নাসিরনগরে ব্রিক ফিল্ডে চাঁদাবাজি :: লুট ও অগ্নি সংযোগের মামলায় ১৮ আসামী এখনো গ্রেফতার হয়নি



মোঃ আব্দুল হান্নান, নাসিরনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়াঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে একটি ব্রিক ফিল্ডে চাঁদাবাজি ও অগ্নিসংযোগ করে প্রায় দেড় কোটি টাকার মালামাল লুটের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় ২০ আসামীর মধ্যে মাত্র দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলো মৃণাল কান্তি দাস ও দানু মিয়া। তবে এখনো ধরা ছোয়ার বাহিরে অন্যতম আসামী অহিদ মিয়াসহ বাকি ১৮ জন। জানাযায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পার্শ্ববর্তী সুনামগঞ্জ জেলা সদরের তেঘরিয়ার দেশের পাথর ও কয়লা অন্যতম আমদানীকারক আবু সাঈদ মো. খালিদ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার ভলাকুট ইউনিয়নের মৃণাল কান্তি দাস ও অহিদ মিয়ার কাছে ২০১৩ সালে ব্রিক ফিল্ড চালানোর জন্য কয়লা বিক্রি টাকা বাবদ প্রায় ২৭ লক্ষ টাকা পাওনাদার হন। পুঁজির অভাবে ব্রিক ফিল্ড পরিচালনার অসুবিধার কারণে মৃণাল কান্তি দাস গত ২০১৩ সালের ৩ অক্টোবর ব্যবসায়ী খালিদকে এক তৃতীয়াংশ অংশীদারিত্ব দিয়ে ব্রিক ফিল্ডটি চালু করেন। ব্রিক ফিল্ডটিতে খালিদ পূর্বের পাওনা টাকাসহ প্রায় ৭৪ লক্ষ টাকা ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে বিনিয়োগ করেন। ‘মেসার্স মেঘনা ব্রিক ফিল্ডটি মৃণাল কান্তি দাস তার পূর্বের অংশীদারদের কাছে থেকে ৪৮ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ক্রয় করে ছিলেন। কিন্তু চুক্তি পত্রের শর্ত ভঙ্গ করে অহিদ ও মৃণাল কান্তি দাস প্রথম বছরেই ব্যবসায়ি খালিদের প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে। এ নিয়ে অহিদ মিয়া ও মৃণাল কান্তি দাস সাথে মতবিরোধ দেখা দেয়। গত ২০১৪ সালের নভেম্বরের শেষ দিকে নাসিরনগর উপজেলা পরিষদে বেশ কয়েকবার এই নিয়ে শালিস-বৈঠক হয়। এসব শালিস বৈঠকে খালিদের ৪৮ লক্ষ টাকা পরিশোধ করে লেনদেন সুরাহা করার জন্য বলা হয়। অহিদ মিয়া ও মৃণাল কান্তি দাস টাকা না দিতে পারায় ব্যবসায়ি খালিদ ৪৮ লক্ষ টাকাসহ ৭০ লক্ষ টাকা নগদ প্রদান করে চলতি বছরের পহেলা জানুয়ারী থেকে ব্রিক ফিল্ডটি নিজেই ক্রয় করে দখলে নেন। পরবর্তীতে ব্রিক ফিল্ডে আড়াই কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন তিনি। ব্যবসায়ি খালিদ ব্রিক ফিল্ড চালু করার পর পূর্বের মালিকরা চলতি বছরের গত ১৯ এপ্রিল ব্রিক ফিল্ডের কর্মচারীদের মারধর করে এবং ব্যবসায়ি খালিদ অন্য জেলার লোক হওয়ায় তার লোকজনদেরকে ব্রিক ফিল্ড থেকে উচ্ছেদ করে দেওয়া হয়। এই বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ভাবে কোন প্রতিকার না পাওয়ায় তিনি তার নিজ জেলা সুনামগঞ্জের ব্যবসায়ী সমিতির লোকজনদের বিষয়টি অবহিত করেন। এর প্রেক্ষিতে ছাতক, সুনামগঞ্জ ও জামালগঞ্জ হতে একটি ব্যবসায়িক প্রতিনিধি দল গত ২৮ মে নাসিরনগর আসেন। বিষয়টি নিয়ে নাসিরনগর উপজেলার চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের সাথে বৈঠক করেন। উপজেলা চেয়ারম্যান ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলকে ঘটনাটি নিষ্পত্তির জন্য গত ৭ জুন নাসিরনগরে আসার আহ্বান জানান। নির্ধারিত তারিখে ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল আসার পর উপজেলা চেয়ারম্যান তাদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করলে ব্যবসায়িরা ফিরে যায়। পরবর্তীতে বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী অ্যাডভোকেট ছায়েদুল হক কে জানালে তিনি নাসিরনগর থানার ওসিকে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। মন্ত্রীর নিদের্শের পর গত ১৩ জুন খালিদের স্ত্রীর বড় ভাই সৈয়দ আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে মৃনাল কান্তি দাস, অহিদ মিয়া, দানু মিয়াসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে নাসিরনগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ ব্যাপারে ব্যবসায়ী আবু সাইদ মো. খালিদ বলেন, এ ইট ভাটায় তিনি প্রায় আড়াই কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন তার পুরো ব্রিক ফিল্ডটি নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। মামলার বাদী সৈয়দ আবুল কালাম আজাদ বলেন তার ভগ্নিপতি আত্্রীয় সূত্রে এই এলাকায় ব্যবসা করতে চেয়েছিলেন। আসামীরা তার সকল মালামাল লুট করে ও এমন কি কর্মচারিদের মারধর করে বিদায় করে দিয়েছেন। ব্রিক ফিল্ডের মালিক ও বাদী আরো জানান লুট পাটের সিংহভাগ টাকা উপজেলা চেয়ারম্যান ও স্থানীয় ইউ/িপি চেয়ারম্যান ভাট বন্টন করে নিচ্ছে। তাদের ইঙ্গিতে ব্রিক ফিল্ডে এমন ঘটনা ঘটছে। এর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য নাসিরনগর উপজেলা পরিষদ’র চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান সরকার সাথে মোবাইল ফোনে বার বার যোগাযোগ করার চেষ্ঠা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি। নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের জানান, মামলার অভিযুক্ত আসামি মৃণাল কান্তি ও দানু মিয়াকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকী আসামীদের ধরার অভিযান চলছে।