Main Menu

নাসিরনগরে চলছে মাস ব্যপী ঐতিহ্যবাহী কার্তিক মেলা

+100%-

এম.ডি.মুরাদ মৃধা, নাসিরনগর প্রতিনিধি: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে চলছে ঐতিহ্যবাহী কার্ত্তিক মেলা। মাসব্যাপী এ মেলায় শিশুদের খেলনা সামগ্রী প্রসাধনী, মৃৎপাত্র, এলোমেনিয়াম ও লোহার তৈজসপত্র, জুতা-পোশাক, খাবার ও কাঠের ফার্নিচারসহ নানাবিধ পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছে দোকানীরা। শিশুদের বিনোদনের জন্য আছে নাগরদোলা ও উড়োজাহাজ চড়ার সুযোগ।

রাস পূর্ণিমাতিথিতে ভলাকুট বাজারের চন্ডীতলায় আয়োজিত পূজা উপলক্ষে প্রায় দুইশত বছর ধরে এ মেলা হয়ে আসছে। নাসিরনগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাামসহ আশেপাশের সরাইল, অষ্টগ্রাাম (কিশোরগঞ্জ), লাখাই (হবিগঞ্জ) ও মাধবপুর (হবিগঞ্জ) উপজেলার গ্রাম থেকে এই মেলায় কেনাকাটা করতে লোকজন আসে। বিশেষত কাঠের আসবাবপত্র কিনতে অনেক দূরের এলাকা থেকেও লোকজন আসে। নদীপথে পরিবহণ সুবিধা থাকায় ক্রেতারা এখান থেকে কেনাকাটায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। অবশ্য ব্যবসায়ীরা অনান্য জেলা থেকেও আসে। কাঠের আসবাবপত্র নিয়ে আসা দোকানগুলোর বেশিরভাগই নরসিংদীর।

কার্ত্তিক মেলাকে কেন্দ্র করে ভলাকুট ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে এখন চলছে হিন্দু-মুসুলমান মিলন মেলা। এবং আশপাশ গ্রামরে মেয়েদের বাবার বাড়িতে নাইওরী আসার ধুম পড়েছে। এ বছর অনেক নারী স্বামী-সন্তানসহ নাইওর এসেছে। যা শতবছরের ঐতিহ্যকে লালন করে।

রোখসানা নামের এক নারী জানান, তিনি ছোটবেলা থেকেই কার্ত্তিক মেলায় এসে অভ্যস্থ তিনি। হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলায় তার বিয়ে হয়েছে। বিয়ের পরও প্রতি বছর মেলার সময়টায় বাবার বাড়ি বেড়াতে আসার চেষ্টা করেন তিনি। শেফালি রানী দাস ও প্রতিভা রানী সরকার নামের দুই নারী জানান, তাদের স্বামীর বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই ও শাল্লা। কার্ত্তিক মেলা উপলক্ষে বাবার বাড়ি নাইওর এসেছেন।

শনিবার মেলায় ঘুরে দেখা গেছে, প্রচুর ক্রেতা-দর্শক মেলায় এসেছে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও নারীসহ নানা বয়সী মানুষের উপস্থিতিতে বিশাল মেলা প্রাঙ্গণ মুখর হয়ে আছে। মৃৎপাত্র ও প্রসাধনীর দোকানগুলোতে নারীদের উপছেপড়া ভীর দেখা গেছে। নাগরদোলায় চড়তে শিশু-কিশোরদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রক দেখা গেছে। খাদ্যপণ, বিশেষত মুড়ি-মুড়কি ও মিষ্টান্নর দোকানগুলোতে নানা বয়সী মানুষ দেখা গেছে।বিক্রেতারা জানালেন গড়পড়তায় রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত মেলায় বেচাকেনা চলে।

এদিকে ধীরে ধীরে মেলায় রকমারী পণ্যের বেচাকেনা কমে আসলেও কাঠের আসবাব নিয়ে নতুন নতুন দোকানীরা আসছে। মেলা কমিটির একজন সদস্য জানালেন, এই মেলার বৈশিষ্ট্যই এমন যে, প্রথম দশ-বারো দিন রকমারি পণ্যের ধুম বেচাকেনা হয়। এরপর এসব পণ্যের দোকান উঠে গেলেও কাঠের আসবাবপত্র বেচাকেনা চলে আরো দুই-তিন সপ্তাহ।

ভলাকুট কে. বি. উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক কাজী আতাউর রহমান জানান, মেলা আয়োজনের শুরুর সময় কেউ বলতে না পারলেও অন্তত দুইশত বছর ধরে এখানে মেলার আয়োজন হয়ে আসছে বলে বয়োজ্যেষ্ঠরা বলে থাকেন। তারা অন্তত চার পুরুষ ধরে এখানে মেলা আয়োজনের কথা জানিয়েছেন।
ভলাকুট বাজার কমিটির সভাপতি কার্ত্তিক চন্দ্র দাস বলেন, শুরুর দিকে চন্ডীতলার পূজা উপলক্ষে এখানে ছোটখাট মেলা বসত। ধীরে ধীরে মেলার পরিসর ও সময় বাড়তে থাকে। পুরনো বিশাল আকৃতির চন্ডী গাছটি (অশ্বত্থ গাছ) মারা গেলে পঞ্চাশ-ষাট বছর আগে বর্তমান চন্ডী গাছটি লাগানো হয়। একই সাথে শুরুকরা হয় রাসপূজা। তিনি আরও জানান, মূলত রাসপূজাকে কেন্দ্র করেই মেলার পরিসর বাড়ে। কারণ আগের চন্ডী পূজা হত চৈত্র মাসে। তখন মানুষের কর্মব্যস্ততা ও অভাব-অনটনের কারণে মেলা জমজমাট হতো না। এখন রাসপূজা হয় কার্ত্তিক মাসে। চৈত্র মাসের তুলনায় তখন কর্মব্যস্ততা ও অভাব-অনটন কম থাকে।

মেলায় মুড়ি-মুড়কির দোকান নিয়ে বসেছেন লক্ষণ রায় নামের এক তরুণ বিক্রেতা। তিনি জানান, এবারসহ বারো বছর ধরে এই মেলায় দোকান দিয়েছেন। অসুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রায় তিরিশ-পঁয়ত্রিশ বছর এই মেলায় দোকান করেছেন তার বাবা। তার দাদাও অনেক বছর দোকান করেছেন ভলাকুটের কার্ত্তিক মেলায়।

ভৈরব থেকে আসা কসমেটিক্স দোকানী মো. বাদল মিয়া জানালেন, তিনি প্রায় বত্রিশ বছর ধরে এ মেলায় দোকান নিয়ে বসছেন। প্রতিবারই ভাল লাভ করেন। তবে এ বছর বেচাকেনা তুলনামূলক কম জানিয়ে গেল মৌসুমে হাওরের ফসলহানীর ফলে এই এলাকার অর্থনৈতিক মন্দাকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।
মেলা কমিটির সভাপতি মো. জালাল মিয়া জানান, মেলার নিরাপত্তায় আয়োজক কমিটির নিজস্ব কর্মীরা কাজ করছে। বিশেষ প্রয়োজনে থানা পুলিশ টহল দিচ্ছে। এ বছর বেচাকেনায় কিছুটা মন্দাভাবের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, শেষদিকে কাঠের আসবাবপত্র বেচাকেনা অনেক বেড়ে যাবে বলে আমরা প্রত্যশা করছি।

মেলার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মোঃ আবু জাফর বলেন, মাস্যব্যপী কার্তিক মেলাকে নিয়ে আমাদের পুলিশ সার্বক্ষণিক কাজ করছে। মেলাকে কেন্দ্র করে যাতে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে আমরা সজাগ দৃষ্টি রাখছি। এবং সন্ধ্যার পর জোয়ার আসর,অসামাজিক কাজ যেন না হয় সেদিকে আমাদের বিশেষ নজরদারী আছে।






Shares