করোনাভাইরাস প্রভাব!
নাসিরনগরে শিক্ষার্থীদের বইমুখী করতে প্রশাসনের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ ‘এসো ঘরে বসে লিখি’
নিজস্ব প্রতিবেদক:: নাসিরনগর উপজেলায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখতে ‘এসো ঘরে বসে লিখি’ কার্যক্রমের উদ্যোগ নিয়েছে উপলো প্রশাসন। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ‘এসো ঘরে বসে লিখি’ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে পরীক্ষা নেওয়া ব্যবস্থা করছে প্রশাসন। পরীক্ষার নেওয়ার জন্য প্রশ্নপত্র তৈরির নির্দেশ দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমা আশরাফী।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনে উপজেলার শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করে উপজেলা প্রশাসন। সভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমা আশরাফী, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম ও উপজেলার ২৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। সভায় ইউএনও নাজমা আশরাফী শিক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং ‘এসো ঘরে বসে লিখি’ উদ্যোগটি নিয়ে আলোচনা করেন।
সভায় জানানো হয়, করোনাভাইরাসের কারণের সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ টেলিভিশনে পাঠদান কার্যক্রমের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এছাড়া অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের শিক্ষার্থীদের জন্য ডিজিটাল কন্টেন্ট সমৃদ্ধ ক্লাশ নেওয়া উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু প্রত্যন্ত অঞ্চল হওয়ায় নাসিরনগেরর শিক্ষার্থীরা এ মাধ্যমটি থেকে বঞ্চিত রয়েছে। একই সঙ্গে স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় এখানকার শিক্ষার্থীরা শিক্ষাবিমুখ হয়ে পড়ছে।
শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় সম্পৃক্ত রাখতে অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিটি বিষয়ের ওপর পাঁচটি প্রশ্ন করে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রশ্নপত্র প্রণয়ণের মাধ্যমে পরীক্ষা নিতেই ‘এসো ঘরে বসে লিখি’ কার্যক্রমের উদ্যোগ নেন ইউএনও।
সভায় শিক্ষকদের স্বেচ্চায় এই উদ্যোগে অংশ গ্রহনের জন্য প্রস্তাব দেন ইউএনও। আগামী ১০ মে এর মধ্যে শিক্ষকদের প্রশ্নপত্র তৈরি করে জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এসব প্রশ্ন শিক্ষকরা ইমেইল ও অভিভাবকদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠাবেন। শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে নিজেরা ওই প্রশ্নের আলোকে পরীক্ষা দেবেন। প্রশ্নপত্র দেওয়ার ১৪দিন পর অভিভাবকদের মাধ্যমে উত্তরপত্র সংগ্রহ করে শিক্ষকরা তা মূল্যায়ন করবেন। সভায় এমপিও ভূক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে উত্তরপত্র সরবরাহের নির্দেশ দেন ইউএনও। আর উপজেলার ননএমপিওভূক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্র ইউএনও নাজমা আশরাফী নিজ খরচে সরবরাহ করবেন বলে শিক্ষকদের জানান।
নাসিরনগর আশুতোষ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষখ আব্দুর রহিম বলেন, এটি অত্যন্ত কার্যকরী একটি উদ্যোগ। উপজেলার সকল শিক্ষকরা যদি আন্তরিক হয় তাহলে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগটি সফল হবে। আর পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থী অনেক বেশি উপকৃত হবে। তিনি উপজেলার সকল শিক্ষকদের এই কাজে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সহযোগিতা করার জন্য এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান।
মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার হারের দিক থেকে এমনিতেই নাসিরনগর পিছিয়ে আছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে ইউএনও এই উদ্যোগ নিয়েছেন। সভায় উপজেলার ২৫জন প্রধান শিক্ষক অংশ নেন। তিনি বলেন, উপজেলায় একটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৬টি এমপিওভূক্ত ও দুটি ননএমপিওভূক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এছাড়া পাঁচটি দাখিল ও একটি কামিল মাদ্রাসা রয়েছে। উপজেলা দুটি ডিগ্রি কলেজ ও সংযুক্তিতে আরো দুটি কলেজ রয়েছে।
ইউএনও নাজমা আশরাফী বলেন, ‘এসো ঘরে বসে লিখি’ উদ্যোগটি শিক্ষকদের জন্য স্বেচ্ছাসেবকের একটি কাজ হবে। কোনো শিক্ষককে চাপ প্রয়োগ করা হবে না। শিক্ষকরা স্বেচ্চায় নিরাপত্তা বজায় রেখে কাজটি করতে অনুরোধ করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের বইমুখী করা। পড়ায় সম্পৃক্ত করা। নাসিরনগর হাওড়বেষ্টিত উপজেলা। অল্প বয়সেই মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার একটা প্রবণতা এখানে রয়েছে। সিলেবাস অনুযায়ী পাঁচটি বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন করে সেটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রশ্নপত্র তৈরি করা হবে।