স্বামীর হাতে স্ত্রী খুনের অভিযোগ, লাশ সামনে রেখে মানববন্ধন
মুরাদ মৃধা,নাসিরনগর সংবাদদাতাঃ অষ্টগ্রামে এক গৃহবধুকে তারস্বামী গলাটিপে শ্বাসরোধ করার পর মুখে বিষ ঢেলে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ হত্যার প্রতিবাদে রোববার ১৭ ফেব্রুয়ারি নাসিরনগর উপজেলা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গনে লিপির লাশ সামনে রেখে মানববন্ধন করে এলাকাবাসী। এ সময় মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন নাসিরনগর উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান অঞ্জন কুমার দেব,উপজেলা আ.লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অরুণ জ্যোতি ভট্টাচার্য, ছাত্রলীগের যুগ্ন আহবায়ক শরিফুজ্জামান চৌধুরীসহ এলাকার সকল শ্রেণি পেশার মানুষ। অভিযুক্ত স্বামী মানিক কুমার দেব অষ্টগ্রাম উপজেলা পরিষদের বর্তমান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান। সে কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলার দুর্গামোহন দেবের ছেলে। নিহত লিপি রাণি দেব ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলা সদরের দত্তপাড়ার মৃত তুলসি রঞ্জন দেবের মেয়ে।
শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) চন্দন দেব কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, (শুক্রবার) বিকেলে আমাকে মানিক দেব ফোন করে বলে, আপনার বোন (লিপি) বিষ খাইছে। আমরা চিকিৎসা করাইছি। আপনি আপনার বোনরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিয়া চিকিৎসা করান। আমি স্পীডবোটে লিপিরে পাঠাই দিছি। সাথে সাথে লিপিকে জেলা সদর হাসপাতালে নিলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক লিপিকে মৃত ঘোষণা করেন। লিপির আট বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে।
লিপির ছোট ভাই চপল দেব অভিযোগ করে বলেন, বিয়ের পর থেকেই মানিক দেব লিপিকে মারধর করত। শুক্রবার বিকেলে মানিক পারিবারিক বিষয় নিয়ে ঝগড়াঝাটির এক পর্যায়ে গলা টিপে মুখে বিষ ঢেলে দিয়ে তার বোন লিপিকে হত্যা করেছে। পরে এ ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নিতে মানিক তার চপলের বোন লিপিকে অষ্টগ্রাম থেকে স্পীডবোটে মানিকের দোকানের কর্মচারী ও এক প্রতিবেশির মাধ্যমে নাসিরনগর পাঠিয়েছে। তিনি বলেন, এ ঘটনায় তার বোনের হত্যাকারী মানিকের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করবেন। লিপি দেবের স্বামী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মানিকই এই হত্যাকান্ড ঘটিয়ে এমন কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে বলে মনে করেন লিপির পরিবারের সদস্যরা।
নিহতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জনা গেছে, প্রায় ১২বছর আগে কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলার দুর্গামোহন দেবের ছেলে মানিক কুমার দেবের সঙ্গে পারিবারিকভাবে লিপির বিয়ে হয়। মানিক কুমার দেব বিয়ের পর থেকেই প্রচুর নেশাকরত। নেশা করে রাতের আধাঁরে ঘরে ফিরত। এ নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হত। বিয়ের দুই বছর পর তাদের একটি ছেলে সন্তান হয়। তবে সে কয়েকদিন পর মারা যায়। সেই ছেলেটিও মারা যায় মানিকের নির্যাতনের ফলে। এর দুই বছর পর মগ্ন দেবের জন্ম হয়। বিয়ের পর থেকেই পারিবারিক কলহের জের ধরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথা কাটাকাটি ও ঝগড়া হতো। ঝগড়ার অন্যতম কারণ মানিক দেবের ৫ বোন বিয়ে হওয়া সত্ত্বেও স্বামীর বাড়িতে না থেকে বাবার বাড়িতেই থাকেন। আর এই পাঁচ বোনই লিপি দেবের সাথে নানা বিষয়ে ঝগড়ায় লিপ্ত থাকতো। ১৫ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার বিকেলে বাড়ির রাস্তা নিয়ে লিপি দেবের সাথে মানিক দেবের বোনদের ঝগড়া হয়। এসময় লিপির স্বামী মানিক স্ত্রীর বিরুদ্ধে গিয়ে বোনদের পক্ষ নেয়। এক পর্যায়ে মানিক স্ত্রীকে মারধর করে হত্যা করে।
এঘটনায় মানিক দেবের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রতিনিধিকে জানান, লিপি বিষপানে আত্মহত্যা করেছে। অষ্টগ্রাম হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত ডাক্তার মুখে পাইপ ঢুকিয়ে বিষ বের করেছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য আমার বড় ভাইকে দিয়ে সুস্থ্য লিপিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পাঠিয়েছি। এমনটাই দাবী করেন নিহতের স্বামী মানিক কুমার দেব।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের দায়িত্বে থাকা আবাসিক চিকিৎসক আজহারুল রহমান বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই ওই নারীর মৃত্যু হয়েছে। তবে তার মুখে বিষক্রিয়ার কোনো আলামত দেখা যায়নি। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের পর মৃত্যুর প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে।
ময়না তদন্তের পর লাশ বাড়িতে নিয়ে আসলে শুরু হয় শোকের মাতম। কান্না ভেঙ্গে পড়ে নিহত লিপির পরিবারের লোকেরা।
পাড়া-প্রতিবেশিরা একনজর লিপিকে দেখতে ভীড় করেন তার বাড়িতে। তাদের কান্নায় আকাশ ভারী হয়ে উঠে। রাত নয়টায় লিপিকে পারিবারিক শশ্মানে সমাহিত করা হবে বলে লিপির পরিবারের সদস্যরা জানান।
অষ্টগ্রাম সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সৈয়দ ফারুক আম্মেদ জানান, অষ্টগ্রাম উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মানিক দেবের স্ত্রী গতকাল রাতে মারা গেছে শুনেছি। বিষপানে আত্মহত্যা করেছে নাকি তাকে হত্যা করা হয়েছে সেটা আমি বলতে পারবনা।