নাসিরনগরে চলছে অবাধে শামুক-ঝিনুক নিধন, হুমকীর মুখে পরিবেশ!!!
মো: আব্দুল হান্নান:: ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার হাওয়র অঞ্চলের কয়েকটি গুরত্বপূর্ন স্থানে অবাধে চলছে শামুক-ঝিনুক নিধন । ওই স্থানগুলোর থেকে প্রতিদিন প্রায় শতাধিক দরিদ্র পরিবার শামুক-ঝিনুক কুড়িয়ে খামারী ও পাইকারদের কাছে বিক্রি করে। সরেজমিন অনুসন্ধানে মেদির হাওয়রে গিয়ে হাসঁ খামারী নূরপুর গ্রামের মো: আব্দুল আজিজের সাথে কথা বলে জানা যায় শুধু ডাকবাংলোর উত্তর দিকে মেদি হাওয়রে ৫০টির মত হাসেরঁ খামার রয়েছে। তিনি জানান প্রতিটি খামারে প্রতিদিন গড়ে ৮ বস্তা শামুক লাগে। তার হিসাব মতে ৫০ টি খামারে প্রতিদিন ৪০০ বস্তা শামুকের প্রয়োজন। তার দেওয়া তথ্য মতে খামার মালীকদের ছাড়াও প্রতিদিন ২/৩ ট্রাক শামুক ভৈরব ও আশুগঞ্জে চালান দেওয়া হয়। মাছ ধরার গৈরা জাল দিয়ে শামুক-ঝিনুক ধরা হয়। যার ফলে নাসিরনগর লঙ্গণ নদীর অধিকাংশ জায়গা ভাঙ্গনের মূখে পড়েছে এবং পরিত্যক্ত শামুক থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে বিভিন্ন রোগ জীবানু ছড়াচ্ছে। যা পাশর্^বর্তী আশুতোষ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ক্ষতিকর।
নাসিরনগর ডিগ্রি কলেজের গনিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ জিয়া উদ্দিন জিয়া জানান, বিভিন্ন খাল-বিল, জলাশয় থেকে নির্বিচারে পরিবেশবান্ধব শামুক-ঝিনুক নিধন করার ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি জমির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে। তিনি আরো বলেন শামুক-ঝিনুক হচ্ছে প্রাকৃতিক ফিল্টার। শামুক-ঝিনুক পরিবেশের বিশেষ বন্ধু হিসেবে পরিগনিত। শামুক-ঝিনুক মরে গিয়ে তার মাংস ও খোলাস পচে জমির মাটিতে প্রাকৃতিকভাবে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও পটাশ তৈরী করে। ফলে জমির উর্বরতা বৃৃদ্ধিসহ ধানগাছের শিকড় মজবুত ও ফসল অধিক হতে সাহায্য করে। অন্যদিকে জীবিত শামুক-ঝিনুক বর্ষা মৌসুমে আমণ ধানের ব্যাপক উপকারে আসে। শামুক দূষিত পানি ফিল্টারিং করে প্রকৃতিকভাবে পানি দূষণমুক্ত রাখে।
ধানের জমিতে শামুকের ডিম খেয়ে ইদুর তার পেটপূর্তি করায় ধান নষ্ট করা থেকে বিরত থাকে প্রাকৃতিক ও দেশীয় মাছের প্রধান খাদ্য হচ্ছে শামুকের ডিম ও মাংস। বিশেষ করে কৈ, শিং, মাগুর, ট্যাংরা, টাঁকি, শৌল মাছের ডিম থেকে সদ্যজাত পোনার একমাত্র খাদ্য হচ্ছে শামুকের নরম ডিম। আর এ খাবার না পেলে ঐ পোনা মারা যায়। ফলে শামুকের অভাবে দেশীয় মাছের বংশ বিস্তার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন দেশীয় মাছসহ নানা প্রজাতির জলজ প্রাণী। অন্যদিকে ম্যাচোফেলিয়া ও মাইক্রোফেলিয়া নামে দু’ধরনের কীট শামুক থেকে খাবার সংগ্রহ করে বেঁচে থাকে। ঐ দুইটি কীট ধান গাছের ক্ষতিকর পোঁকা-মাকড় খেয়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে কৃষি খেতের ব্যাপক উপকার করে থাকে। অপরদিকে শামুক নিঃসৃত পানির রয়েছে নানা ঔষধি গুণ। প্রচলিত রয়েছে ঠান্ডা পাত্রে রক্ষিত শামুক নিঃসৃত পানি যে কোন ধরনের চোখের রোগের জন্য খুবই উপকারী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শামুক-ঝিনুক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমরা আড়তদারের কাজ করি। বস্তাপ্রতি ১২০-১৫০ টাকা দেওয়া হয়। শামুকের তৈরি চুন, চিংড়ি মুরগির খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অনেকে আমাদের কাছ থেকে শামুক কুড়ানোর জন্য দাদন (আগাম টাকা) নেয়।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এ প্রতিনিধিকে জানান উক্ত বিষয়টি আমি অবগত নয় । তবে এ ব্যপারে আমি দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।