একরামুজ্জামানের পক্ষে নাসিরনগরের বিএনপি-আওয়ামীলীগ
হাওয়া কোনদিকে বইতে পারে সেটি মোটামুটি আন্দাজ হয়ে গেছে এই ক’দিনে নাসিরনগরের মানুষের। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পদে থেকে আলহাজ সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামানের স্বতন্ত্র মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও দাখিল, এরপর বাছাই ২৭শে নভেম্বর থেকে ৩রা ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই এক সপ্তাহের হতবাক দশা দূর হয়ে গেছে। এখন পরিষ্কার বুঝতে পারছেন তারা সবকিছু।
এরইমধ্যে নাসিরনগর আওয়ামী লীগের একটি অংশের নেতারা ঢাকার বোট ক্লাবে একরামুজ্জামানের সঙ্গে বৈঠক করে তাকে সমর্থন জানিয়েছেন। যাদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বি এম ফরহাদ হোসেন সংগ্রামের ওপর নানা কারণে অসন্তুষ্ট। অন্যদিকে নাসিরনগর বিএনপি নেতাদের ২/৪ জন ছাড়া বাকি সবাই একরামুজ্জামানের পক্ষে কাজ শুরু করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় বিএনপি’র দায়িত্বশীল এক নেতা।
গত ৫ই নভেম্বর ঢাকার ওই বৈঠকে নাসিরনগর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় দেড়শ’ নেতাকর্মী-সমর্থক যোগ দেন। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত আলাপ-আলোচনা ও খাওয়া-ধাওয়া হয়। সেখানে যাওয়ার আগে জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতার সঙ্গে দেখা করে একরামুজ্জামানের সঙ্গে বৈঠক করার সম্মতি নেন বৈঠকে ওই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রার্থী কেন্দ্রীয় কৃষক লীগ নেতা নাজির মিয়া।
তার স্ত্রী নাসিরনগর আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি রোমা আক্তার ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন গোয়ালনগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কিরণ মিয়া, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল আহাদ, নাসিরনগর আওয়ামী লীগের সাবেক আইন সম্পাদক এডভোকেট আব্বাস উদ্দিন, কৃষক লীগ নেতা মো. অলি, এস এম নূরুল আলম, ঢাকাস্থ নাসিরনগর কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলী আশরাফ, জেলা প্রত্যাগত প্রবাসী আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শেখ হুমায়ুন কবির, এডভোকেট লিয়াকত, এডভোকেট মহিউদ্দিন মহি প্রমুখ।
ঢাকাস্থ নাসিরনগর কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলী আশরাফ জানান, জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের গ্রিন সিগন্যাল পেয়েই নাসিরনগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একাংশ একরামুজ্জামান সাহেবকে সমর্থন জানিয়েছে। বৈঠকে একরামুজ্জামানকে সমর্থন জানিয়ে জানতে চাওয়া হয় তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করবেন কিনা। তাদের এই প্রশ্নের উত্তরে একরামুজ্জামান বলেছেন-এ সরকারের অধীনে নির্বাচন করাই হলো আওয়ামী লীগকে সমর্থন করা। তিনি দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে আগামীতে পথ চলবেন বলে আশ্বস্ত করেন। দলমত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে ভোটের মাঠে এগিয়ে যাবেন বলেও জানান তিনি।
ওদিকে নাসিরনগর বিএনপি’র পদ-পদবি আছে এমন কিছু নেতা আন্ডার গ্রাউন্ডে থেকে আর বাকি প্রায় সবাই একরামুজ্জামানের জন্য প্রকাশ্যে কাজ শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন সদর ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি সৈয়দ আবু সারোয়ার। উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি আবদুল হান্নান, সাধারণ সম্পাদক বশির উদ্দিন তুহিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান মামুন ও কৃষক দল নেতা আমিরুল চকদার ছাড়া সবাই একরামুজ্জামানের সঙ্গে আছেন এবং তার জন্য কাজ করছেন বলেই জানান সারোয়ার।
বিএনপি চেয়ারপারসনের বহিষ্কৃত উপদেষ্টা আলহাজ সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনে স্বতন্ত্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য গত ৩০শে নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এসময় তিনি বলেন-নাসিরনগর বিএনপি মানেই একরামুজ্জামান। ইনশাআল্লাহ নাসিরনগর বিএনপি আমাকে ছেড়ে যায়নি। নাসিরনগরের জনমানুষের সঙ্গে আছি, সৎ পথে আছি। তিনি জেলায় বিএনপি’র রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে বলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিএনপি’র রাজনীতি কাইন্ড অব স্পয়েল। এটা দীর্ঘদিন ধরে নেগলেকটেড অবস্থায় আছে। দ্বিধাবিভক্ত অবস্থায় আছে। আমরা কোনো সিদ্ধান্ত কারও সঙ্গে শেয়ার করতে পারিনি। এটা আপনারা আরও ভালোভাবে জানেন। এর আগে গত ২৭শে নভেম্বর ওই আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য একরামুজ্জামানের পক্ষে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বকুল মিয়া নামের একজন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। এদিনই পুলিশ বাদী হয়ে করা বিস্ফোরক আইনের একটি মামলায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৩য় আদালত থেকে জামিন পান তিনি। দেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি, আরএকে সিরামিকসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক একরামুজ্জামান ২০০১ সালে ভোট রাজনীতিতে আসেন প্রথম। সে সময় বঙ্গবন্ধু পরিষদের ব্যানারে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নেয়ার চেষ্টা চালান। তাতে ব্যর্থ হলে স্বতন্ত্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ২০০১-এর নির্বাচনে। কুলা প্রতীকে ওই নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা এডভোকেট ছায়েদুল হকের কাছে। ভোট পেয়েছিলেন প্রায় ১৮ হাজার। আর প্রায় ৩৭ হাজার ভোট পেয়ে জয়ী হন ছায়েদুল হক। ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৪ দলীয় জোটের প্রার্থী আহসানুল হক পেয়েছিলেন তখন প্রায় ৩০ হাজার ভোট। ওই নির্বাচনের পর ২০০৪ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিএনপিতে যোগ দেন একরামুজ্জামান। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ নেতা ছায়েদুল হকের প্রতিদ্বন্দ্বী হন বিএনপি প্রার্থী হিসেবে। ছায়েদুল-একরামুজ্জামানের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয় ওই নির্বাচনে। ছায়েদুল পান প্রায় ৯৯ হাজার ভোট আর একরামুজ্জামান প্রায় ৮৫ হাজার। সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হকের মৃত্যুর পর ২০১৮ সালে বর্তমান আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও সংসদ সদস্য বিএম ফরহাদ হোসেন সংগ্রামের সঙ্গে ভোটের লড়াই হয় একরামুজ্জামানের। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও একরামুজ্জামান পান প্রায় ৬০ হাজার ভোট। এক লাখের বেশি ভোট পেয়ে জয়ী হন নৌকার প্রার্থী সংগ্রাম। তবে এবারের চিত্র অন্যরকম।