নাসিরনগরের পোড়াকান্দা চরে সবজির বাম্পার ফলন
প্রতিনিধি :: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার পোড়াকান্দা চরে সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। এই চরে কৃষকরা আবাদ করেছে গোল আলু, মিষ্টি আলু, বেগুন, মিষ্টি কুমড়া, কচু, মুলা, টমেটো, মরিচ, বাদাম, পেঁয়াজ ও রসুনসহ বিভিন্ন ধরনের শাক সবজি। ফাঁকে ফাঁকে করা হয়েছে ধান চাষ। অথচ মাত্র দু’বছর আগেও পুরো চর থাকতো অনাবাদি। তীব্র খরার কারনে সেখানে কোন ধরনের ফসল ফলতোনা। এজন্য স্থানীয়রা এই চরের নাম দেয় পোড়াকান্দা চর।
মাত্র দু’বছরের ব্যবধানে বদলে গেছে চরের চিত্র। সোনাকান্দা চরে এখন সবুজের সমারোহ। নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নের সোনাতোলা গ্রামের একটি চরের নাম পোড়াকান্দা।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের বিশেষ পদ্ধতির সেচ ব্যবস্থা পাল্টে দিয়েছে সোনাতোলার মানুষের জীবনধারা। গত ২০১৩ সালে জানুয়ারি মাসে “পোড়াকান্দা ৫ কিউসেক সেচ স্কীম” নামের একটি প্রকল্প চালু করে বিএডিসি।
লংগন নদী থেকে প্রায় কোয়ার্টার কিলোমিটার দূরে মাটি খুঁড়ে চরে সেচের এই ব্যবস্থা করা হয়। এতে করে পোড়াকান্দা চরের দৃশ্যপট বদলে যায়। চরের কোন জমি এখন আর অনাবাদি থাকেনা।
চরের বাসিন্দা কৃষক আব্দুন নূর বলেন, এই চরে দু’বছর আগেও চাষাবাদ হতো না। কিন্তু এখন সেচ সুবিধা থাকায় বদলে গেছে চরের চিত্র। চাষাবাদের সুযোগ তৈরি হয়েছে গ্রামবাসীর।
তিনি বলেন, এই চরে চাষ করা সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি হচ্ছে সরাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আশুগঞ্জ, কিশোরগঞ্জের ভৈরব, কুলিয়ারচর, অষ্টগ্রাম, ইটনা, মিঠামইনসহ রাজধানী ঢাকায়। সবজি বিক্রি করে সোনাতোলার মানুষের জীবনধারা বদলে গেছে। অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হচ্ছেন জমির মালিক ও কৃষকরা।
কচু চাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, এ বছর চরে কচুর ভালো ফলন হয়েছে। এক কানি (বিঘা) জমিতে তিন হাজার পিস কচুর ফলন হয়েছে। কৃষক হুমায়ূন মিয়া বলেন, বালি মাটিতে বেগুনের উৎপাদন বেশী হয়েছে। এর স্বাদও আলাদা। বেগুন বিক্রি করে আমি লাভবান হয়েছি।
কৃষক সফর আলী বলেন, চরে সবজি বাম্পার ফলন হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকলে আমরা আরো লাভবান হতে পারতাম। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে প্রায় ২০ লাখ টাকার সবজি উৎপাদন হয়েছে এই চরে। আর তা বাজারজাত করা হয়েছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিভিন্ন বাজার, আশপাশ জেলার বিভিন্ন বাজারসহ রাজধানী ঢাকায়।
কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ি, এই গ্রামের ২৭০টি কৃষক পরিবার সবজি চাষ করে পাল্টে দিয়েছে পুরো চরের দৃশ্যপট। সবজি চাষ করে গ্রামের সবাই এখন স্বাবলম্বী। এই চরে ধান ছাড়াও গোল আলু, মিষ্টি আলু, বেগুন, মিষ্টি কুমড়া, কচু, মূলা, টমেটো, মরিচ, বাদাম, পেঁয়াজ ও রসুনসহ বিভিন্ন সবজির চাষ হচ্ছে।
সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে ৪৫ বিঘা জমিতে প্রায় ৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকার গোল আলু, ৩০ বিঘা জমিতে ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকার মিষ্টি আলু, ৩০ বিঘা জমিতে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকার মিষ্টি কুমড়া, ১১০ বিঘা জমিতে সাড়ে ৫ লাখ টাকার বেগুন, টমেটো ও মূলা এবং ১৫ বিঘা জমিতে লক্ষাধিক টাকার মরিচ উৎপাদিত হয়েছে। সবজি উৎপাদন করে কৃষকরা প্রতি বিঘা জমিতে গড়ে ২০/২৫ হাজার টাকা লাভ করেছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন জানায়, চরের প্রায় সাড়ে সাত’শ বিঘা জমিতে সারা বছর আবাদ করা হচ্ছে সবজি। অথচ পানি সেচের সুবিধা না থাকায় দুই বছর আগেও পুরো চর অনাবাদি পড়ে থাকতো। এখন রবিশস্যের আবাদ করে কৃষকরা বদলে দিয়েছেন এই চরের দৃশ্যপট। সবজি বিক্রি করে পাল্টে গেছে সোনাতোলার মানুষের জীবনধারা। বর্তমানে নাসিরনগরের প্রত্যন্ত এই গ্রামটি পরিচিত হচ্ছে ‘সবজির গ্রাম’ হিসেবে।
তিনি বলেন, চরে উৎপাদিত সবজি এলাকার চাহিদা মিটিয়ে কিশোরগঞ্জের কয়েকটি উপজেলাসহ রাজধানী ঢাকায় যাচ্ছে। তিনি বলেন, নৌ-যোগাযোগই তাদের একমাত্র ভরসা। যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো ভালো হলে কৃষকরা বেশি লাভবান হতে পারেতন।