাসিরনগর থানায় ধর্ষক আইকুলসহ তিনজনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। ধর্ষক আইকুল নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়নের কচুয়া গ্রামের মো. নুরু মিয়ার ছেলে।
মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, বেশ কিছুদিন ধরেই আইকুল কিশোরীকে রাস্তাঘাটে বিরক্ত করতো। এক পর্যায়ে বিরক্তের বিষয়টি সে তার মা-বাবাকে অবহিত করেন। পরে কিশোরীর বাবা এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের জানায়। সামাজিকভাবে বিচার সালিশ করে আইকুলকে সর্তক করা হয়। এর পর থেকেই আইকুল হুমকি দিয়ে আসছিলো।
ঘটনার দিন গত মঙ্গলবার রাতে ওই কিশোরী তার খালার বাড়িতে যাওয়ার পথে আইকুল রাস্তায় দাঁড়িয়ে গতিরোধ করে মুখে চাপ দিয়ে ধরে একটি পরিত্যাক্ত ঘরে নিয়ে যায়। সেখানে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করে তাকে। কিশোরীর চিৎকারে পাশের বাড়ির মুক্তার মিয়া এগিয়ে আসলে ধর্ষক পালিয়ে যায়। পরে ধর্ষকের বাবা নুরু মিয়াসহ গ্রামের কয়েকজন এসে বিষয়টি গ্রাম্য সালিশে নিস্পত্তি করার প্রস্তাব দেয়। পরবর্তীতে কিশোরীর বাবাকে হুমকী দিয়ে তিনশ টাকা মূল্যের খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়। স্বাক্ষর নেওয়ার পর কিশোরীর বাবাকে গ্রাম ছাড়া করারও হুমকী দেয় ধর্ষকের পক্ষের লোকজন। পরে ২০ আগষ্ট রাতে চারজনকে আসামী করে নাসিরনগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
এদিকে ধর্ষকের বাবা নুরু মিয়ার সাথে মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি জানান ‘আমি এখন নামাজে যাচ্ছি পরে ফোন দিয়েন। পরবর্তীতে ফোন করলে ধর্ষকের মা ফোন রিসিভ করে বলেন আমার স্বামী ঘরে নাই। ধর্ষণের ঘটনা জানতে চাইলে তিনি জানান, আমার পোলা (ছেলে) ইতা কিুছতা করছেনা। সব মিছা কথা।’
সালিশকারক রাশিদ মিয়ার সাথে কথা হলে তিনি জানান, সালিশের মধ্যস্থতাকারী সামছু মিয়ার বাড়িতে গত বুধবার ধর্ষণের ঘটনাটি নিস্পত্তির জন্য বসা হয়। তখন আমিসহ এলাকার আট জন বিচারক ছিলো। এসময় ধর্ষক আইকুল তার অপরাধের কথা স্বীকার করে নেয়। তখন ধর্ষকের বাবা উপস্থিত সকল সালিশকারকদের বলেন আপনারা যে সিদ্ধান্ত নিবেন আমি মেনে নিব তবে আমাকে একদিন সময় দিতে হবে। পরের দিন ধর্ষকের বাবা গ্রাম্য সালিশ মানতে অপরাগতা প্রকাশ করলে সালিশ ভেস্তে যায়।
নাসিরনগর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিসুল হক জানান, ধর্ষণের ঘটনায় ৪ জনকে আসামী করে মামলা হয়েছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।