অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে
নারিসনগরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে হিন্দুদের সঙ্গে মুসলমানদের রাত জেগে পাহারা
এম.ডি.মুরাদ মৃধা,নাসিরনগর সংবাদদাতা:: নাসিরনগরে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি ঘটনার পর ঘুরে দাড়িয়েছে হিন্দু পল্লী। আতংক কাটতে শুরু করছে সাধারণ মানুষের। তবে ঘটনার পর থেকেই পরিস্থিতি শান্ত করতে তৎপর হয় শান্তি প্রিয় এলাকাবাসী। এলাকায় শান্তি ফেরাতে প্রশাসন ও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে নেয়া হচ্ছে রাতে নিরাপত্তার উদ্যোগ। এলাকাবাসী অঙ্গীকার, যে কোনো মূল্যে সম্প্রীতি নিশ্চিত রাখতে হবে। ধর্মীয় উন্মাদনা প্রতিহত করা হবে।
চোর, ডাকাত বা পুলিশের ভয়ে নয়। গ্রামবাসী দল বেঁধে লাঠি, বাঁশি ও টর্চ লাইট হাতে রাত জেগে মন্দির ও হিন্দুসম্পদ্রায়ের বাড়িঘর পাহারা দেন সম্প্রীতি নিশ্চিত রাখতে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে রাত জাগার এই ঘটনাটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার সদরের বিভিন্ন গ্রাম ও পাড়া মহল্লার। সঙ্গে প্রতিদিন রাতভর পুলিশ ও বিজিরি সদ্যরাও টহল দিচ্ছেন। এটি এখন নাসিরনগরের প্রতিদিনের রাতের চিত্র
স্থানীয়রা জানান, গত ২৯ অক্টোবর নাসিরনগর হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামে রসরাজ দাস (২৮) নামের এক যুবকের ফেসবুক থেকে ধর্মীয় অবমাননাকর একটি পোস্ট দেওয়া হয়। পরদিন রসরাজকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই ঘটনায় গত ৩০ অক্টোবর সকালে তৌহিদী জনতা ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের ব্যানারে সমাবেশ করে। সমাবেশ চলার সময় নাসিরনগরে উপজেলা সদরের প্রায় ১৫টি মন্দির ও ৬০-৭০টি হিন্দু বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এঘটনার পাঁচদিন পর বিপুল পরিমান আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকা সত্বেও ৬, ১৩ ও ১৬ নভেম্বর হিন্দু বাড়ির পরিত্যক্ত গোয়াল ও রান্নাঘরে কয়েক দফায় রহস্যজনক আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় পাহাড়াদার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা সদরের বনিকপাড়া আট জন করে ১২টি দল, পূর্বপাড়ায় আট জনের আটটি দল, দত্তপাড়া দশ জনের সাতটি দল, মহাকাল পাড়া সন্ধ্যায় ছয়টা থেকে রাত ১২টা এবং ১২টা থেকে ভোর সকাল ছয়টা পর্যন্ত দুই শিফটে ছয়জন করে ১২টি দল, কাশিপাড়ায় ১২জন করে ছয়টি, ঋষিপাড়ায় গৌর মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক নির্মল চৌধুরীর নেতৃত্বে ১০ সদস্যের আটটি দল, পশ্চিমপাড়া আটজনের ১০টি দল, ঘোষপাড়া ১২জনের আটটি দল, গাঙ্গলপাড় সাত সদস্যের ১১টি দল, আনন্দপুর ১০ সদস্যে ছয়টি ১০ দল পাহাড়া দিচ্ছে।
গত শুক্রবার রাত এগারটার দিকে দেখা যায় দত্তপাড়া মন্দিরের বাইরে পুলিশ সদস্যরা বসে আছে। এর পাশেই সুখ অফিসের সামনে বিজিপির একটি টহল দল।এদিকে গৌর মন্দিরের ভেতরে ঢুকতেই আর্ম পুলিশের একটি তাবু চোখে পড়ে।
আর্ম পুলিশ সূত্র জানায়, তিনজন সদস্য বিকেল চারটা থেকে রাত একটা পর্যন্ত পাহাড়ার দায়িত্ব আছে। পরে অন্যদল আসবে। তারা জানান, সার্বিক পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক আছে।
শুক্রবার রাতে দত্তপাড়ায় আটজন পাহাড়ায় ছিলেন। এর মধ্যে সাতজন মুসলমান। দলের নেতৃত্ব দেওয়া মোঃ দুলাল বলেন, রাত ১২টার পর হতে ভোর পাচঁটা পর্যন্ত আমরা দুটি দলে ভাগ হয়ে পাহাড়া দেই। তারা আরো জানান এলাকায় অপরিচিত লোক দেখলে তাদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করি।
বনিকপাড়ায় পাহাড়া দেয়া সাংবাদিক আক্তার হোসেন ভূইয়া বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ও জনস্বার্থে একদিন আমরা কষ্ট করতে রাজি আছি। তবে আমাদের হিন্দু মুসলমানের মধ্যে কোন ভেদাভেদ নেই। আমরা ১২দিন পরপর প্রত্যেকেই পাহাড়া দেই।
দাসপাড়ায় গিয়ে দেখা যায় ছয়জনের একটি দল পাহাড়া দিচ্ছে। পালাক্রামে এখানে দল বেঁধে সন্ধ্যা ছয়টা থেকে ভোর ছয়টা পর্যন্ত পাহাড়া দেয়া হয়।
দাসপাড়ার জয়নগর এলাকায় ছয়জনের একটি দল ও পশ্চিমপাড়ার চেংগাপুর মহল্লায় আটজনের একটি দলকে পাহাড়া দিতে দেখা গেছে। তারা বলেন মহল্লার বিভিন্ন দিকে দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ঘুরাফেরা করেন। বাঁশি বাজিয়ে সতর্কবানী দেওয়া হয়।
এ ব্যপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ ইকবাল হোসাইন বলেন, আইনশৃঙখলা বাহিনীর পাশাপাশি স্থানীয় জনগন স্ব উদ্যোগী হয়ে এগিয়ে এসেছে। কিছু মহল্লায় প্রতিদিন সন্ধ্যা ছয়টা থেকে ভোররাত পাঁচটা পর্যন্ত আবার কোথাও রাত এগারটা হতে থেকে পাঁচটা পর্যন্ত এলাকাবাসী পাহাড়া দেয়।